Prothomalo:
2025-04-19@15:55:36 GMT

রেল কলোনির স্মৃতি

Published: 19th, April 2025 GMT

অবিশ্বাস্য যে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মাকে গ্রামে রেখে আমি ঢাকায় চলে আসি বাবার হাত ধরে, ১৯৬৪ সালে। এরপর ১৯৬৭ পর্যন্ত আমার শৈশবের আবাস ছিল আবদুল গণি রোডের রেল কলোনির বাসা। এই চার বছরের কত যে স্মৃতির মণিমুক্তা এখনো মানসপটে ঝলমলিয়ে ওঠে। এখন যেখানে একটি কালো স্টিম ইঞ্জিন অ্যান্টিক হিসেবে স্থাপন করা আছে, ঠিক সেখানটায় ছিল আমাদের বাসা। বিশাল আকৃতির এক বাংলো ছিল এটি, আর ছিল লাল মাটিতে বাগান করার সুপ্রশস্ত জমি।

প্রতিবারই বাজিতপুরের সরারচর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় নেমে সামান্য পথ অতিক্রম করে আসতাম ট্যাক্সিতে। প্রথমে এই রোডের নাম ‘আবদুল গণি রোড’ শুনে বিস্ময় জেগেছিল। কারণ, আমার বাবার নামও ছিল তা-ই। আমাদের চার বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পরের তিন বোন (হুসনা, জ্যোৎস্না, আসমা) এবং চার ভাই (আমি ছাড়া মহিউদ্দিন, নূরুদ্দিন, মঈনউদ্দিন) বাবার অবসর গ্রহণ পর্যন্ত এ বাসাতেই ছিলাম।

আমার চেয়ে আড়াই বছরের ছোট ভাই মহিউদ্দিনকে নিয়ে রেল কর্মচারী আবদুল আলীর হাত ধরে ওসমানী উদ্যানের ভেতর দিয়ে আমরা যেতাম স্কুলে। রেলের এ স্কুলের নাম ইমতিয়াজ আকবর প্রাইমারি স্কুল। যা এখন আর নেই, যেমন নেই পুরো কলোনি।

পরীক্ষায় প্রথম হওয়ায় আমি হয়ে যাই ক্লাস ক্যাপ্টেন, আর ছিল আমার বন্ধু রুকুন। আমরা ক্লাসের হইচই থামানোর জন্য শিক্ষকদের নির্দেশনায় বেত ও কাঠের স্কেল দেখিয়ে সহপাঠীদের চুপ করাতাম। আমাদের ফরসা ও ভরাট কণ্ঠের বড় আপা ছিলেন খুবই কড়া। একদিন অনুমতি না নিয়ে চলে যাওয়ায় কাউকে কাউকে বাসা থেকে ডেকে এনে হাতের তালুতে তিনি বেত্রাঘাত করেছিলেন। আমার সুন্দরী সহপাঠী নাজমার হাতের রক্তিম তালু দেখে তখন কান্না পেয়েছিল।

বাসাটির এক পাশের সবজি ও ফুলের বিশাল বাগানে একবার নিজ হাতে আমরা আখ ফলিয়েছিলাম। রেলের মালিরা তাতে বপন ও রোপণ করতেন ভুট্টা, বিট, কপি, গাজর, শালগম, মুলা, টমেটো, মেস্তা ও পালংশাক। শীতকালে ডালিয়া, কসমস ও দোপাটি ফুলের ওপর জমে থাকা শিশির দেখে আমার চোখে মায়া জাগত। আমাদের পাচক বিদ্বানের আনা ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ এ বাগানের কাঁচকলা দিয়েই রান্না হতো। কীটপতঙ্গ ও বিষাক্ত পোকা পরিবেষ্টিত হয়েই এ বাসায় আমাদের বসবাস ছিল। গেটের মধুমঞ্জরি ফুলের ঝোপের একেকটি পোকা মাটিতে নেমে যেভাবে কিলবিল করে হাঁটত, তা দেখেই ভয়ে আড়ষ্ট হতাম। অ্যালার্জির কারণে আমাদের কোনো কোনো ভাইবোনের মুখমণ্ডল ফুলে গেলে আমরা লাল পিঁপড়ার মাটি ডলে দিতাম।

আবাসের দেয়ালের বাইরের ল্যাট্রিনটি ছিল নিচের দিকে খোলা। তাতে বড় কড়াইয়ের মতো একটি পাত্র রাখা থাকত। ওই পাত্রে জমে থাকা বর্জ্য দু-এক দিন পরপর ধাঙড়রা এসে নিয়ে যেত। সারা দিনই বাসার বাইরে আইসক্রিমওয়ালাসহ শত ফেরিওয়ালার কণ্ঠস্বর শুনতাম। আর শুনতাম চামড়ার থলেতে পানি বিক্রি করা ভিস্তিওয়ালাদের হাঁকাহাঁকি-ভিস্তি.

..আবে...ভিস্তি...।

আব্বা ছিলেন রেলের আইওডব্লিউ পদে। রাস্তায় বের হলে লোকজন সমীহ করে কথা বলতেন। আমরা বাসার পাশের ফুটপাত ধরে বাবার সঙ্গে যেতাম সচিবালয়-সংলগ্ন বিহারিদের সেলুনগুলোতে চুল কাটাতে। তখন সচিবালয় ও বিদ্যুৎ ভবনের মাঝখানের রাস্তাটি ছিল এক বিরাট নর্দমা। সেটির পূর্ব পাশেই পাটাতনের ওপর ছিল অবাঙালিদের সেলুনগুলো। কখনো বিকেল বা সন্ধ্যায় এই ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যেতে দেখতাম চীনাদের। বাবা বলতেন, এরা তো কাঠি দিয়ে ভাত খায়। তখন আমাদের বিস্ময়ের অন্ত ছিল না। বাবার হাত ধরে বা বেবিট্যাক্সিতে করে আমরা যেতাম নিউমার্কেট, ঘোড়দৌড়ের রেসকোর্স, রমনা পার্ক, চিড়িয়াখানা (বর্তমান ঈদগাহ)। আর যেতাম গভর্নর হাউসের (বর্তমান বঙ্গভবন) হাতি দেখতে। মোনায়েম খানের আবাস ওই হাউসের নিরাপত্তা প্রহরী আমাদের চিনতেন। মিল্কশেক খেতে যাওয়া হতো ঝলমলে বায়তুল মোকাররমে। তখন জিন্নাহ অ্যাভিনিউতে জিপিওর ভেতরটা ছিল একেবারেই ঝকঝকে তকতকে। আমি মাতামহ আবদুর রশিদের হাত ধরে নিমতলীর জাদুঘরে গিয়ে ট্যাক্সিডার্মি (Taxidermy) করা বাঘ দেখে ভয়ে আঁতকে উঠেছিলাম।

সে সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোটেও স্বাভাবিক ছিল না। আমার স্মৃতিতে আছে, ১৯৬৪ সালের দাঙ্গার ভীতি, ভয়জাগানিয়া ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, বাসার সামনে ট্রেন্স (পরিখা) খনন, রাতের ব্ল্যাকআউট ও সাইরেন। আর মনে আছে প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশন, ১৯৬৬ সালের আন্দোলন, শিক্ষা ভবন ঘেরাও এবং আইয়ুব খানের ছবিতে আলকাতরা লেপন। অসুখবিসুখে দাগ দেওয়া বোতলের লাল মিক্সচারের তিক্ত স্বাদ ও ফোড়া হলে নিতম্বে ইনজেকশন পুশ করার কষ্টকর স্মৃতিও মনে পড়ে।

সবই একে একে মনে পড়ে যায় এখনো দাঁড়িয়ে থাকা কালো ইঞ্জিনটা দেখলে।

গোলাম শফিক, সিদ্ধেশ্বরী রোড, ঢাকা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

কলেজছাত্রীকে নগ্ন ছবি পাঠিয়ে হুমকি, যুবক গ্রেপ্তার

রাজশাহীতে কলেজছাত্রীকে এডিট করা নগ্ন ছবি পাঠিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে মনোয়ার হোসেন মুন্না (২৮) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। 

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে র‍্যাব। এর আগে বুধবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঝলমলিয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৫-এর রাজশাহীর মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের একটি দল।

গ্রেপ্তার মুন্না রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ঝলমলিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা।

র‍্যাব জানায়, রাজশাহীর একটি সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত এক ছাত্রী ওই যুবকের বিরুদ্ধে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০২৩ সালের ১১ জুলাই মুন্না ইমেইলের মাধ্যমে ছাত্রীর কাছে তার একটি এডিট করা নগ্ন ছবি পাঠিয়ে হুমকি দেন। পরে বিভিন্ন নামে একাধিক জিমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ওই ছাত্রীর ছবি পাঠাতে থাকেন তিনি। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ছবিটি ছড়িয়ে দেন ছাত্রীর পরিচিতদের কাছে।

ঘটনার পর র‍্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং অভিযুক্তকে শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়। পরে তাকে আইনি পদক্ষেপের জন্য বোয়ালিয়া থানা–পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।

ঢাকা/কেয়া/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কলেজছাত্রীকে নগ্ন ছবি পাঠিয়ে হুমকি, যুবক গ্রেপ্তার