লা লিগায় মৌসুমের শেষ ভাগে এসে বার্সেলোনার জন্য প্রতিটা ম্যাচই এখন বাঁচা-মরার। এখন শীর্ষে থাকলেও দুইয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে তাদের পয়েন্টের ব্যবধান মাত্র ৪। পয়েন্ট হারালেই লাগাম ছুটে যাবে হাত থেকে। এমন পরিস্থিতিতে আজ ঘরের মাঠেই সেল্তা ভিগোর বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক জয় পেয়েছে বার্সা।

এই ম্যাচে একপর্যায়ে ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় কাঁপছিল কাতালান ক্লাবটি। কিন্তু ৬ মিনিটের মধ্যে ২ গোল করে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরে হান্সি ফ্লিকের দল। এরপর যোগ করা সময়ে পেনাল্টি গোলে পাশার দান বদলে দেন রাফিনিয়া। ৩-১ গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচটি বার্সা জেতে ৪-৩ গোলে। আর এই জয়ে শিরোপা রেসের লাগমটা নিজেদের হাতেই রাখল বার্সা।

দুর্দান্ত এই জয়ের পর ৩২ ম্যাচে বার্সার পয়েন্ট ৭৩। এক ম্যাচ কম খেলা রিয়ালের পয়েন্ট ৬৬। আগামীকাল রাতে রিয়ালের প্রতিপক্ষ অ্যাথলেটিক বিলবাও। এই ম্যাচে জিতলে রিয়ালের পয়েন্ট হবে ৬৯। অর্থাৎ বার্সার সঙ্গে রিয়ালের ব্যবধানটা সেই চারেই থাকবে।

২০২৫ সালে প্রথমবারের মতো লামিনে ইয়ামালকে মাঠে বাইরে রেখে আজ মাঠে নেমেছিল বার্সেলোনা। ইয়ামালকে ছাড়াও অবশ্য বেশ আগ্রাসী ফুটবল খেলেছে বার্সা। বিপরীতে ছাড় দেয়নি সেল্তা ভিগোও। বার্সার আক্রমণের জবাব প্রতি-আক্রমণে দারুণভাবে দিয়েছে তারা। তবে ম্যাচের প্রথম গোলটা পেয়েছে বার্সাই।

ম্যাচের ১২ মিনিটে ইনিয়েগো মার্তিনেজের কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন ফেরান তোরেস। এই লিড অবশ্য ৩ মিনিট পরেই হারিয়ে ফেলে বার্সা। প্রতি আক্রমণে সতীর্থ পাবলো দুরানের কাছ থেকে বল পেয়ে গোল করেন ইগলেসিয়াস। ম্যাচে সমতা আসার পর দুই দলই এগিয়ে যাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠে।

তবে ৪৩ মিনিটে ‘ডাবল সেইভ’ করে বার্সাকে পিছিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচান গোলরক্ষক ভয়েচেক সেজনি। এতটা কাছাকাছি না গেলেও কিছু সুযোগ বার্সাও পেয়েছিল। কিন্তু সেসব সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি দলটি।

বিরতির পরও ৫০ মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিল সেল্তা। কিন্তু দুরিনের দারুণভাবে গড়া আক্রমণটি অল্পের গোলে রূপান্তরিত হয়নি। সে যাত্রায় না পারলেও গোলটা কিন্তু ঠিকই আদায় করে দেয় সেল্তা। ইয়োয়েল লাগোর লং বল ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং মিস করলে পেয়ে যান ইগলেসিয়াস। দারুণভাবে সেই বল নিয়ে বক্সে ঢুকে অসাধারণ ফিনিশিংয়ে গোল করেন এই সেল্তা স্ট্রাইকার।

৫৯ মিনিটে কাছাকাছি গিয়ে ব্যবধান বাড়াতে পারেনি সেল্তা। কিন্তু ৬২ মিনিটে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করে বার্সাকে বছরের প্রথম হার উপহার দেওয়ার মঞ্চটা তৈরি করে ফেলেন ইগলেসিয়াস। তবে ৬৪ মিনিটে দানি অলমো এক গোল শোধ করে বার্সাকে স্বপ্ন দেখান ম্যাচে ফেরার।

এর মধ্যে ৫৯ মিনিটে লামিনে ইয়ামাল মাঠে নামায় বার্সার খেলাতেও নতুনভাবে গতির সঞ্চার হয়। ৬৮ মিনিটে সেই ইয়ামালের সহায়তাতেই গোল করেন রাফিনিয়া। ৩-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার ৬ মিনিটের মধ্যে ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আসে শীর্ষে থাকা বার্সা।  

সমতা ফেরানোর পর বার্সার খেলায় ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। লিডের জন্য একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে তারা। অন্য দিকে সেল্তার লক্ষ্য ছিল প্রতি-আক্রমণ থেকে আরেকটি গোল আদায়ের। তব শেষ হাসিটা বার্সাই হেসেছে। যোগ করা সময়ে দানি অলমো বক্সের ভেতর ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় বার্সা। রাফিনিয়া নিজের দ্বিতীয় গোল করে নিশ্চিত করে বার্সার জয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবধ ন গ ল কর

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফটো সাংবাদিকের জন্য গাজার শোক

