গণমাধ্যমে নারীর নেতিবাচক উপস্থাপন বন্ধের সুপারিশ
Published: 19th, April 2025 GMT
গণমাধ্যমে নারীকে ইতিবাচক উপস্থাপন নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করে কমিশন।
এ সময় কমিশনের সদস্যরা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরেন। ১৫টি মূল বিষয়ে ৪৩৩টি সুপারিশ করেছে কমিশন। সুপারিশগুলোর মধ্যে আছে– জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ অনুসরণ করে সব ধরনের গণমাধ্যমে নারীর নেতিবাচক উপস্থাপন বন্ধ করা।
আরো পড়ুন:
প্রথমবার সরকারপ্রধানের রাষ্ট্রীয় সফরসঙ্গী হচ্ছেন নারী ক্রীড়াবিদরা
ধান মাড়াইয়ের সময় বজ্রপাত, নারীর মৃত্যু
প্রতিবেদনে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়-বৈষম্যমূলক আচরণ, নারীর নেতিবাচক উপস্থাপন ইত্যাদি বিষয়ের জন্য একটি অভিযোগ ও নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া চালু করা। গণমাধ্যমের প্রত্যেক শাখা ও স্তরে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
এছাড়া নারী ও অন্যান্য লিঙ্গ-বিদ্বেষী উপস্থাপন, নেতিবাচক ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে-এমন ভাষা পরিহার করার লক্ষ্যে উপস্থাপনের ভাষা ও ধরন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পর্যায় থেকে কর্মজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়নের ব্যবস্থা করারও সুপারিশ করা হয়।
পাশাপাশি বিজ্ঞাপনে নারীর উপস্থাপন সংক্রান্ত একটি মানদণ্ড নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, সেজন্য পরিবীক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।
বিস্তারিত প্রতিবেদনে গণমাধ্যমে নারী ও শিশুসহ যৌন বা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার যেকোনও লিঙ্গের ভুক্তভোগী এবং বিচারিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার আগে ঝুঁকিপূর্ণ সাক্ষী বা অভিযুক্তদের পরিচয় প্রকাশের ওপর প্রতিবেদন সীমিত করতে বিচার বিভাগ কর্তৃক গণমাধ্যমের জন্য একটি অনুশীলন নির্দেশিকা জারি করার কথা বলা হয়।
এছাড়া অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে আছে-সহিংসতার শিকার নারীদের নিয়ে সংবাদ বা অন্যান্য যেকোনও উপস্থাপনায় ভাষার ব্যবহারে সতর্ক থাকা, জেন্ডার স্টেরিওটাইপ আচরণ, যেমন- ঘরের কাজ নারীর অথবা নারীরা ধূমপান করে না-ধরনের উপস্থাপনা করা থেকে বিরত থাকা, যেকোনোও উপস্থাপনায় অহেতুক নারীর প্রসঙ্গ টেনে নারীবিদ্বেষী বয়ান, বক্তব্য, ধারণা বা ছবি পরিবেশন থেকে বিরত থাকা।
প্রতিবেদনে গণমাধ্যমে অংশগ্রহণের জন্য, অথবা কাজ পাওয়ার জন্য নারীকে যৌনবস্তু হিসেবে ব্যবহার না করা, নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতা বিবেচনা করা, কাস্টিং কাউচ পরিহার করা এবং এ জন্য শাস্তির বিধান রাখার কথাও বলে হয়েছে।
সমাজে নারী সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করার জন্য গণমাধ্যমে ভাষার ব্যবহার ও নারীর চিত্রায়নে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে নিয়মিত এ বিষয়ক প্রচারণা, প্রশিক্ষণ ও যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা এবং অহেতুক নারীকে যৌনবস্তু হিসেবে উপস্থাপন থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে।
সমাজে নারীর প্রতি যে বৈষম্য বিরাজ করছে এবং নারী যে নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে, সে বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করে তুলে ধরা, অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরিতে তাদের কাজ, জাতীয় অর্থনীতিতে তাদের অবদান ও নিজ জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা, সামাজিক সম্প্রীতি ও সহনশীলতা বৃদ্ধিতে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির ইতিবাচক উপস্থাপন করা, প্রতিবন্ধী নারী ও অন্যান্য প্রান্তিক নারীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা, অবস্থান ও প্রতিবন্ধকতা প্রকাশ করা এবং উপস্থাপনার ভাষা যেন তাদের প্রতি সম্মানজনক ও সংবেদনশীল হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার কথাও বলা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপারিশে বলা হয়েছে-গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা। এছাড়া ব্যবস্থাপনা ও সব পর্যায়ের কর্মীদের জেন্ডার-সংবেদনশীলতা নিয়মিত যাচাই করার পদ্ধতি প্রণয়ন করার বিষয়ে বলা হয়েছে-এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের চর্চাকে উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে বলে মনে করে কমিশন।
এছাড়া গণমাধ্যমের প্রত্যেক শাখা ও স্তরে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথাও সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকা/হাসান/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন য ন য পর য য র জন য গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
পবিপ্রবির শিক্ষার্থীর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, বলছেন চিকিৎসকরা
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবির) শিক্ষার্থী হোসাইন মোহাম্মদ আশিকের মৃত্যুর ঘটনায় প্রেস ব্রিফিং করেছেন সিনিয়র চিকিৎসকসহ ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তাদের দাবি, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। কোনোভাবে সহিংস আচরণের শিকার হয়ে থাকতে পারেন তিনি।
বুধবার বিকেলে হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে এ প্রেস ব্রিফিং করেন চিকিৎসকরা। সেখানে বলা হয়, ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে আনা হলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেন। পরে সিনিয়র চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসা শুরু করেন। তবে রোগীর মুখ দিয়ে রক্তপাত হচ্ছিল, যা তাদের মতে অভ্যন্তরীণ আঘাতের ফল। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তিনি কোনোভাবে সহিংস আচরণের শিকার হয়ে থাকতে পারেন। তাই ময়নাতদন্ত হলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি) এ এম এস শামীম আল আজাদ, আবাসিক চিকিৎসক মশিউর রহমান, চিকিৎসক শাহরিয়ার আনজুম শুভ, ইন্টার্ন চিকিৎসক সাদিয়া রহমান রিমি, অনন্যা আক্তার ইলমিসহ অন্য ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
এদিকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট এ এস এম শামীম আল আজাদকে ওএসডি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পদায়ন (বদলি) করা হয়েছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে আগামী সাত দিনের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য চিকিৎসক আজাদকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কী কারণে তাঁকে বদলি করা হয়েছে, তা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চিকিৎসক শামীম আল আজাদের বদলির চিঠি পেয়েছেন। তবে, কী কারণে তাঁকে বদলি করা হয়েছে তা জানেন না তিনি। তবে হাসপাতালে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
গত ১৪ এপ্রিল বিকেলে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি পুকুরে ডুবে অসুস্থ হয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হোসাইন মোহাম্মদ আশিক। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। চিকিৎসকের অবহেলায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক তদন্ত কমিটি করেছে।