ফেসবুক দেখে জানলেন তিনি খুন হয়েছেন, এরপর যা ঘটল
Published: 19th, April 2025 GMT
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের আজিমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন কয়েক দিন আগে হঠাৎ জানতে পারলেন, ফেসবুকে তাঁকে নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে একটা আইডি থেকে। বলা হচ্ছে, তিনি খুন হয়েছেন। ওমর ফারুক নামের এক ব্যক্তি পোস্ট দিয়ে এমন দাবি করায় তিনি থানায় গিয়ে পুলিশকে জানান। পরে বাড়ি ফিরে দেখেন ওমর ফারুক তাঁর বাড়িতে অবস্থান করছেন। এরপর পুলিশকে জানালে পোস্টদাতাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানা গেছে, দুই দিন ধরে নিজের আইডি থেকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক (৩৫) এমন পোস্ট দিচ্ছিলেন। গতকাল শুক্রবার শাহাদাত হোসেন পোস্টদাতা ওমর ফারুককে ধরে পুলিশে দেন। থানায় ইতিমধ্যে ফারুকের বিরুদ্ধে ছয়টি প্রতারণার মামলা করেছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ী।
ওই পোস্টে ওমর ফারুক লেখেন, ‘আজিমপুরে হত্যাকাণ্ড! বিএনপি নেতা ফারুক আজিমপুরের শাহাদাত হোসেনকে ছুরিকাহত করে হত্যা করে পালিয়ে যান। তাঁকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।’
ওমর ফারুক দেশি একটি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করতেন বলে জানা গেছে। সংস্থাটির স্থানীয় একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সাল থেকে তিনি ওই সংস্থায় কাজ করছিলেন। তাঁর গতিবিধি ভালো না লাগায় গত বছরের নভেম্বরে তাঁকে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করা হয়েছে। ফারুকের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জানিয়েছেন, বছরখানেক আগে থেকে তিনি অনলাইন জুয়ায় (বেটিং সাইট) জড়িয়ে পড়েন। এর পর থেকেই ফারুক নানা ছদ্মবেশ ধারণের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নিতে শুরু করেন।
ভুক্তভোগী শাহাদাত হোসেন জানান, ফারুক তাঁর পরিচিত। তাঁর নামে কাল্পনিক পোস্ট দেওয়ার বিষয়টি তিনি ফেসবুকে দেখেছেন। গতকাল বিষয়টি তিনি থানায় জানিয়ে বাসায় ফিরে দেখতে পান, ফারুক তাঁর ঘরে অবস্থান করছেন। পরে পুলিশকে জানালে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফারুক দাবি করেন, তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে কেউ এই পোস্ট দিয়েছে। তিনি এর সঙ্গে জড়িত নন।
এখন পর্যন্ত ফারুকের বিরুদ্ধে ছয়টি প্রতারণার মামলা হয়েছে বলে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম সফিকুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ফারুক অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। আগের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘ফেসবুক গল্পের’ উৎস খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এল আসল ঘটনা
রাজশাহীর বাঘায় ট্রেনের নিচে পড়ে এক পেঁয়াজচাষি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন, এমন একটি ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘হৃদয়বিদারক গল্প’ ছড়িয়ে পড়ে। যাঁরা এটি ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন, তাঁদের সবাই ‘মূল গল্পটা’ একই রেখেছেন, শুধু ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা যুক্ত করে দিয়েছেন।
ফেসবুকের পোস্টে লেখা ছিল, ওই বৃদ্ধের স্ত্রী আট মাস আগে মারা গেছেন। দুই মেয়ে তাঁদের বাড়িতে কিছুদিন রেখে বের করে দিয়েছেন। দুই ছেলেও বাবার জিনিসপত্র ফেলে দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে এ ঘটনা পড়তে পড়তে মাথার মধ্যে একটা প্রশ্ন জাগে, একটি পরিবারের সবাই কি প্রায় ৭০ বছর বয়সী একজন মানুষকে এভাবে ত্যাগ করতে পারেন?
ফেসবুকে ঘটনাটি পড়ে সবাই বৃদ্ধের সন্তানদের তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে কমেন্ট করছিলেন। আমার স্ত্রী দুলারী খাতুনও ঘটনাটি পড়তে পড়তে খুব ‘আহা, আহা’ করছিলেন। কিন্তু আমার এমন মনে হচ্ছিল না। মনে আসে, কেউ ফেসবুকে ভিউ বাড়ানোর জন্য কাজটা করেনি তো? সিদ্ধান্ত নিলাম, সকালে উঠে ওই বৃদ্ধের বাড়িতে যাব।
এরপর ঘটনাস্থলে গেলাম। একটি শোকাহত পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য স্থানীয় পরিচিত কাউকে পেলে সুবিধা হয়। এ জন্য স্থানীয় সাংবাদিক আমার ঘনিষ্ঠ গোলাম তোফাজ্জল কবিরকে ডেকে নিলাম। মৃত ওই বৃদ্ধের নাম মীর রুহুল আমিন। তাঁর ভাতিজা মোফাক্কর হোসেনের সঙ্গে গোলাম তোফাজ্জলের ঘনিষ্ঠতা আছে। তিনি একটি জানাজায় ছিলেন। একটু সময় নিলেন। দুপুর গড়িয়ে গেল। দুজন বাঘা উপজেলার মাঝপাড়ার বাউসায় তাঁদের বাড়িতে যাই।
আরও পড়ুননেটিজেনরা ‘ধুয়ে দিচ্ছে’ পরিবারকে, বাস্তবতা ভিন্ন২০ ঘণ্টা আগেবাড়িতে গিয়ে পঞ্চাশোর্ধ এক নারীকে পাই। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া মীর রুহুল আমিনের স্ত্রী। অথচ ফেসবুকে লেখা হয়েছে, তাঁর স্ত্রী আট মাস আগে মারা গেছেন। এরপর তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, ছেলে-মেয়ে কয়জন? মরিয়ম বেগম বললেন, তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। ২০-২২ বছর আগে মেয়ের বিয়ে হয়েছে ঈশ্বরদীতে, সেখানেই থাকেন। আর তাঁর ছেলে ঢাকায় একটি চাকরি করেন। সেখানে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। বাড়িতে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজন থাকতেন।
এরপর আর বুঝতে বাকি থাকে না যে দুই সন্তানের জিনিসপত্র ফেলে দেওয়া, দরজা বন্ধ করে বাবাকে বাইরে রাখা, চলে যেতে বলা—ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ঘটনাগুলোর সত্যতা নেই।
মরিয়ম বেগম বলেন, তাঁদের কোনো অশান্তি নেই। ঘটনার দিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছেন। সকালে খেয়ে গেছেন। বেলা তিনটার আগে-পরে তাঁর সঙ্গে দুবার ফোনে কথা হয়েছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মাঝপাড়া বাউসা গ্রামে মীর রুহুল আমিনের বাড়ি