খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রতীকী গদিতে আগুন জ্বালানোর কর্মসূচি পালন করেছেন। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শনিবার বিকেল সোয়া ছয়টার দিকে ভাস্কর্য দুর্বার বাংলার পাদদেশে ‘ভিসির গদি’ লেখা একটা চেয়ারে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেন তাঁরা। প্রতীকী চেয়ারের পেছন দিকে শিক্ষার্থীরা ‘ইন্টেরিম কী অন্ধ?’ এবং ‘এক দফা, স্টেপ ডাউন মাছুদ, মেক কুয়েট ফ্রি এগেইন’ লেখা ব্যানার ধরে রাখেন।

এর আগে শিক্ষার্থীরা কুয়েটের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। এরপর তাঁরা দুর্বার বাংলার পাদদেশে এসে উপাচার্যবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। একসময় সেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শুয়ে পড়েন।

প্রতীকী গদি জ্বালানোর পর প্রেস বিফিংয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা গত শুক্রবার দেখলাম ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির ভাই আমাদের বহিষ্কার ইস্যুতে ভিডিও বার্তা দিলেন। যেই বার্তায় তিনি জানান, ছাত্রদলের সাতজন বহিষ্কার হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, যে তালিকা অফশিয়ালি রিলিজ করা হয় নাই, কোনো শিক্ষার্থী–শিক্ষক পায় নাই, তা কীভাবে নাসির ভাইয়ের কাছে গেল। আমরা তার জবাব চাই। ছাত্রদলের ৭ জন হলে বাকি ৩০ জন কী সাধারণ শিক্ষার্থী? তাঁদের কেন বহিষ্কার করা হলো?’

শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সাইবার বুলিং এবং শিক্ষক লাঞ্ছনা তদন্ত করার জন্য। সেই কমিটিকে বর্জন ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা হলে আসার পরেও হলের ওয়াইফাই চালু করে দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন হলে এখনো পানি ও খাওয়ার পানির সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, অনেকেই অভিযোগ তুলছেন, তাঁরা মব কালচার করছেন। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, তাঁদের উপাচার্য নিরাপত্তা দিতে পারেননি। দেড় শতাধিক ছাত্রের রক্তের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেননি। বরং শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছেন। শিক্ষার্থীদের নামে মামলার মদদ যুগিয়েছেন। বহিষ্কারের তালিকা ছাত্রদলের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। উপাচার্যের পদত্যাগ চাওয়া শিক্ষার্থীদের নায্য দাবি বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।

চলমান আন্দোলন কোনো দলের না, এটা সব শিক্ষার্থীর আন্দোলন উল্লেখ করে তাঁরা জানান, বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে, এই আন্দোলন শিবিরের। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর ছিল। সুতরাং আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের ট্যাগ না দিয়ে দাবির যৌক্তিকতার প্রতি তাকানোর আহ্বান জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ‘আমরা লজ্জিত ইন্টারিমের প্রতি। আমাদের দিকে আপনারা দুই মাসেও তাকালেন না। আপনারা আমাদের জুলাই–আগস্টের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। দুই মাসেও একজন গ্রেপ্তার হয়নি।’

এর আগে শুক্রবার বিকেলে ‘শোকের গ্রাফিতি এক দফার ডাক’ শিরোনামে কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে দেয়ালে দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিতে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি করা হয়।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে আন্দোলন আবারও দানা বাঁধতে থাকে। গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।

এর মধ্যে গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা কুয়েটের ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোতে অবস্থান নেন। গত বুধবার দুপুরে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মিছিলের পরপরই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিপক্ষে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক দফার পক্ষে ক্যাম্পাসে মশালমিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে কর্মচারী সমিতির উদ্যোগে উপাচার্যের সমর্থনে মানববন্ধন করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র আম দ র ক র কর কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ভৈরবে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩০

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সালিশ বৈঠক চলাকালে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। তারা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার ভবানীপুর-সুলেমানপুর এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। 

ভৈরব থানার ওসি খন্দকার ফুয়াদ রুহানী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‍“একজন নিহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

আরো পড়ুন:

সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে নিহত ১

লক্ষ্মীপুরে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু

নিহত মিজান (৪১) সুলেমানপুর গ্রামের ময়দুর মুন্সি বাড়ির রবিউল্লাহ মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় ডেকোরেটার কর্মী ছিলেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে মৌটুপী গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। এ ঘটনায় ভবানীপুর গ্রামের বধুর গোষ্ঠীর নেতা বাদশা মিয়ার সঙ্গে সুলেমানপুর গ্রামের ময়দর মুন্সি গোষ্ঠীর মিজান মিয়ার গত বুধবার রাতে কথা কাটাকটি হয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য আজ শুক্রবার সকালে সালিশ বৈঠক বসে। 

সালিশ চলাকালে বাদশা মিয়ার লোকজন মিজান মিয়ার ওপর হামলা চালায়। এসময় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে মিজানসহ অন্তত ৩১ জন আহত হন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মিজানকে মৃত ঘোষণা করেন।

ভৈরব থানার ওসি খন্দকার ফুয়াদ রুহানী বলেন, “গত মঙ্গলবার মৌটুপী গ্রামের সংঘর্ষের জেরে পার্শ্ববর্তী ভবানীপুর-সুলেমানপুর গ্রামের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন।”

তিনি আরো বলেন, “মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।” 

ঢাকা/রুমন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাকিস্তানে কেএফসিতে হামলা-সংঘর্ষে নিহত ১, গ্রেপ্তার ১৭৮
  • পাকিস্তানে কেএফসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিহত ১, গ্রেপ্তার ১৭৮
  • ‘আমি আওয়াজ দিয়ে মরতে চাই’
  • তৃতীয় দেশে অভিবাসী বিতাড়ন করার ট্রাম্পের পরিকল্পনা আটকে দিয়েছেন আদালত
  • অস্ত্রের মহড়া, কালোতালিকা, কাদা-ছোড়াছুড়ি, জনসংযোগের নামে বলিউডে যা হয়
  • গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোয় নৌকায় আগুন, ১৪৩ মরদেহ উদ্ধার
  • ফুটবলে তিন ছেলের কে কেমন, জানালেন মেসি
  • ‘কী সুন্দর তাই না, একজন শিক্ষকের এই পরিণতি’
  • ভৈরবে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩০