আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সরকারি অফিসে জনবল নিয়োগপ্রক্রিয়াটি অমানবিক ও অন্যায্য বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, একই প্রতিষ্ঠানে দুই ধরনের নিয়োগ প্রথা চলতে পারে না।

জোনায়েদ সাকি আজ শনিবার রাজধানীর হাতিরপুলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। ‘সরকার কর্তৃক ঘোষিত আউটসোর্সিং নীতিমালা ও দৈনিকভিত্তিক সাময়িক কর্মচারী নীতিমালা ২০২৫’ বিষয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরিতে যোগদান, বেতনসহ বিভিন্ন ভাতা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করাসহ নানা বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানান জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাচ্ছেন না, অতিদ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদার বা প্রতিষ্ঠান যাঁদের চাকরিচ্যুত করেছে, তাঁদের পুনর্বহাল করতে হবে। জোনায়েদ সাকি চাকরি পুনর্বহাল ও বকেয়া বেতনের পরিশোধের লক্ষ্যে উচ্চ আদালতের রায়ের দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

দৈনিক মজুরিভিত্তিক নীতিমালা ২০২৫-এ দৈনিক মজুরিতে নিয়োগ প্রাপ্তদের উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা ও ৩০ কর্মদিবসের হাজিরা দেওয়ারও দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আউটসোর্সিং, দৈনিক মজুরিভিত্তিক ও বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়াদের দাবিগুলো অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, অবিলম্বে দাবিগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নিলে লাখ লাখ কর্মচারী তাঁদের দাবি আদায়ে আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হবেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আউটস র স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্তি নিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একমত হতে পারছে না। এনবিআর বলছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর আইআরডি বিলুপ্ত হবে। অন্যদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, আইআরডি বহাল থাকবে এবং তারাই রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করবে। 

রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে এনবিআর ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে গত ১৬ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এনবিআরকে বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর পর এনবিআর রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া তৈরি করেছে। এই অধ্যাদেশ আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হতে পারে। 

অধ্যাদেশের ১০ ধারায় বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে আইআরডি বিলুপ্ত হবে। রাজস্ব নীতি বিভাগে ন্যস্ত হবে আইআরডির জনবল। এ ছাড়া আইআরডির বিদ্যমান কার্যক্রম রাজস্ব নীতি বিভাগে অথবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অন্য কোনো বিভাগে যথাযথভাবে বিভাজন করবে সরকার। ১১ ধারায় বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নিজ নিজ বিভাগের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন, আদেশ, ব্যাখ্যা ইত্যাদি জারি করতে পারবে।

এদিকে গত ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সংস্কার কমিশনগুলোর বাছাই করা আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগ নির্ধারিত ছকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবে। এ জন্য দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলোর তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ সমকালকে বলেন, যে কাজগুলো রাজনৈতিক দলের মতামত ছাড়াই অল্প সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য তারা উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ পুনর্গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিবের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

আইআরডি সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান সমকালকে বলেন, নতুন অধ্যাদেশ নিয়ে কাজ চলছে। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রস্তাবটি কোন দিক থেকে কীভাবে এসেছে, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। দুই ধরনের প্রস্তাবের মধ্যে কোনটা বাস্তবায়ন হতে পারে– এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। 

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সমকালকে বলেন, দুটি প্রস্তাবেই উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গুরুত্বটা বেশি থাকে। তবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কার্যকরভাবে আলাদা হলে সে ক্ষেত্রে একদিকে এনবিআর রাজস্ব নীতি বাস্তবায়নে অধিকতর স্বাধীনতা ভোগ করবে; অন্যদিকে আইআরডি রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী তার স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে পারবে। ভারতে একদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগ এবং অন্যদিকে প্রত্যক্ষ কর বোর্ড ও পরোক্ষ কর বোর্ড এ কাজগুলো করে থাকে। স্বাধীনতা ও জবাবদিহি পরস্পরের পরিপূরক।

বিলুপ্ত হবে এনবিআর 

নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আদেশ ১৯৭২ (১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির মূল আদেশ (৭৬ নং) রহিত হবে এবং এর অধীন প্রতিষ্ঠিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত হবে। তবে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিদ্যমান জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ন্যস্ত হবে। ন্যস্ত করা জনবল থেকে প্রয়োজনীয় জনবল যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাজস্ব নীতি বিভাগে পদায়ন করা যাবে। কোনো মামলা বা আইনগত কার্যধারা কোনো আদালতে চলমান থাকলে তা এমনভাবে নিষ্পত্তি করতে হবে, যেন ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির মূল আদেশ রহিত হয়নি এবং আইআরডি বিলুপ্ত হয়নি। আরোপিত কোনো শুল্ক, কর, সারচার্জ, ফি বা অন্য কোনো পাওনা এই অধ্যাদেশ জারির অব্যবহিত পূর্বে অনাদায়ী থাকলে বা কোনো বিষয় অনিষ্পন্ন থাকলে আগের অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে নিষ্পন্ন করতে হবে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ 

নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে। সরকার এ দুই বিভাগের জন্য যথাযথ সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করবে। রাজস্ব নীতি বিভাগের বিভিন্ন পদ আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, কাস্টমস, অর্থনীতি, ব্যবসা প্রশাসন, গবেষণা ও পরিসংখ্যান, প্রশাসন, নিরীক্ষা ও হিসাব এবং আইনসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের থেকে পূরণযোগ্য হবে। কাস্টমস, এক্সাইজ ও মূল্য সংযোজন কর আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনাল হবে রাজস্ব নীতি বিভাগের সংযুক্ত দপ্তর। 

রাজস্ব নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে পরামর্শক কমিটি

সরকার রাজস্ব নীতি প্রণয়নে রাজস্ব নীতি বিভাগকে নিয়মিত পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করবে। অর্থনীতিবিদ, রাজস্ব বিশেষজ্ঞ, আইন বিশেষজ্ঞ, হিসাব ও নিরীক্ষা বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী সংগঠন ও পেশাজীবী প্রতিনিধি, ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রতিনিধিত্বে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হবে। 

শুধু প্রশাসনিক কাজ করতে পারবে প্রশাসন ক্যাডার

রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক অনুবিভাগে কাজ করতে পারবেন বিসিএস প্রশাসন, কর, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর্তৃক তপশিলে বর্ণিত আইন বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে নিয়োজিত পদে শুধু বিসিএস কর, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করবেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিকিৎসক ও শিক্ষক–সংকট মেটাতে এআই, হুমকিতে আরও কিছু পেশা
  • আরাকান আর্মিকে সম্পৃক্ত না করে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান সম্ভব নয়
  • বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জনবল বাড়াবে সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ছয় দাবি আদায়ে কারিগরি শিক্ষার্থীদের ‘কাফন মিছিল’ 
  • খুলনায় এসেনসিয়াল ড্রাগস`র ৪৫ জন চাকরিচ্যুত
  • নি‌য়োগ দুর্নীতি-অর্থ আত্মসাৎ: সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে দুদ‌কের হানা
  • আউটসোর্সিং-কর্মীদের কোনা এলাকায় কত বেতন, জানাল অর্থ মন্ত্রণালয়
  • রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি আজ
  • অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্তি নিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব