প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। শনিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হকের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন।

কমিশন সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার— এ তিন বিষয়ে সুপারিশ করেছে, যেখানে সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি জোরালো করার কথা বলা হয়েছে। নারীর অগ্রগতির জন্য আছে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও জাতীয় সংস্থাগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর সুপারিশও।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ কমিশন নিয়মিত বৈঠক করে ৪৩টি। পাশাপাশি নারী অধিকারকর্মী, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ৩৯টি পরামর্শ সভা হয়।

অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সঙ্গে ৯টি যৌথ সভাও হয়েছে তাদের। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খুলনা, শ্রীমঙ্গল, রংপুর ও ময়মনসিংহে এসব সভা হয়। কমিশন বিভিন্ন বিষয়ে ‘অভিজ্ঞ ব্যক্তি’ ও সংগঠনের পরামর্শও নিয়েছে।

কমিশন তাদের প্রতিবেদনে নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে বলেছে। সহিংসতামুক্ত সমাজ গঠনে নারী ও মেয়ে শিশুর সুরক্ষা, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে জনপরিসরে নারীর অংশগ্রহণ এবং জনপ্রশাসনে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ানোর কথাও এসেছে প্রতিবেদনে।

এছাড়া শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন, সব বয়সী নারীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ, অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও সম্পদের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা, শ্রম ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পদক্ষেপ এবং নারী শ্রমিকদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার প্রস্তাব এসেছে।

দারিদ্র্য কমাতে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ ও ইতিবাচক চিত্রায়ণ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি এবং দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নারীর অংশগ্রহণও কমিশনের সুপারিশের অন্তর্ভুক্ত।

এসব সুপারিশ প্রস্তুতের সময় সংবিধান ও আইন, বিদ্যমান নীতি, প্রতিষ্ঠান এবং কর্মসূচিগুলোকে বিবেচনায় নিয়েছে কমিশন।

সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত সময়সীমা দুটি ভাগ করা হয়েছে। একটি- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ, অন্যটি পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে।

অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৮ নভেম্বর ‘নারীপক্ষ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হককে প্রধান করে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বার্সার অবিশ্বাস্য জয়

লা লিগায় মৌসুমের শেষ ভাগে এসে বার্সেলোনার জন্য প্রতিটা ম্যাচই এখন বাঁচা-মরার। এখন শীর্ষে থাকলেও দুইয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে তাদের পয়েন্টের ব্যবধান মাত্র ৪। পয়েন্ট হারালেই লাগাম ছুটে যাবে হাত থেকে। এমন পরিস্থিতিতে আজ ঘরের মাঠেই সেল্তা ভিগোর বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক জয় পেয়েছে বার্সা।

এই ম্যাচে একপর্যায়ে ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় কাঁপছিল কাতালান ক্লাবটি। কিন্তু ৬ মিনিটের মধ্যে ২ গোল করে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরে হান্সি ফ্লিকের দল। এরপর যোগ করা সময়ে পেনাল্টি গোলে পাশার দান বদলে দেন রাফিনিয়া। ৩-১ গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচটি বার্সা জেতে ৪-৩ গোলে। আর এই জয়ে শিরোপা রেসের লাগমটা নিজেদের হাতেই রাখল বার্সা।

দুর্দান্ত এই জয়ের পর ৩২ ম্যাচে বার্সার পয়েন্ট ৭৩। এক ম্যাচ কম খেলা রিয়ালের পয়েন্ট ৬৬। আগামীকাল রাতে রিয়ালের প্রতিপক্ষ অ্যাথলেটিক বিলবাও। এই ম্যাচে জিতলে রিয়ালের পয়েন্ট হবে ৬৯। অর্থাৎ বার্সার সঙ্গে রিয়ালের ব্যবধানটা সেই চারেই থাকবে।

২০২৫ সালে প্রথমবারের মতো লামিনে ইয়ামালকে মাঠে বাইরে রেখে আজ মাঠে নেমেছিল বার্সেলোনা। ইয়ামালকে ছাড়াও অবশ্য বেশ আগ্রাসী ফুটবল খেলেছে বার্সা। বিপরীতে ছাড় দেয়নি সেল্তা ভিগোও। বার্সার আক্রমণের জবাব প্রতি-আক্রমণে দারুণভাবে দিয়েছে তারা। তবে ম্যাচের প্রথম গোলটা পেয়েছে বার্সাই।

ম্যাচের ১২ মিনিটে ইনিয়েগো মার্তিনেজের কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন ফেরান তোরেস। এই লিড অবশ্য ৩ মিনিট পরেই হারিয়ে ফেলে বার্সা। প্রতি আক্রমণে সতীর্থ পাবলো দুরানের কাছ থেকে বল পেয়ে গোল করেন ইগলেসিয়াস। ম্যাচে সমতা আসার পর দুই দলই এগিয়ে যাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠে।

তবে ৪৩ মিনিটে ‘ডাবল সেইভ’ করে বার্সাকে পিছিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচান গোলরক্ষক ভয়েচেক সেজনি। এতটা কাছাকাছি না গেলেও কিছু সুযোগ বার্সাও পেয়েছিল। কিন্তু সেসব সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি দলটি।

বিরতির পরও ৫০ মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিল সেল্তা। কিন্তু দুরিনের দারুণভাবে গড়া আক্রমণটি অল্পের গোলে রূপান্তরিত হয়নি। সে যাত্রায় না পারলেও গোলটা কিন্তু ঠিকই আদায় করে দেয় সেল্তা। ইয়োয়েল লাগোর লং বল ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং মিস করলে পেয়ে যান ইগলেসিয়াস। দারুণভাবে সেই বল নিয়ে বক্সে ঢুকে অসাধারণ ফিনিশিংয়ে গোল করেন এই সেল্তা স্ট্রাইকার।

৫৯ মিনিটে কাছাকাছি গিয়ে ব্যবধান বাড়াতে পারেনি সেল্তা। কিন্তু ৬২ মিনিটে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করে বার্সাকে বছরের প্রথম হার উপহার দেওয়ার মঞ্চটা তৈরি করে ফেলেন ইগলেসিয়াস। তবে ৬৪ মিনিটে দানি অলমো এক গোল শোধ করে বার্সাকে স্বপ্ন দেখান ম্যাচে ফেরার।

এর মধ্যে ৫৯ মিনিটে লামিনে ইয়ামাল মাঠে নামায় বার্সার খেলাতেও নতুনভাবে গতির সঞ্চার হয়। ৬৮ মিনিটে সেই ইয়ামালের সহায়তাতেই গোল করেন রাফিনিয়া। ৩-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার ৬ মিনিটের মধ্যে ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আসে শীর্ষে থাকা বার্সা।  

সমতা ফেরানোর পর বার্সার খেলায় ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। লিডের জন্য একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে তারা। অন্য দিকে সেল্তার লক্ষ্য ছিল প্রতি-আক্রমণ থেকে আরেকটি গোল আদায়ের। তব শেষ হাসিটা বার্সাই হেসেছে। যোগ করা সময়ে দানি অলমো বক্সের ভেতর ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় বার্সা। রাফিনিয়া নিজের দ্বিতীয় গোল করে নিশ্চিত করে বার্সার জয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