২৫ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি ফটো সাংবাদিক ফাতিমা হাসসুনার জন্য ফটোগ্রাফি ছিল পেশার চেয়েও বেশি কিছু। এটি ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাস্তবতা তুলে ধরার এক অভিযান। গত ১৮ মাসে যুদ্ধের নামে ইসরায়েলি গণহত্যার কারণে ক্যামেরা হাতে ফাতিমা গাজার অলিগলিতে ঘুরতেন। ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনে মানবিক ক্ষয়ক্ষতি সংরক্ষণ করতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িঘর, শোকাহত পরিবার এবং ধ্বংসের মধ্যে শিশুর চোখে আশার আলো খুঁজে বেরিয়েছে তাঁর ক্যামেরা। ফাতিমার তোলা হাজার হাজার ছবি সারাবিশ্বে গাজায় জীবন ও মৃত্যুর এক অম্লান জানালা খুলে দিয়েছিল। তাঁর লেন্স দেখিয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ ও মর্যাদা, বেদনা ও অদম্যতা, মৃত্যু আর সেই ছোট্ট আনন্দের সময়, যা বেঁচে থাকার সাহস জোগায়। তাঁর তোলা ছবিগুলো শুধু ইমেজ নয়, সেগুলো ছিল গাজাবাসীর অবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম ও মানবিকতার গল্প। তিনি বিশ্বাস করতেন, ক্যামেরাই তাঁর শক্তিশালী অস্ত্র; যা ইতিহাসকে রক্ষা করবে, যখন গাজার বাস্তবতা বিশ্বের চোখ থেকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে। ফাতিমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু আসমা আবু সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ আরবকে বলেন, ‘ফাতিমা যাদের ছবি তুলত, তাদের সঙ্গে গভীর আবেগে যুক্ত হতো। সে নারীদের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলত যেন তারা তার মা। প্রতিটি শিশুকে দেখত নিজের সন্তানের মতো। তার সহমর্মিতা কৃত্রিম ছিল না– এটি ছিল একদম নিখাদ।’
যুদ্ধের মধ্যেও ফাতিমা স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর প্রেমিক আজিজের সঙ্গে বিয়ের পরিকল্পনা করছিলেন। ফাতিমার বন্ধুরা জানান, তিনি প্রেমকে যুদ্ধের দুঃখ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে দেখতেন। ফাতিমার বাগদত্তা আজিজ তাঁর কাজে উৎসাহ দিতেন। তারা পরের সপ্তাহে বিয়ে করার পরিকল্পনা করছিলেন। আজিজ এখন মর্মাহত। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না ফাতিমা চলে গেছেন।
২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল ভোরে ইসরায়েলের একটি বিমান হামলায় ফাতিমার বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। এ হামলায় তিনি এবং তাঁর পাঁচ ভাইবোন নিহত হন। তাঁর বাবা-মা গুরুতর আহত হলেও বেঁচে গেছেন। তাঁর বাবা এখনও অজ্ঞান, তিনি জানেন না যে সন্তানরা মারা গেছেন। ফাতিমার মা শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ফাতিমার ১৮ বছর বয়সী ভাই জিহাদ মিসরে থাকেন। তিনি জানান, হামলার কিছুক্ষণ আগে তিনি ফাতিমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। জিহাদ বলেন, ‘আমরা খুশি ছিলাম, কারণ আমার অসুস্থ ভাই মুজাহিদ সুস্থ হয়ে উঠছিল, আর ফাতিমা (যার ডাকনাম ফাতুম) তার আসন্ন বিয়ের জন্য উপহার আর জিনিসপত্রের লিস্ট করছিল।’
ফোন রাখার দুই ঘণ্টা পর জিহাদ দেখলেন গাজা সিটির আল-তুফফাহ এলাকায় বিমান হামলার খবর। তিনি পরিবারের সদস্যদের ফোন করতে গিয়ে দেখলেন, কোনো ফোনই আর পাচ্ছেন না। পরে তাঁর চাচা জানান, পাঁচতলা ভবনটি ধ্বংস হয়ে গেছে। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছিল তাদের পরিবার। জিহাদের ছয় ভাইবোন মারা গেছেন এবং অন্যান্য আত্মীয়-প্রতিবেশী গুরুতর আহত।
জিহাদ জানান, ফাতিমা তাঁর মৃত্যু আগেই আঁচ করেছিলেন। দুই সপ্তাহ আগে আল-আরকাম স্কুলে হামলা হওয়ার পর ফোনে কাঁদতে কাঁদতে জিহাদকে বলছিলেন, ‘তুমি তোমার আর ভাইয়ের যত্ন নিও। আমার মনে হচ্ছে, গাজায় আমাদের সবাই মারা যাব। কারণ চারদিকে শুধু বোমাবর্ষণ আর ধ্বংসযজ্ঞ।’
ফাতিমা হাসসুনা শুধু একজন ফটো সাংবাদিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন গাজার অদম্য কণ্ঠস্বর, যার কাজ বিশ্বকে দেখিয়েছিল ফিলিস্তিনিদের দুঃখ, সংগ্রাম ও অপরাজিত মানসিকতা। তাঁর এক সহকর্মী বলেন, ফাতিমা চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর তোলা ছবিগুলো চিরকাল গাজার ইতিহাস, বেদনা ও জয়ের সাক্ষী হয়ে থাকবে।
ফাতিমা হাসসুনার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা। 
তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই ও নিউ আরব

সম্পর্কিত নিবন্ধ