আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
Published: 19th, April 2025 GMT
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। আজ শনিবার ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। ক্যাম্পাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে মিছিলটি শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনীতি না করে, রাজনীতির নামে গণহত্যা চালিয়েছে। শুধু যে গণহত্যা চালিয়েছে তা–ই নয়, তারা এই দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে বর্গা দিয়েছিল। তাদের আর এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগকে বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে অথবা গণভোটের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করতে হবে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ উসমান হাদি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে দিল্লির স্বার্থ বাস্তবায়ন করে গিয়েছে। যখনই কেউ প্রতিবাদ করেছেন, তাঁকে আয়নাঘরে গুম করা হয়েছে। আমার ভাইদের তুলে নিয়ে জঙ্গি তকমা দিয়েছে। এরপরে জুলাইয়ে অধিকার নিয়ে কথা বলতে গেলে দেশব্যাপী গণহত্যা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগ শুধু গণহত্যা চালায়নি, তারা এমন কোনো অপরাধ নেই যা উৎসাহ নিয়ে করেনি। এই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা হলে আমাদের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মো.
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সাবেক সমন্বয়ক আকিল বিন তালেব বলেন, ‘যদি ন্যায়বিচার বলে কিছু থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিরাপদে থাকতে হলে জনগণের কাতারে নেমে আসতে হবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে কোনো আপস করা হবে না।’
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন গণ–অভ্যুত্থান মঞ্চের সংগঠক ইমরান হাসান। এ সময় আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব, সালাউদ্দিন আম্মার। কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণহত য র জন ত আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানের বিবৃতিতে নেই ক্ষমা প্রার্থনার প্রসঙ্গ
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশ যে দাবি করেছিল, তার সঙ্গে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানের বিবৃতিতে। মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং স্বাধীনতাপূর্ব অভিন্ন সম্পদে হিস্যা দাবির কথা বলেছিল বাংলাদেশ। বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের বিবৃতিতে এই বিষয়গুলোর উল্লেখ নেই। বৃহস্পতিবার ঢাকায় দুই দেশের সচিব পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দেড় দশক পর হওয়া এই বৈঠকে ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের জন্য অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান চায় ঢাকা।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, স্বাধীনতাপূর্ব ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে ৪৩২ কোটি ডলার চেয়েছে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার বিষয় বলেছে। এর এক দিন পর শুক্রবার পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ষষ্ঠবারের মতো অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক সম্পর্কে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে যৌথ অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক, গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা এমনকি জম্মু ও কাশ্মীর প্রসঙ্গও রয়েছে। এসব নিয়ে ঢাকার বৈঠকে আলোচনার কথা বলা হলেও মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া কিংবা বকেয়া অর্থের বিষয়ে কিছু বলা নেই ওই বিবৃতিতে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছিলেন, আলোচনায় অমীমাংসিত বিষয়ের মধ্যে ছিল আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভক্ত সম্পদের সুষম বণ্টন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রেরিত বৈদেশিক সাহায্য তহবিল হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের আগের একটি হিসাবে ৪০০ কোটি ডলার এবং আরেকটা হিসাবে ৪৩২ কোটি ডলার পাওনা রয়েছে।’ তবে এসব ইস্যুতে একটি শব্দও লেখেনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে অতীতের ইস্যুর চেয়ে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দিকে নজর দিয়েছে ইসলামাবাদ।
তাদের ভাষ্য, দেশ দুটির সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং অভিন্ন ইতিহাস ও জনআকাঙ্ক্ষার কথা এসেছে আলোচনায়। বৈঠকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছে দুই পক্ষ। সাম্প্রতিক কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগের প্রসঙ্গও এসেছে সেখানে। নিউইয়র্ক, কায়রো, সামোয়া ও জেদ্দার ওই সব আলাপ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করেছে। সম্পর্কের গতিশীলতা ধরে রাখতে নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ, ঝুলে থাকা চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত করা এবং বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহায়তা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দেশটির কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশিদের পড়াশোনার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশ প্রস্তাব দিয়েছে মৎস্য ও সামুদ্রিক বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণের। করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরুর বিষয়টিকে স্বাগত জানান হয়েছে। পাশাপাশি আকাশপথে ফের সরাসরি যোগাযোগ চালুর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সন্তোষ জানানো হয়েছে ভ্রমণ ও ভিসা সহজীকরণে অগ্রগতির ব্যাপারে।