গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের নরুন গ্রামের আশেপাশের খাল-বিলগুলো যেন বিষাক্ত পানির একেকটি কারখানা।
মাছ শুধু নয়, গোটা জলজ পরিবেশ আজ নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। দূষণের মাত্রা এত ভয়াবহ যে, মনে হয় বিষ ঢাললেও এমন ক্ষতি হত না।
এই দূষিত পানি ব্যবহার করে জমিতে সেচ দিলে জমির মাটি বিষাক্ত হয়ে যায়। ফলে উৎপাদনও কমে গেছে। কৃষক হারিয়েছে স্বস্তি ও সুরক্ষা। খালের আশেপাশের বাড়িঘরে এক সময়কার মনমুগ্ধকর প্রকৃতির গন্ধ এখন পাল্টে গেছে, হয়ে গেছে দুর্গন্ধ। আর দমবন্ধ করা বাতাস তো আছেই।
মানুষ আর খালের পানিতে নামে না। শিশুদের খেলাধূলার স্মৃতিমাখা বর্ষার পানি আজ যেন শুধু গল্পের পাতা। এ অঞ্চলের বসতিদের শরীরে চুলকানি, চর্মরোগসহ নানা রোগের বিস্তারের সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
আমরা গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরকে বারবার জানিয়েছি এ দুরবস্থার কথা। কিন্তু এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এ নীরবতা যেন এক ধরনের অপরাধের মৌন সম্মতি।
তবুও, আশার আলো নিভে যায়নি। সঠিক পরিকল্পনা ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগে আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব খাল-বিলের প্রাণ। জলজ কৃষি হতে পারে এই এলাকার ভবিষ্যৎ সম্পদ।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সীমানায় থাকা এই অঞ্চল হতে পারে নতুন এক পর্যটন তীর্থস্থান; যেখানে দূষণ নয়, থাকবে জীবনের প্রাণবন্ততা।
আমরা চাই, নরুনের সেই ধূসর ক্যানভাসে আবারো ফিরে আসুক রঙের উচ্ছ্বাস। আমাদের সন্তানরা যেন দূষণমুক্ত জলে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে, শৈশবের উচ্ছ্বাসে মাতিয়ে তুলতে পারে পুরো নরুন—এটাই হোক আমাদের লক্ষ্য।
আপনার এক কণ্ঠেই শুরু হতে পারে পরিবর্তনের ধ্বনি। নরুন চায় মুক্তি। আপনিও হতে পারেন সেই নায়ক।
(লেখক: শিক্ষার্থী, শিক্ষাবর্ষ ২০২১-২২, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জনসমক্ষে নারী হেনস্তার বিপরীতে
সম্প্রতি রাজধানীর খিলগাঁওয়ে আপন কফি হাউসে একজন নারীকে সেখানকার কর্মীরা প্রকাশ্যে মারধর করে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বর্তমানে নারীরা প্রকাশ্যে ও জনসমক্ষে বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। কপালে টিপ পরা থেকে শুরু করে পরিধেয় পোশাকসহ নানাবিধ বিষয়ে পদে পদে অপদস্থ হওয়ার ঘটনা প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায় উঠে আসছে। বিষয়গুলো নিয়ে কিছুদিন সরগরম থাকলেও পরে অন্যসব ঘটনার নিচে চাপা পড়ে যায়।
‘গায়ে হাত তোলার অধিকার কারও নেই’
জেড আই খান পান্না
চেয়ারপারসন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
আমরা যতই নারী স্বাধীনতার কথা বলি না কেন, নারীরা বিভিন্নভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। রাজনীতি কিংবা ধর্ম– যেভাবেই হোক, এখানে লক্ষ্যবস্তু নারী। আমি আমার মাকে ঘোমটা পরতে দেখেছি; কিন্তু হিজাব পরতে দেখিনি। আমার মেয়েদের দেখি, হিজাব পরে। এখনকার নতুন প্রজন্মের কাছে হিজাব একটি চল হিসেবে এসেছে। এটি খারাপ না; কিন্তু তারা ধর্ম-কর্ম, নামাজ-রোজা করে কিনা জানি না। ধর্ষণের সংখ্যাও বেড়ে গেছে অনেক। আসলে কি এই পোশাকই কারণ, নাকি মনস্তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে? পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক কারণ পরিবর্তনের চেষ্টা না করে নারীর পোশাক ও চালচলনের দিকে লক্ষ্য করার কোনো যৌক্তিকতা আমি দেখি না। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীকে যে হেনস্তা করা হচ্ছে, সেখানে নারীকে দমে না গিয়ে জোরালোভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাস্তায় নামা উচিত।
