টেলিকম খাত সংস্কারকে টাকার বস্তা দিয়ে প্রভাবিত করবেন না: ফয়েজ আহমদ
Published: 19th, April 2025 GMT
টেলিকম খাত সংস্কারে সরকার যে নীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে, সেখানে টাকা দিয়ে তা প্রভাবিত না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানিয়েছেন, টেলিকম আইন নতুন করে করা হবে। এ খাতে অনেক লাইসেন্স–ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘ইন্টারনেট সেবার সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিলে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) উদ্যোগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ বলেছেন, ‘আপনারা যাঁরা ব্যবসায়ী, তাঁরা ব্যবসা করেন। আপনারা টাকার গাদা নিয়ে রাজনৈতিক নেতা বা ইনফ্লুয়েন্সারদের বা নীতিনির্ধারকদের কাছে যাবেন না। এটা ব্যবসাকে টেকসই করে না।’
আগের মতো অপকর্মের (ম্যাল প্র্যাক্টিস) মাধ্যমে টেলিকম নীতিকে প্রভাবিত না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, টাকার বস্তা নিয়ে এসে নীতিকে প্রভাবিত করবেন না। এটা থেকে সরে না এলে নিজের ব্যবসা এবং পুরো খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ফয়েজ আহমদ জানান, টেলিকম আইন নতুন করে করা হবে। ইন্টারনেট যে আর বন্ধ হবে না, সেটা বিনিয়োগকারীদের দেখাতে হবে। আগামী দুই বছরে বৈশ্বিক সব সূচকে বাংলাদেশকে ৩০–এর মধ্যে আনতে হবে। এটা করতে পারলে বিনিয়োগ আসবে।
টেলিকম খাতের নেটওয়ার্ক টপোলজি তিনটি স্তরে নিয়ে আসা হবে এবং এতে ব্যবসার সুযোগ বাড়বে বলে জানান এই বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, অনেক লাইসেন্স তুলে ফেলা হবে। কিন্তু বিদ্যমন যারা আছে, তাদের ব্যবসার সুযোগ থাকবে। তাদের মাইলস্টোন অর্জন করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হবে। কেপিআই থাকবে পারফরম্যান্সের ওপর। ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীরা (আইএসপি) এখন সর্বনিম্ন ১০ এমবিপিএস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই সেবা তারা দিচ্ছে কি না এবং মোবাইল ইন্টারনেট সেবাদাতারা মানসম্পন্ন সেবা দিচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ফয়েজ আহমদ বলেন, দেশের ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন, এ অঞ্চলে বাংলাদেশ ইন্টারনেট অনেক সস্তা। কিন্তু এই দাবিকে তিনি খারিজ করে দিয়ে বলেন, যে মানের ইন্টারনেট দেওয়া হয়, তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট। সে হিসেবে মান বিবেচনায় দাম অনেক বেশি।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.
বিটিআরসি নেটওয়ার্ক টপোলজিতে তিনটি ক্যাটাগরির কথা ভাবছে উল্লেখ করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, একটি হলো আন্তর্জাতিক, যেখানে বিভিন্ন গেটওয়ে এক লাইসেন্সের আওতায় চলে আসবে। এরপর আছে জাতীয় পর্যায়ে ও গ্রাহক পর্যায়ের ক্যাটাগরি। এ ছাড়া এক দেশ এক রেট নিয়ে আবার কাজ হবে বলে তিনি জানান। এমদাদ উল বারী বলেন, ফিক্সড সেবার একটা লাইসেন্স থাকবে। যাঁরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, তাঁরা নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আসবেন, যাতে যে কেউ এই ব্যবসায় আসতে পারেন।
বৈঠকে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, আজ থেকে গ্রাহকেরা ৫ এমবিপিএসের পরিবর্তে ১০ এমবিপিএস পাবেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের জুন মাসে বিটিআরসি এক দেশ এক রেট নীতি চালু করে। যার আওতায় সারা দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের একই দামে সংযোগ দিতে হয়। এতে তিনটি প্যাকেজ ছিল— প্রথম প্যাকেজের মূল্য মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা—গতি ৫ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড)। দ্বিতীয় প্যাকেজের মূল্য মাসিক ৮০০ টাকার মধ্যে—এর গতি ১০ এমবিপিএস এবং তৃতীয় প্যাকেজের গতি ২০ এমবিপিএস, দাম মাসিক ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে।
বৈঠকে টিআরএনবির সভাপতি সমীর কুমার দেবের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী, মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার, রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, বাংলালিংকের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান তাইমুর রহমান প্রমুখ।
আরও পড়ুনইন্টারনেট বন্ধ ঠেকাতে চারটি পর্যায়ে কাজ করছে সরকার: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব০৭ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ট আরস র ব যবস ব যবস য় ট ল কম
এছাড়াও পড়ুন:
সংবিধান সংশোধন-সংক্রান্ত মৌলিক প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে এক জায়গায় আসার চেষ্টা করবে বিএনপি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, সংবিধান সংশোধন-সংক্রান্ত মৌলিক প্রস্তাবের বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এক জায়গায়, ঐকমত্যে আসার চেষ্টা করবে তাঁর দল।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জাতীয় সংসদের এলডি হলে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলছে। এর মাঝখানে বৈঠক থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহ উদ্দিন আহমদ।
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির দফাওয়ারি আলোচনা হচ্ছে। কমিশন স্প্রেডশিটে ‘হ্যাঁ-না’ সংক্ষিপ্ত জবাব দেওয়ার জন্য যে কাগজ দিয়েছিল, তাতে অনেকটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, ‘মিসলিড’ করা হয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদনে ১৩১টি প্রস্তাব থাকলেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে ৭০টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ সব বিষয়ে দফায় দফায় আলোচনা করবেন তাঁরা। সংবিধান সংশোধন-সংক্রান্ত মৌলিক প্রস্তাবের বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চেষ্টা করবেন এক জায়গায় আসার জন্য।
সালাহ উদ্দিন আহমদ জানান, বিএনপি সংবিধান সংস্কার কমিশনের ২৫টি প্রস্তাবের সঙ্গে একমত। ২৫টির মতো বিষয়ে আংশিকভাবে একমত। বাকি বিষয়গুলোতে একমত হতে পারেনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমরা যেসব বিষয়ে বিস্তারিত মতামত দিয়েছি, সে বিষয়ে কমিশনকে যৌক্তিকভাবে বোঝাব এবং তাদের প্রস্তাবের বিষয়েও আমরা যৌক্তিকভাবে জানতে চাচ্ছি। যেটা যৌক্তিক, সেটা জাতির কল্যাণের দিকে লক্ষ রেখে আমরা সেটা অবশ্যই বিবেচনা করব।’
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, সংবিধান সংস্কার দিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তারপর বিচার বিভাগ, নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হবে। আজ আলোচনা শেষ না হলে পরেও আলোচনা হবে। তাঁরা বোঝাতে চান, বিএনপি সংস্কারের বিষয়ে কতটা ‘সিরিয়াস’।