গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় মনট্রিমস কারখানায় শ্রমিকের আত্মহত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 

শনিবার সকালে কারখানার সামনে অব্যাহতির নোটিশ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কারখানার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কারখানাতেই শ্রমিক মো.

ইদ্রিস আলী আত্মহত্যা করেন। তিনি ওই দিন রাতের পালার কাজে দায়িত্বরত অবস্থায় আত্মহত্যা করেন। 

ইদ্রিস আলী উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় সপরিবার ভাড়া বাসায় থেকে মনট্রিমস লিমিটেড কারখানার কার্টন সেকশনে কাজ করতেন।

কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকেরা বলেন, ইদ্রিস আলী বৃহস্পতিবার রাতে তার ফেসবুক আইডিতে কারখানায় অনিয়মের অভিযোগ ও সহকারী ব্যবস্থাপক (প্ল্যানিং) কামরুল ইসলাম ও উপব্যবস্থাপক (কার্টন সেকশন) হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তিনি ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর কয়েক মিনিট পরই বিষাক্ত কেমিক্যাল পান করে আত্মহত্যা করেন। বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়ে ওই দুই কর্মকর্তাকে রাতেই চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়। এ ছাড়া সকালে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে একটি নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়। যাতে লেখা আছে, ‘আমাদের সহকর্মী মো. ইদ্রিস আলীর অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।’

তারা আরও বলেন, এ ঘটনায় আরেকটি অফিস আদেশ দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাতে লেখা আছে, ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের স্বার্থে কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক (প্লানিং) কামরুল ইসলাম ও
উপ-ব্যবস্থাপক (কার্টন সেকশন) হারুন অর রশিদকে চাকরি হতে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’

কারখানার শ্রমিক শাহাদত হোসেন বলেন, আমাদের সহকর্মীর আত্মহত্যার জন্য যে দুই কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে, তাদের যেহেতু চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে, তাই আমরা আন্দোলন না করে কাজে যোগ দিয়েছি। আশা করি, তার পরিবার এর সঠিক বিচার পাবে।

মনট্রিমস লিমিটেড কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) গোলাম সারওয়ার বলেন, ওই দুই কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে এবং শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবু তালেব বলেন, কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিবেশ শান্ত আছে।

কালিয়াকৈর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. যোবায়ের বলেন, নিহতের স্বজনরা তাদের গ্রামের বাড়িতে আছেন। তারা ফিরলে এ ঘটনায় মামলা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ ই কর মকর ত ক ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

আইফেল টাওয়ারে ‘শান্তির বার্তা’

ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্যারিসের বিখ্যাত আইফেল টাওয়ারে আলো দিয়ে লেখা হলো শান্তির বার্তা– ‘পিস’। এই প্রতীকী বার্তাটি গাজার জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ ও বিশ্বব্যাপী শান্তির আহ্বানের একটি শক্তিশালী প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।

বৃহস্পতিবার আনাদোলু এজেন্সির প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের সামনে হাজারো মানুষ একত্রিত হয়েছেন। আস্তে আস্তে সন্ধ্যার আবরণ যখন শহরের ওপর নেমে আসছিল, তখনই টাওয়ারের গায়ে উজ্জ্বল আলোয় ভেসে ওঠে– ‘গাজাবাসীর জন্য শান্তির বার্তা’।

মুহূর্তটি উপস্থিত দর্শকের মধ্যে আবেগ ও সংবেদনশীলতার এক বিশেষ পরিবেশ তৈরি করে। দর্শকের অনেকেই হাতে ধরে রেখেছিলেন প্ল্যাকার্ড, যাতে লেখা ছিল– ‘নিরাপত্তা চাই’, ‘গণহত্যা বন্ধ হোক’, ‘ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা চাই’– জাতীয় বিভিন্ন মানবিক ও প্রতিবাদী বার্তা।

এই আলোক বার্তাটি এমন একসময়ে প্রকাশ পায়, যখন গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বহু ফিলিস্তিনি, বিশেষত নারী ও শিশু প্রাণ হারাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নানা স্তর থেকে যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হলেও বাস্তব পরিস্থিতির তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

আইফেল টাওয়ার, যা ফ্রান্সের গর্ব ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতীক, সেই স্থানে এই ধরনের বার্তা প্রদর্শন বিশ্ববাসীর কাছে শান্তির একটি জোরালো আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। শান্তিকামী মানবাধিকারকর্মীদের সমর্থনে এ আয়োজন করা হয়। বুধবারের এই আয়োজনে ফ্রান্সসহ বিশ্বের বহু মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে, যারা গাজায় শান্তি, ন্যায়বিচার ও মানবিক সহায়তার স্বপ্ন দেখেন।

এ সময় ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শত শত সাংবাদিক। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সহকর্মীদের নিহতের প্রতিবাদও জানান তারা। একই সঙ্গে গাজায় সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিও জানান বিক্ষোভকারীরা। নিহত সহকর্মীর ছবি বুকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন তারা। সহকর্মী হত্যার বিচারের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে গর্জে ওঠেন বিক্ষোভকারীরা। একই সঙ্গে গাজার খবর বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার অধিকার চান তারা। গাজায় শিগগিরই গণহত্যা বন্ধের দাবিও তোলেন আন্দোলনরত সাংবাদিকরা।

বিক্ষোভকারী সাংবাদিকদের মধ্যে একজন বলেন, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা যেন গাজায় নিরাপদে অবস্থান করতে পারেন, সেই দাবি জানাচ্ছি। গাজার খবর গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চাই। আরেকজন বলেন, গাজায় প্রায় প্রতিদিনই সাংবাদিকদের হত্যা করছে ইসরায়েল। সহকর্মীদের এই মর্মান্তিক মৃত্যু দেখে ঘরে বসে থাকা সম্ভব নয়।

আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই গাজার সংবাদমাধ্যমগুলো বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরায়েলি প্রশাসন। চিত্র সাংবাদিক, রিপোর্টারসহ এ পর্যন্ত দুই শতাধিক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন আইডিএফের হামলায়। যাদের বেশির ভাগই ফিলিস্তিনের সাংবাদিক। দিনশেষে রাতেও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আইফেল টাওয়ারে অবস্থান করেন কয়েকশ বিক্ষোভকারী। এ সময় আবেগঘন এক মুহূর্ত তৈরি হয় আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে। আনাদোলু এজেন্সি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইফেল টাওয়ারে ‘শান্তির বার্তা’
  • দর্শনা চেকপোস্টের কক্ষে ঝুলছিল পুলিশ সদস্যের লাশ
  • দর্শনা চেকপোস্টে নিজ ঘরে ঝুলছিল পুলিশ সদস্যের মরদেহ