চিকিৎসক ও শিক্ষক–সংকট মেটাতে এআই, হুমকিতে আরও কিছু পেশা
Published: 19th, April 2025 GMT
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে বিপ্লব ঘটাবে, এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তাঁর মতে, বিশ্বজুড়ে চিকিৎসক ও শিক্ষকের সংকট দূর করতে বড় ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে এআই। পাশাপাশি শ্রমনির্ভর আরও কিছু পেশাও এই প্রযুক্তির কারণে ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
সম্প্রতি ‘পিপল বাই ডব্লিউটিএফ’ নামের একটি পডকাস্টে গেটস বলেন, এআই এসে চিকিৎসাসংক্রান্ত বুদ্ধিমত্তা জোগাবে, তখন আর চিকিৎসকের ঘাটতি থাকবে না। তাঁর মতে, যেসব খাতে দক্ষ জনবলের অভাব প্রকট, সেসব জায়গায় এআই কার্যকর সমাধান হয়ে উঠতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসকের সংকট দিন দিন বাড়ছে। দেশটির আমেরিকান মেডিকেল কলেজের হিসাবে, ২০৩৬ সালের মধ্যে চিকিৎসকের ঘাটতি দাঁড়াতে পারে প্রায় ৮৬ হাজারে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, ভারত ও আফ্রিকার অনেক দেশও দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা খাতে জনবলের সংকটে ভুগছে। এই বাস্তবতায় ‘সুকি’, ‘জেফায়ার এআই’ ও ‘টেনার’–এর মতো এআইভিত্তিক স্টার্টআপগুলো বিপুল অর্থ বিনিয়োগ পাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান এমন সফটওয়্যার তৈরি করছে, যেগুলোর মাধ্যমে রোগনির্ণয়, ক্লিনিক্যাল ডকুমেন্টেশন, বিলিং কিংবা রোগী শনাক্তকরণের কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যাচ্ছে।
প্রযুক্তি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, কেবল স্বাস্থ্য ও ওষুধশিল্পেই জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত উৎপাদনশীলতা যোগ করতে পারে। শুধু চিকিৎসা নয়, এআইয়ের ব্যাপক প্রভাব পড়ছে শিক্ষা ক্ষেত্রেও। যুক্তরাষ্ট্রের কেএ–১২ পর্যায়ের ৮৬ শতাংশ পাবলিক স্কুল ২০২৩ সালে শিক্ষক নিয়োগে সমস্যা হয়েছে বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ স্কুলে শিক্ষকের সংকট রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের ডেভিড গেইম কলেজ পরীক্ষামূলকভাবে চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুল ব্যবহার শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ও গণিত শেখাতে ব্যবহার করা হচ্ছে এই প্রযুক্তি। যদিও শিক্ষার্থীদের এআই–নির্ভরতার সমস্যা ও অসদুপায় ব্যবহারের শঙ্কা রয়েছে। শিক্ষকেরা বলছেন, এটি পাঠদানে সময় সাশ্রয় করছে এবং শেখার অভিজ্ঞতাও উন্নত হচ্ছে।
বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ ছাড়া শারীরিক শ্রমনির্ভর পেশাগুলোর ক্ষেত্রেও এআই ও রোবট প্রযুক্তির প্রভাব বাড়ছে বলে জানিয়েছেন গেটস। তিনি বলেন, ‘গুদামে পণ্য ওঠানো, মেঝে পরিষ্কার কিংবা নির্মাণ সাইটে কাজ করার মতো শারীরিক শ্রমও এআই রোবটের মাধ্যমে করা সম্ভব। এসব কাজের জন্য রোবটকে মানুষের মতো দক্ষ “হাত” দরকার। আমরা এখন সেই পর্যায়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’ প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া ইতিমধ্যে এমন মানবাকৃতির রোবট তৈরির কাজ করছে, যেগুলো গুদাম ও নির্মাণশিল্পে বিভিন্ন শারীরিক কাজ করতে পারবে। এতে শ্রমঘণ্টা ও খরচ কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিল গেটস বলেন, ভবিষ্যতে এমন এক সময় আসতে পারে, যখন মানুষ সপ্তাহে মাত্র ১৫ ঘণ্টা কাজ করলেই চলবে। তিনি অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইন্সের ১৯৩০ সালের একটি ভবিষ্যদ্বাণীর কথা স্মরণ করিয়ে দেন, যেখানে বলা হয়েছিল, শিল্পায়ন ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে কর্মঘণ্টা কমে আসবে। তবে বাস্তবতা হলো, আজও অধিকাংশ মানুষ সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করছেন। তাঁর মতে, ‘এআই প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার আমাদের কাজ, সময় ও জীবনের ধরন নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। ফলে সামনে আমাদের কর্মসংস্কৃতি ও অবসরের সংজ্ঞাও হয়তো বদলে যাবে।’
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এবার শাটডাউনের হুঁশিয়ারি পটুয়াখালী মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসদের
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা এবার শাটডাউনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আজ শনিবার পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন থেকে এ হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
আন্দোলনের তৃতীয় দিনে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখে আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ৮০ জনের মতো ইন্টার্ন চিকিৎসক ও ৩০ জন নার্স অংশ নেন।
আরও পড়ুনচিকিৎসকের ওএসডির আদেশ বাতিলের দাবিতে সেবা বন্ধ করে মানববন্ধনে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা১৭ এপ্রিল ২০২৫এর আগে গতকাল শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনটি দাবি জানান ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। দাবিগুলো হলো হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও রোগীদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; চিকিৎসক শামীম আল আজাদকে ওএসডি করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালুর জন্য পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া।
১৪ এপ্রিল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) পুকুরে পানিতে ডুবে হুসাইন মোহাম্মদ আশিক নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। পরে এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি করে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই ১৭ এপ্রিল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক এ এস এম শামীম আল আজাদকে ওএসডি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেদিন থেকে সেবা বন্ধ রেখে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একজন বলেন, চিকিৎসক শামীম আল আজাদের ওএসডি আদেশ বাতিল এবং আশিকের মৃত্যুর পোস্টমর্টেমসহ সঠিক তদন্ত না হলে সেবা বন্ধের পাশাপাশি শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হবে।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাষ্য, কোনো রোগীর মৃত্যু হলে চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতালসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর হামলা হয়। এ ধরনের ঘটনায় তাঁরা শঙ্কিত। তাই চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি করছেন তাঁরা।
মানববন্ধনে বলা হয়, ২০ বছর আগের ২৫০ শয্যার হাসপাতাল এখন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নীত হলেও আগের জনবল কাঠামোই রয়েছে। তা ছাড়া রোগীর সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসক আছেন মাত্র ২০ জন। সীমিত জনবল ও সরঞ্জাম নিয়ে রোগীর চাপ সামাল দেওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। তার ওপর নিরাপত্তাহীনতা এবং দোষারোপের সংস্কৃতি চিকিৎসকদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। এসব জটিলতার নিরসন না হলে শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সেবা বন্ধ করে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আন্দোলনের বিষয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, সেবায় ফিরিয়ে নিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আগামীকাল স্বাস্থ্য বিভাগের একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা ও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে বসেন। আশা করা যায়, দ্রুতই বিষয়টির সমাধান হবে।
ইনটার্ন চিকিৎসকদের আন্দোলন অব্যাহত থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। আজ শনিবার কয়েকজন রোগী এ কথা বলেন। ৯ দিন ধরে মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মো. আচমত আলী (৪৫) বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা ওয়ার্ডে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে তাঁদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।