জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে দুর্নীতিবাজ উল্লেখ করে তাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ জাতীয় পার্টির অন্য অংশটি।

দলটির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, “পল্লীবন্ধু এরশাদের অসুস্থতার সুযোগে দলীয় চেয়ারম্যান পদ-দখল করেছেন জিএম কাদের। দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে এই পদে কখনোই দেখতে চায়নি। চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে পার্টিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। শুধু জনগণ নয়, খোদ নেতাকর্মীরাই তাকে জেলে দেখতে চান। দেশ ও নেতাকর্মীদের স্বার্থে জি এম কাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি করছি।”

শনিবার (১৯ এপ্রিল) সেগুনবাগিচার জেকে টাওয়ারে দলের বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

আ.

লীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে যা বললেন জিএম কাদের

‘ক্লিন ইমেজের’ আড়ালে ‘কলঙ্ক’, দুদকের জালে জিএম কাদের

এ সময় দলের কো-চেয়ারম্যান সুনীল শুভ রায়, সাবেক এমপি জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, জামাল রানা, চট্টগ্রামের আমান উল্লাহ আমানসহ কেন্দ্রীয় জেলা নেতারা বক্তব্য রাখেন।

কাজী মামুন বলেন, “জিএম কাদের নিজেকে সৎ দাবি করলেও প্রত্যেকটি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন। দলীয় চাঁদা আত্মসাতের সাথে জড়িত। জাতীয় পার্টিকে বিক্রি করে তিনি নিজেই শুধু লাভবান হননি, তার স্ত্রী, পরিবারও অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এবং বিদেশে পাচার করেছেন। ইতিমধ্যে জিএম কাদের ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান শুরু করেছে। আমরা কমিশনকে স্বাগত জানাই।”

‘‘জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যান হয়ে চাকর-বাকরদের দলীয় পদ দেন, প্রমোশন বাণিজ্য তো আছেই। আর যারা তার চাইতে যোগ্য ও ত্যাগি নেতাদের বাদ দিচ্ছেন। তার স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডে ত্যাগী নেতাকর্মীরা অপমানিত হয়ে পদত্যাগ করছেন। এভাবে দল চলতে পারে না। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দলকে সুসংগঠিত করতে হবে,” বলেন কাজী মামুন।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রওশন এরশাদ গ্রুপের বর্ধিত সভা চলাকালে একই সময়ে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির অন্য অংশটিও দলের বর্ধিত সভা করে। পার্টির চেয়ারম্যানের বারিধারা অফিসে দুই দিনব্যাপী বর্ধিত সভার প্রথম দিনে সভাপতিত্ব করেন জিএম কাদের।

এ সময় দলটির  কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলটির জেলা-মহানগরসহ উপস্থিত ছিলেন।

জাপার জিএম কাদের সমর্থক অংশ দলটির বনানী কার্যালয়ে বর্ধিত সভা করেছে। একই সময়ে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বর্ধিত সভা করে বনানীতে। জাপার একাংশের বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জিএম কাদের।

এ সময় এ অংশের কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলটির জেলা-মহানগরসহ শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র ন জ এম ক দ র ন ত কর ম কর ছ ন দলট র এরশ দ

এছাড়াও পড়ুন:

সড়কে রক্তের দাগ

ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। দুর্ঘটনায় প্রাণহানি সংক্রান্ত সংবাদপত্রের সাম্প্রতিক খবরগুলো বড় বেদনার। স্বাভাবিক সময়েই অনেক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। শহীদ রওশনের মায়ের চোখের পানি এখনও শুকায়নি। ২০১৮ সালের সেই জুলাইয়ের সকালে তিনি তাঁর ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন স্বপ্ন নিয়ে। ফিরে পেয়েছিলেন রক্তাক্ত দেহ। একটি বেপরোয়া বাসের চাকায় শুধু একটি প্রাণই নয়, একটি পরিবারের সব স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
প্রতিদিন বাংলাদেশের সড়কে গড়ে ২২ জন প্রাণ হারান। প্রতিটি মৃত্যুর পেছনে রয়েছে একটি পরিবারের অশ্রু আর অপূরণীয় ক্ষতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, গত দশকে আমরা হারিয়েছি ৭৫ হাজার প্রাণ, যা একটি ছোট শহরের জনসংখ্যার সমান।

আমাদের সড়কগুলো যেন মৃত্যুর মিছিল চলার উন্মুক্ত প্রান্তর। প্রতি ১০০টি গাড়ির মধ্যে ৩৫টি মেয়াদোত্তীর্ণ। ৪০ শতাংশ চালক বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালায়। এর পেছনে রয়েছে জটিল নেটওয়ার্ক– দুর্নীতি, অদক্ষতা। সর্বোপরি আমাদের সামাজিক অবক্ষয়।
২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলন ছিল এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক জোরালো প্রতিবাদ। কিন্তু ছয় বছর পর আমরা কতটুকু এগিয়েছি? ডিজিটাল লাইসেন্সিং সিস্টেম চালু হয়েছে, কিন্তু অনেক আবেদনকারী এখনও 
দালালের কারণে হয়রানির শিকার। আইন হয়েছে, কিন্তু প্রয়োগ দুর্বল।
আমাদের সমস্যা শুধু প্রযুক্তিগত নয়। এটি মূলত সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়। প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে সামাজিক অবক্ষয়ের ছাপ। আমরা যেখানে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন করছি, সেখানে আমাদের মানবিক মূল্যবোধ পিছিয়ে পড়ছে।

সরকারের নতুন উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি আমাদের প্রয়োজন সামাজিক বিবেককে জাগ্রত করা। প্রত্যেক চালক যেন বুঝতে পারে, তার হাতে শুধু স্টিয়ারিং নয়, অসংখ্য প্রাণের দায়িত্বও রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। লাইসেন্স প্রদান থেকে শুরু করে গাড়ি পরিদর্শন– সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধু সড়ক নয়, আমাদের প্রয়োজন একটি সমন্বিত যানবাহন ব্যবস্থা, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।
২০১৮ সালের সেই নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আমাদের দেখিয়েছিল– পরিবর্তন সম্ভব। আজ আমাদের প্রয়োজন সেই চেতনাকে আবার জাগিয়ে তোলা। প্রতিটি প্রাণ অমূল্য, প্রতিটি দুর্ঘটনা অপ্রয়োজনীয়। রওশনের মায়ের মতো চোখের জল যেন আর কোনো মাকে ফেলতে না হয়। সড়কগুলো যেন আর না হয় কবরস্থান। এটি শুধু একটি স্বপ্ন নয়, অধিকার। আসুন,সবাই মিলে গড়ে তুলি এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে সড়ক দুর্ঘটনা হবে অতীতে ঘটে যাওয়া করুণ ইতিহাস, যা বর্তমানে নেই।

মো. রাইসুল ইসলাম: স্বেচ্ছাসেবক, চট্টগ্রাম 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ অস্ত্রধারী ৩ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার 
  • সড়কে রক্তের দাগ
  • রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুরের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা