বাংলাদেশ ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তা
Published: 19th, April 2025 GMT
বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে মার্কিন নাগরিকদের জন্য তৃতীয় ধাপের (পুনর্বিবেচনা) সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা ভ্রমণে চতুর্থ ধাপের সতর্কতা (ভ্রমণ নিষিদ্ধ) ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ভ্রমণ নির্দেশিকাটি হালনাগাদ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে হুটহাট বিক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। এগুলোতে যেকোনও মুহূর্তে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে উঠতে পারে। তাই মার্কিন নাগরিকদের সব ধরনের সমাবেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নাগরিকদের জন্য তৃতীয় মাত্রার সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন সরকার। কোনও দেশে ভ্রমণের আগে পরিস্থিতি বুঝে পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দিতে এই সতর্কতা জারি করা হয়। মূলত, এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে। ভ্রমণ এড়ানো যদি একান্তই সম্ভব না হয়, তবেই যাওয়া উচিত।
ওই বিবৃতিতে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও সতর্ক করে বলা হয়েছে, লোকের ভিড়ে পকেটমারের বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। আর বড় শহরগুলোতে, বিশেষত ঢাকায় ছিনতাই, চুরি, অবৈধ মাদক কারবারের মতো অপরাধ ঘটে থাকে।
এছাড়া, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি রয়েছে বলেও সতর্ক করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকার দূতাবাসে কর্মরত মার্কিন কর্মীদের রাজধানীর বাইরে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণে নিষেধ করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় মার্কিন কর্মীদের ভ্রমণের ওপর চতুর্থ ধাপের সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়ার আগ পর্যন্ত, কোনও স্থানে ভ্রমণে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা বোঝাতে এই সতর্কতা জারি করা হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ভ রমণ পর স থ ত ভ রমণ র র সতর সতর ক
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফটো সাংবাদিকের জন্য গাজার শোক
২৫ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি ফটো সাংবাদিক ফাতিমা হাসসুনার জন্য ফটোগ্রাফি ছিল পেশার চেয়েও বেশি কিছু। এটি ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাস্তবতা তুলে ধরার এক অভিযান। গত ১৮ মাসে যুদ্ধের নামে ইসরায়েলি গণহত্যার কারণে ক্যামেরা হাতে ফাতিমা গাজার অলিগলিতে ঘুরতেন। ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনে মানবিক ক্ষয়ক্ষতি সংরক্ষণ করতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িঘর, শোকাহত পরিবার এবং ধ্বংসের মধ্যে শিশুর চোখে আশার আলো খুঁজে বেরিয়েছে তাঁর ক্যামেরা। ফাতিমার তোলা হাজার হাজার ছবি সারাবিশ্বে গাজায় জীবন ও মৃত্যুর এক অম্লান জানালা খুলে দিয়েছিল। তাঁর লেন্স দেখিয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ ও মর্যাদা, বেদনা ও অদম্যতা, মৃত্যু আর সেই ছোট্ট আনন্দের সময়, যা বেঁচে থাকার সাহস জোগায়। তাঁর তোলা ছবিগুলো শুধু ইমেজ নয়, সেগুলো ছিল গাজাবাসীর অবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম ও মানবিকতার গল্প। তিনি বিশ্বাস করতেন, ক্যামেরাই তাঁর শক্তিশালী অস্ত্র; যা ইতিহাসকে রক্ষা করবে, যখন গাজার বাস্তবতা বিশ্বের চোখ থেকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে। ফাতিমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু আসমা আবু সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ আরবকে বলেন, ‘ফাতিমা যাদের ছবি তুলত, তাদের সঙ্গে গভীর আবেগে যুক্ত হতো। সে নারীদের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলত যেন তারা তার মা। প্রতিটি শিশুকে দেখত নিজের সন্তানের মতো। তার সহমর্মিতা কৃত্রিম ছিল না– এটি ছিল একদম নিখাদ।’
যুদ্ধের মধ্যেও ফাতিমা স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর প্রেমিক আজিজের সঙ্গে বিয়ের পরিকল্পনা করছিলেন। ফাতিমার বন্ধুরা জানান, তিনি প্রেমকে যুদ্ধের দুঃখ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে দেখতেন। ফাতিমার বাগদত্তা আজিজ তাঁর কাজে উৎসাহ দিতেন। তারা পরের সপ্তাহে বিয়ে করার পরিকল্পনা করছিলেন। আজিজ এখন মর্মাহত। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না ফাতিমা চলে গেছেন।
২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল ভোরে ইসরায়েলের একটি বিমান হামলায় ফাতিমার বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। এ হামলায় তিনি এবং তাঁর পাঁচ ভাইবোন নিহত হন। তাঁর বাবা-মা গুরুতর আহত হলেও বেঁচে গেছেন। তাঁর বাবা এখনও অজ্ঞান, তিনি জানেন না যে সন্তানরা মারা গেছেন। ফাতিমার মা শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ফাতিমার ১৮ বছর বয়সী ভাই জিহাদ মিসরে থাকেন। তিনি জানান, হামলার কিছুক্ষণ আগে তিনি ফাতিমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। জিহাদ বলেন, ‘আমরা খুশি ছিলাম, কারণ আমার অসুস্থ ভাই মুজাহিদ সুস্থ হয়ে উঠছিল, আর ফাতিমা (যার ডাকনাম ফাতুম) তার আসন্ন বিয়ের জন্য উপহার আর জিনিসপত্রের লিস্ট করছিল।’
ফোন রাখার দুই ঘণ্টা পর জিহাদ দেখলেন গাজা সিটির আল-তুফফাহ এলাকায় বিমান হামলার খবর। তিনি পরিবারের সদস্যদের ফোন করতে গিয়ে দেখলেন, কোনো ফোনই আর পাচ্ছেন না। পরে তাঁর চাচা জানান, পাঁচতলা ভবনটি ধ্বংস হয়ে গেছে। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছিল তাদের পরিবার। জিহাদের ছয় ভাইবোন মারা গেছেন এবং অন্যান্য আত্মীয়-প্রতিবেশী গুরুতর আহত।
জিহাদ জানান, ফাতিমা তাঁর মৃত্যু আগেই আঁচ করেছিলেন। দুই সপ্তাহ আগে আল-আরকাম স্কুলে হামলা হওয়ার পর ফোনে কাঁদতে কাঁদতে জিহাদকে বলছিলেন, ‘তুমি তোমার আর ভাইয়ের যত্ন নিও। আমার মনে হচ্ছে, গাজায় আমাদের সবাই মারা যাব। কারণ চারদিকে শুধু বোমাবর্ষণ আর ধ্বংসযজ্ঞ।’
ফাতিমা হাসসুনা শুধু একজন ফটো সাংবাদিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন গাজার অদম্য কণ্ঠস্বর, যার কাজ বিশ্বকে দেখিয়েছিল ফিলিস্তিনিদের দুঃখ, সংগ্রাম ও অপরাজিত মানসিকতা। তাঁর এক সহকর্মী বলেন, ফাতিমা চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর তোলা ছবিগুলো চিরকাল গাজার ইতিহাস, বেদনা ও জয়ের সাক্ষী হয়ে থাকবে।
ফাতিমা হাসসুনার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।
তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই ও নিউ আরব