হাওরে অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, হাওরে ‘অল ওয়েদার’ সড়ক নির্মাণ করাটা ছিল অন্যায়। এটার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

‘সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯: হাওর অঞ্চলে বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ফরিদা আখতার এ কথা বলেন। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এ সভার আয়োজন করে।

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘মিঠামইনে যে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, সেটাকে বলা হচ্ছে অল ওয়েদার সড়ক। কারণটা কী? পরে জানলাম, সব ঋতুতে এই সড়ক সহনশীল। অথচ এই রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে ওই এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। অনেক টাকা খরচ করে সড়কটা করা অন্যায় হয়েছে। আমি মনে করি, এই সড়ক নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচার হওয়া দরকার।’

বাঁধ দেওয়াটাকেও হাওরের জন্য সমস্যা বলে চিহ্নিত করেন ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘আরও একটা জায়গায় আমরা আটকে যাই, সেটা হলো বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড কথায় কথায় বাঁধ দিয়ে দেয়। এখানে কৃষির সঙ্গে একটা কনফ্লিক্ট (সাংঘর্ষিক)।’

স্থানীয় জাতের ধানের পরিবর্তে আধুনিক চাষাবাদের প্রচলন হওয়ার কারণে হাওরে আগের মতো পানি, মাছ আর ধান হচ্ছে না জানিয়ে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, কৃষিতে আগে হাওরে স্থানীয় জাতের ধান হতো। তাতে এত কীটনাশক, সার প্রয়োজন হতো না। এখন ওখানে করা হচ্ছে আধুনিক জাতের চাষ। আধুনিক জাতের চাষ করা মানে হচ্ছে কীটনাশক, সার দেওয়া। এগুলোকে বিপজ্জনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসবের কারণে ধান ও মাছ আগের মতো অত সহজভাবে হচ্ছে না।

হাওরে ইজারা প্রথা বন্ধ করার ওপর জোর দিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, কোনো হাওরে ইজারা থাকা উচিত নয়। ইজারা বন্ধ করতে হবে। এগুলো সেখানকার মানুষের অধিকার।

ধরার আহ্বায়ক রাশেদা কে চৌধুরী সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ইটনা-মিঠামইন সড়ক নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন বাংলাদেশে আর না হয়। প্রতিপত্তি, প্রভাব খাটিয়ে কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের অধিকার খর্ব করতে না পারে।

ইজারা প্রথা বাতিলে উপদেষ্টার প্রস্তাবে একমত প্রকাশ করে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, জলমহালগুলোর একটা হালনাগাদ তথ্য দরকার। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় হাওর অঞ্চলকে আনা জরুরি। রাষ্ট্রীয় সহায়তা খুব দরকার।

বাংলাদেশ রিসোর্চ সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজের (বারসিক) পরিচালক পাভেল পার্থ বলেন, মেঘালয় অঞ্চলে গহিন বন কেটে সাফ করে ফেলা হয়েছে। বড় বড় বাঁধ দেওয়া হয়েছে। অপরিকল্পিত খনি করা হয়েছে। উজানের এসব কর্মকাণ্ডের ফলে হাওরে পানির পরিমাণ কমে গেছে।

হাওর থেকে ইতিমধ্যে নানা প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার উদাহরণ তুলে ধরে বারসিকের পরিচালক বলেন, হিজলের পাতায় যে অনুজীব তৈরি হয়, সেটা মাছের খাবার। সে জন্য হাওরে জলাবন রক্ষা করতে হবে। তিনি হাওরকে যৌথ নদী কমিশনের অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারকে পরামর্শ দেন।

ধরার সদস্যসচিব শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কৃষিসচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার, শিক্ষক ও গবেষক জাকিয়া শিশির প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট সড়ক ন দরক র আখত র

এছাড়াও পড়ুন:

রুক্ষ-শুষ্ক চা বাগানে অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি

টানা তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত শ্রীমঙ্গলসহ মৌলভীবাজার উপজেলাগুলোর চা বাগানগুলো অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিজেছে। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির স্পর্শে নির্মল সবুজের দেখা মিলেছে সেখানে। প্রথম দফা বৃষ্টির পরেই চা গাছগুলোতে নতুন কুঁড়ি উঁকি দিতে শুরু করেছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রচণ্ড তাপে ঝলসে গিয়েছিল বাগানের অধিকাংশ চা গাছ। অনেক স্থানে শুরু হয়েছিল লাল রোগের প্রাদুর্ভাব। চা উৎপাদন শুরুর মৌসুমে মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানে কমে যায় উৎপাদনের গতি। চলতি সপ্তাহ ধরে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। বাগান রক্ষায় কৃত্রিম সেচের প্রয়োজন নেই। চলতি বছরে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