চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছে শাখা ছাত্রদল ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী। 

শুক্রবার ও শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক বিবৃতিতে অপহৃতদের মুক্তির দাবি জানায় সংগঠন দুটি।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ কর্তৃক চবির পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনা আমাদের গভীরভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন করেছে। ছাত্র জীবনের স্বাভাবিক অবকাশ ও উৎসব শেষে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরার পথে তাদের এভাবে অপহরণ নিঃসন্দেহে একটি ন্যাক্কারজনক ও অমানবিক ঘটনা। এটি শুধু পাহাড়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে নয়, সাধারণ মানুষের জীবনযাপন নিয়েও বড় প্রশ্ন তৈরি করছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, শাখা ছাত্রদল এই সন্ত্রাসী ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে। আমরা অবিলম্বে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর সুস্থ ও নিরাপদ মুক্তির দাবি করছে। একইসঙ্গে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, পাহাড়ে সক্রিয় সব সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।

চবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “অপহরণকৃত শিক্ষার্থীদের দ্রুত মুক্তি কামনা করছি। পাশাপাশি পাহাড়ে সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।”

শনিবার (১৯ এপ্রিল) শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সদস্য সাইদ্যুজামান রেদুয়ান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও অপহৃতদের এখনো উদ্ধার করতে না পারা সারাদেশের জন্য উদ্বেগজনক ও শঙ্কার বিষয়। চবির এ পাঁচজন শিক্ষার্থী ‘জেএসএস পিসিপি’র সদস্য হওয়ার কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ‘ইউপিডিএফ’ তাদের অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ইস্যুতে ইউপিডিএফ এর কাছ থেকে আমরা স্পষ্ট বার্তার আহ্বান জানাই। অবিলম্বে অপহৃতদের অক্ষত মুক্তি ও রাষ্ট্রের কাছে অপহরণকারীদের শাস্তির দাবি জানায় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, পাহাড়ে সুদীর্ঘ সময়ের নিপীড়নের ইতিহাস পাহাড়ের সাধারণ মানুষের জীবন ও সেখানকার রাজনৈতিক বাস্তবতাকে রীতিমতো শূলবিদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সুদীর্ঘকাল ধরে পাহাড়ে বিভাজনের রাজনীতির মাধ্যমে মেধাবী ও সাংগঠনিক মননকে হত্যা এবং দমনপীড়নের ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্র ও তার সেনাবাহিনী। চবির পাঁচজন শিক্ষার্থীর অপহরণকেও রাষ্ট্রের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুলস’ রাজনীতির পরম্পরাই মনে করে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী।

এর আগে, রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বিজু উৎসব উদযাপন শেষে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে চবির পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়। একইসঙ্গে তাদের বহনকারী গাড়ির চালককেও অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফন্টের (ইউপিডিএফ-প্রসীত গ্রুপ) নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।

অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- চারুকলা বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, একই বিভাগের অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের রিশন চাকমা, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল র জন ত অপহ ত

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানদের অপেক্ষায় দিন কাটছে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের

অপহরণের তিন দিন পার হয়ে গেলেও খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী এখনো উদ্ধার হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁদের পরিবার ও জেএসএস–সন্তু লারমা–সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সদস্যরা।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপুণ ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন দিন ধরে প্রশাসনের উদ্ধার তৎপরতায় আমরা হতাশ। এভাবে চেষ্টা করা হলে অপহৃত ব্যক্তিরা উদ্ধার হবে না। অপহরণকারী দল ইউপিডিএফের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মনে শুভবুদ্ধি উদয় হোক এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাঁচ শিক্ষার্থীকে অক্ষত অবস্থায় মুক্তি দিক তারা।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপহৃত এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টা পার হলেও এখন পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে তাদের সঙ্গে কী করা হচ্ছে, কোথায়, কীভাবে রাখা হচ্ছে, আমরা এখনো জানি না। প্রশাসনও কোনো খোঁজ দিতে পারছে না। যেখানে প্রশাসন খোঁজ দিতে পারছে না, সেখানে আমরা যাব কার কাছে। আমাদের একটাই প্রার্থনা, সন্তানেরা যেন সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসে।’

অপহরণের শিকার রিশন চাকমা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চবির সদস্য। অন্য চার শিক্ষার্থী হলেন, চবির চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তাঁরা ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

তবে প্রথম দিন থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ইউপিডিএফের অন্যতম খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা। তিনি বলেন, অপহরণের সঙ্গে ইউপিডিএফের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ ধরনের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি ইউপিডিএফ করে না।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনী চেষ্টা করে যাচ্ছে উদ্ধারের জন্য। তবে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

বিজু উৎসব শেষে গত বুধবার সকালে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক এক জায়গা থেকে টমটম গাড়ির চালকসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে চালককে ছেড়ে দিলেও পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় ব্যর্থ: ভারত
  • পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভের ডাক
  • ৭২ ঘণ্টায়ও খোঁজ মেলেনি চবির অপহৃত ৫ শিক্ষার্থীর
  • সন্তানদের অপেক্ষায় দিন কাটছে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের
  • তিন দিনেও উদ্ধার হয়নি পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী
  • রাজশাহীতে অপহৃত মাদ্রাসা শিক্ষক উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪
  • রাজশাহীতে অপহৃত শিক্ষককে উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪
  • প্রতিবেশীকে বাঁচাতে গিয়ে যেভাবে ‘ফেঁসে’ গেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
  • অপহৃত শিক্ষার্থীদের বাবা-মাকে গোপন স্থানে ডেকেছে অপহরণকারীরা