তিউনিসিয়ায় বিরোধী নেতাদের ৬৬ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড–ডয়চে ভেলে
Published: 19th, April 2025 GMT
জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগে বিরোধী দলের বিভিন্ন নেতাকে ১৩ থেকে ৬৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন তিউনিসিয়ার আদালত। এই বিচারপ্রক্রিয়াকে ‘প্রহসনমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আজ শনিবার জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বিরোধীদলীয় নেতা, ব্যবসায়ী এবং আইনজীবীদের ১৩ থেকে ৬৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত।
তবে বিরোধীরা বলছেন, অভিযোগগুলো বানোয়াট এবং এই বিচার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদের কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতীক।
মামলা সম্পর্কে যা জানা গেছেরাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা টিএপি অভিযুক্তদের বিভিন্ন মেয়াদে ১৩ থেকে ৬৬ বছরের কারাদণ্ডের খবর জানিয়েছে। বিচার বিভাগের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে টিএপি জানিয়েছে, এই দণ্ড তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে।
মোট ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর বিদেশে পালিয়ে গেছেন।
তিউনিসিয়ার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় হুমকি এবং একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকার’ দায়ে আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, আসামিরা দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং সাইয়েদকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছিলেন।
কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই প্রেসিডেন্টের কট্টর সমালোচক ছিলেন। এর মধ্যে প্রধান বিরোধী জোট জাতীয় স্যালভেশন ফ্রন্টের নেতা নেজিব চেব্বিও ছিলেন।
গতকাল শুক্রবার রায় ঘোষণার আগে চেব্বি সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলা প্রমাণ করে যে তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষ ‘বিরোধীদের অপরাধী’ প্রমাণ করতে চায়।
কারাদণ্ড পাওয়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন নেজিব চেব্বির ভাই মধ্যপন্থী রিপাবলিকান পার্টির নেতা ইসাম চেব্বি, মধ্য-বামপন্থী ডেমোক্রেটিক কারেন্ট পার্টির প্রধান গাজি চউয়াচি এবং ইসলামিক গণতান্ত্রিক দল এননাহদার আবদেল হামিদ জেলাসি। সাবেক গোয়েন্দা প্রধান কামেল গুইজানও আসামিদের মধ্যে একজন।
সাজা ঘোষণার শুনানির আগে আসামিপক্ষের আইনজীবী আহমেদ সোয়াব এই বিচারকে ‘প্রহসন’ বলে বর্ণনা করেন।
মার্চ মাসে শুরু হওয়া এই বিচার দুবার স্থগিত করা হয়েছিল। সাংবাদিক এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মামলার শুনানিতে উপস্থিত হতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রেসিডেন্ট কাইস যা করেছেন
আরব বসন্তের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়া একমাত্র দেশ তিউনিসিয়ায় কাইস সাইয়েদ ২০১৯ সালে একটি জনপ্রিয় দুর্নীতিবিরোধী জোট থেকে লড়াই করে নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছর পর তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে ব্যাপক ক্ষমতা দখল করেন এবং ডিক্রি জারির মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালনা শুরু করেন।
এর পর থেকে বিচারকদের বরখাস্ত করা এবং প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের গ্রেপ্তারের নানা ঘটনা ঘটেছে দেশটিতে।
গত বছর অক্টোবরে প্রথম দফার ভোটে কাইস সাইয়েদ পুনর্নির্বাচিত হন। পর্যবেক্ষকেরা রেকর্ড কম ভোটার উপস্থিতির এই নির্বাচনকে ‘প্রহসনমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বারবার সাইয়েদের শাসন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, তিউনিসিয়ায় ‘সমালোচকদের ভয় দেখানো, শাস্তি দেওয়া এবং চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্য যথেচ্ছভাবে আটক এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার পরিমাণ বেড়েছে।’
সাইয়েদ তাঁর বিরুদ্ধে ‘স্বৈরশাসক’ হয়ে ওঠার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁর দাবি, তিনি রাজনৈতিক অভিজাতদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষা, প্রস্তুতিতে যা যা করতে পারেন