আপন কফি হাউসে যে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে তারা একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছে যে, মেয়েটি নাকি মানসিক বিকারগ্রস্ত– টাকা চেয়েছে ও থুথু দিয়েছে। এখন কথা হলো– যদি এমন কিছু ঘটে থাকে, তাহলে তাকে পুলিশে সোপর্দ করতে হবে; কিন্তু গায়ে হাত তোলার অধিকার কারও নেই। এটি অন্যায়। আমরা তো ঘটনা ঘটার পরে প্রতিকার করি। আগে থেকে প্রতিরোধ কিংবা প্রতিকারের চেষ্টা করি না। আমরা ঘটনা ঘটার পর প্রতিক্রিয়ায় যাই। মেয়েটি যদি মানসিক বিকারগ্রস্ত হতো, তাহলে তো সে আরও কয়েকটি দোকানে যেত বলে আমার মনে হয়। ওখানে তো আরও দোকান ছিল আশপাশে।
সবশেষে আমি বলব, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর জোর দিতে হবে। মেয়েদের স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে জুডো-কারাতের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। এতে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং নিজেদের রক্ষা করতে পারবে। ঘরে ও বাইরে নির্যাতনের সংখ্যা কমে আসবে।
‘নারীর জায়গা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়’
খুশী কবির
সমন্বয়ক, নিজেরা করি
আমি মনে করি, এ ধরনের উগ্রবাদী চিন্তা আমাদের দেশে আগেও ছিল। কখনও তারা শক্তিশালীভাবে প্রকাশ্যে এসেছে, কখনও তাদের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ ছিল। যদিও ধর্ষণ ও হত্যা হয়েছে আগেও; এটি নতুন কিছু নয়। তবে প্রকাশ্যে নারীর গায়ে হাত তোলাটা নতুন। জনসমক্ষে নারীর ওপর এ ধরনের মারধর আগে কমই দেখা গেছে। এখন যেভাবে অহরহ এসব ঘটনা ঘটছে, বিষয়টা স্বাভাবিকের কাতারে চলে আসছে প্রায়।
নারীর টিপ পরা নিয়েও যা হচ্ছে, এটিও উগ্র সাম্প্রদায়িক চিন্তার মানসিকতা। এমনকি ছায়ানটের সন্জীদা আপার শেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য নিয়েও অশোভন কথাবার্তা হয়েছে। এটি একটা গোষ্ঠী করবেই। সেটিকে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ, ছেড়ে দিলে তাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে। তারা তখন মগজধোলাই করার চেষ্টা করবে। নারীকে এ জায়গা ছেড়ে দেওয়া কোনোক্রমেই উচিত নয়; বরং ওরা যা বলে,
তার পাল্টা যুক্তি দেওয়া উচিত। নয়তো প্রগতিশীল ও উদার মানসিকতার মানুষদের জায়গা থাকবে না।
যা ঘটেছে এটা খুব বড় সতর্কবার্তা আমাদের দেশের জন্য। খুব ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে দেশে। এজন্য সরকারকে খুব স্পষ্টভাবে তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে এসব কর্মকাণ্ড রোধ করতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াকে গ্রহণ করা হবে না কোনোভাবেই– এর বিরুদ্ধে সরকার ও দায়িত্বশীলদের স্পষ্টবার্তা থাকতে হবে। যারা এগুলো করে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। নয়তো দেশের অবস্থা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের ৫০ ভাগ নারী। আমরা যেভাবে গড়ে উঠেছি, সেভাবে গড়ে উঠতে চাই। কেউ একটা মত, পথ বা ধর্মের বিশ্বাসী হতে পারেন। তবে আমার চলাফেরার ওপর হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই আরেকজনের। এটা সরকারের খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। v
lগ্রন্থনা: দ্রোহী তারা