স্লোভাকিয়ার যে জায়গাটা পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা মনে করিয়ে দিল
Published: 19th, April 2025 GMT
স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাটিস্লাভা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টার ট্রেনযাত্রা শেষে সবুজ পাহাড়, নদী আর মেঘ জানান দিল আমরা হাই টাট্রাস পর্বতমালার দিকে এগোচ্ছি। আস্তে আস্তে ট্রেনের গতি কমে ক্রালোভানি এসে থামল।
ক্রালোভানি থেকে ট্রেন বদলে কুবিন যাব। কিন্তু স্টেশনে নেমে জানা গেল শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ এ জন্য কুবিন পর্যন্ত বাসের ব্যবস্থা করে দিল। বাসে উঠতে গিয়ে মনে হলো স্নিগ্ধ জায়গাটায় কিছুটা সময় কাটাতে পারলে মন্দ হতো না। এলাকাটা এত সবুজ আর স্নিগ্ধ যে বারবার আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা মনে করিয়ে দিল।
ট্রেনের বদলে বাস হওয়ায় ভালোই হলো। লোকালয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। ঝাঁ–চকচকে বাসটি আঁকাবাঁকা-উঁচুনিচু রাস্তা ধরে আধা ঘণ্টা পর কুবিন এসে নামিয়ে দিল। এরপর আবার ট্রেনে উঠে মূল গন্তব্য ওরাভস্কি পোডজামকের স্টেশনে এলাম মিনিট বিশেক পরই।
স্টেশন থেকে বের হতেই চোখে পড়ল পাহাড়ের ওপরের বিশাল ওরাভা ক্যাসেল বা দুর্গ। সেখানেই যাব, তবে তার আগে গুগল ম্যাপে বুকিং করে আসা মোটেলটা খুঁজে নিলাম। পাহাড়ের পাদদেশে চমৎকার মোটেল দেখে মনটা ভরে গেল। বাড়ির মালিক ক্যারোলিনা নামে একজন। ফোন পেয়ে দ্রুত দরজা খুলে দিয়ে অভিনন্দন জানাল।
সিঁড়ি ভেঙে দুর্গের বিভিন্ন কক্ষে যেতে হয়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফটো সাংবাদিকের জন্য গাজার শোক
২৫ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি ফটো সাংবাদিক ফাতিমা হাসসুনার জন্য ফটোগ্রাফি ছিল পেশার চেয়েও বেশি কিছু। এটি ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাস্তবতা তুলে ধরার এক অভিযান। গত ১৮ মাসে যুদ্ধের নামে ইসরায়েলি গণহত্যার কারণে ক্যামেরা হাতে ফাতিমা গাজার অলিগলিতে ঘুরতেন। ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনে মানবিক ক্ষয়ক্ষতি সংরক্ষণ করতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িঘর, শোকাহত পরিবার এবং ধ্বংসের মধ্যে শিশুর চোখে আশার আলো খুঁজে বেরিয়েছে তাঁর ক্যামেরা। ফাতিমার তোলা হাজার হাজার ছবি সারাবিশ্বে গাজায় জীবন ও মৃত্যুর এক অম্লান জানালা খুলে দিয়েছিল। তাঁর লেন্স দেখিয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ ও মর্যাদা, বেদনা ও অদম্যতা, মৃত্যু আর সেই ছোট্ট আনন্দের সময়, যা বেঁচে থাকার সাহস জোগায়। তাঁর তোলা ছবিগুলো শুধু ইমেজ নয়, সেগুলো ছিল গাজাবাসীর অবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম ও মানবিকতার গল্প। তিনি বিশ্বাস করতেন, ক্যামেরাই তাঁর শক্তিশালী অস্ত্র; যা ইতিহাসকে রক্ষা করবে, যখন গাজার বাস্তবতা বিশ্বের চোখ থেকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে। ফাতিমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু আসমা আবু সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ আরবকে বলেন, ‘ফাতিমা যাদের ছবি তুলত, তাদের সঙ্গে গভীর আবেগে যুক্ত হতো। সে নারীদের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলত যেন তারা তার মা। প্রতিটি শিশুকে দেখত নিজের সন্তানের মতো। তার সহমর্মিতা কৃত্রিম ছিল না– এটি ছিল একদম নিখাদ।’
যুদ্ধের মধ্যেও ফাতিমা স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর প্রেমিক আজিজের সঙ্গে বিয়ের পরিকল্পনা করছিলেন। ফাতিমার বন্ধুরা জানান, তিনি প্রেমকে যুদ্ধের দুঃখ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে দেখতেন। ফাতিমার বাগদত্তা আজিজ তাঁর কাজে উৎসাহ দিতেন। তারা পরের সপ্তাহে বিয়ে করার পরিকল্পনা করছিলেন। আজিজ এখন মর্মাহত। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না ফাতিমা চলে গেছেন।
২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল ভোরে ইসরায়েলের একটি বিমান হামলায় ফাতিমার বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। এ হামলায় তিনি এবং তাঁর পাঁচ ভাইবোন নিহত হন। তাঁর বাবা-মা গুরুতর আহত হলেও বেঁচে গেছেন। তাঁর বাবা এখনও অজ্ঞান, তিনি জানেন না যে সন্তানরা মারা গেছেন। ফাতিমার মা শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ফাতিমার ১৮ বছর বয়সী ভাই জিহাদ মিসরে থাকেন। তিনি জানান, হামলার কিছুক্ষণ আগে তিনি ফাতিমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। জিহাদ বলেন, ‘আমরা খুশি ছিলাম, কারণ আমার অসুস্থ ভাই মুজাহিদ সুস্থ হয়ে উঠছিল, আর ফাতিমা (যার ডাকনাম ফাতুম) তার আসন্ন বিয়ের জন্য উপহার আর জিনিসপত্রের লিস্ট করছিল।’
ফোন রাখার দুই ঘণ্টা পর জিহাদ দেখলেন গাজা সিটির আল-তুফফাহ এলাকায় বিমান হামলার খবর। তিনি পরিবারের সদস্যদের ফোন করতে গিয়ে দেখলেন, কোনো ফোনই আর পাচ্ছেন না। পরে তাঁর চাচা জানান, পাঁচতলা ভবনটি ধ্বংস হয়ে গেছে। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছিল তাদের পরিবার। জিহাদের ছয় ভাইবোন মারা গেছেন এবং অন্যান্য আত্মীয়-প্রতিবেশী গুরুতর আহত।
জিহাদ জানান, ফাতিমা তাঁর মৃত্যু আগেই আঁচ করেছিলেন। দুই সপ্তাহ আগে আল-আরকাম স্কুলে হামলা হওয়ার পর ফোনে কাঁদতে কাঁদতে জিহাদকে বলছিলেন, ‘তুমি তোমার আর ভাইয়ের যত্ন নিও। আমার মনে হচ্ছে, গাজায় আমাদের সবাই মারা যাব। কারণ চারদিকে শুধু বোমাবর্ষণ আর ধ্বংসযজ্ঞ।’
ফাতিমা হাসসুনা শুধু একজন ফটো সাংবাদিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন গাজার অদম্য কণ্ঠস্বর, যার কাজ বিশ্বকে দেখিয়েছিল ফিলিস্তিনিদের দুঃখ, সংগ্রাম ও অপরাজিত মানসিকতা। তাঁর এক সহকর্মী বলেন, ফাতিমা চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর তোলা ছবিগুলো চিরকাল গাজার ইতিহাস, বেদনা ও জয়ের সাক্ষী হয়ে থাকবে।
ফাতিমা হাসসুনার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।
তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই ও নিউ আরব