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির (এনরোলমেন্ট) এমসিকিউ পরীক্ষা ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। এই পরীক্ষায় প্রার্থীদের জুতসই প্রস্তুতির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
এমসিকিউ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সাকল্যে সময় আছে প্রায় দুই সপ্তাহের মতো। এর মধ্যে সাত বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেক পরীক্ষার্থী শেষ সময়ে এসে অগোছালো ও পরিকল্পনাবিহীন পড়াশোনা করেন। কার্যত বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির এমসিকিউ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার হার বেশি। তবে বুদ্ধিদীপ্ত ও কৌশলী প্রস্তুতি আপনাকে অনেকের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।
সাধারণত আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষা তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে বহুনির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১০০ নম্বরে। প্রশ্ন আসে ৭টি বিষয়ে। ১০০ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০ নম্বর পেলেই আপনি উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় বসতে পারবেন। তবে নেগেটিভ নম্বর থাকায় পরীক্ষার্থীদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
শুরুতেই তামাদি আইন ১৯০৮, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ এবং বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২-এর মতো ছোট আইনগুলো পড়ে ফেলতে হবে। সিলেবাসের সাত বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে সহজ এই আইনগুলো। তবে সহজ হলেও গুরুত্ব অনেক। তিনটি আইন থেকে মোট ২৫ নম্বরের প্রশ্ন আসবে। পরীক্ষার্থীরা চাইলে এসব বিষয় থেকে পুরো নম্বরই পাওয়া সম্ভব। অর্থাৎ পাস মার্কের অর্ধেক নম্বর। যখন দেখবেন পাস মার্কের অর্ধেক নম্বর হাতের তালুর মধ্যে, তখন আত্মবিশ্বাস বহুগুণ বেড়ে যাবে। বাকি বিষয়গুলো দুশ্চিন্তামুক্তভাবেই প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
তামাদি, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ও বার কাউন্সিল অর্ডারতামাদি আইন ১৯০৮ একটি পদ্ধতিগত আইন। আইনটি দেওয়ানি মোকদ্দমা এবং ফৌজদারি মামলার আপিলের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়। এতে ৩২টি ধারা ও ১৮৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। ধারাগুলোর মধ্যে তামাদি মেয়াদ শেষে মামলা দায়ের, আদালত বন্ধ থাকা অবস্থায় তামাদির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে করণীয়, বিলম্ব মওকুফ, আইনগত অপারগতা, তামাদি গণনা, যেভাবে তামাদি মেয়াদের গণনা করতে হয়, এখতিয়ারবিহীন আদালতে মামলা দায়ের, কার্যধারা স্থগিত থাকার সময় বাদ দেওয়ার নিয়ম, প্রতারণার ফলাফল, লিখিত প্রাপ্তিস্বীকারের ফলাফল, দেনা পরিশোধের ফলাফল, অবিরাম চুক্তিভঙ্গ, সুখাধিকার অর্জন ও সম্পত্তির অধিকার বিলুপ্তিসংক্রান্ত টপিকগুলো ভালো করে পড়তে হবে। এ ছাড়া ৯১, ৯২, ১০৩, ১১৩, ১১৪, ১২০, ১৪২, ১৫০, ১৫৭, ১৬৯, ১৮২ অনুচ্ছেদগুলো শেষবারের মতো চোখ বুলিয়ে যেতে হবে। ঘুরেফিরে এসব ধারা ও অনুচ্ছেদ থেকেই প্রশ্ন আসে।
আরও পড়ুনডিএনসিসিতে ১৫৮ পদে নিয়োগে আবার বিজ্ঞপ্তি২২ ঘণ্টা আগেসুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭–কে ন্যায়পরায়ণতা আইনও বলা হয়। মূলত এটি প্রতিকারমূলক বা তত্ত্বগত আইন। মাত্র ৫৭টি ধারা নিয়ে গঠিত আইনটি। এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার, স্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার, অস্থাবর সম্পত্তি দখল পুনরুদ্ধার, যেসব চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যেতে পারে, যেসব চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যায় না, কতিপয় ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ মঞ্জুরের ক্ষমতা, অরেজিস্ট্রিকৃত চুক্তিপত্র কার্যকরযোগ্য নয়, সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনে ডিক্রি প্রদান; যাদের পক্ষে চুক্তি কার্যকর করা যায়, যাদের পক্ষে চুক্তি কার্যকর করা যায় না; দলিল সংশোধন, চুক্তি রদ, দলিল বাতিল, ঘোষণামূলক মামলা, চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা, কখন কখন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং নেতিবাচক চুক্তি পালন করার জন্য নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত ধারাগুলো পড়লেই হবে।
ছবি: প্রথম আলো/এআই জেনারেটেড