রোদচশমাটা ভুল করে ক্যাপের সামনেই রেখে দিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন। স্পন্সরের লোগোটা ঢেকে যাচ্ছে তাতে, মনে করাতেই মুচকি হাসলেন, চশমাটা সরিয়ে নিলেন পেছনে। এই মঞ্চ, এমন সংবাদ সম্মেলন তো আর তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। গত বছর দেড়েক ধরেই তাঁকে এগুলো সামলাতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে। ওই পথে আরও এগিয়ে যাওয়ার যাত্রাটা তাঁর জন্য এখন অনিশ্চিত।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল নাজমুলের অধিনায়কত্বের মেয়াদ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজেও নেতৃত্বের ভারটা অবশ্য তাঁর কাছেই, কিন্তু কত দিন আর অধিনায়ক থাকবেন? আজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে নাজমুলের উত্তর, ‘আপাতত এই সিরিজটা পর্যন্ত আছি।’

দুই টেস্টের সিরিজটা শুরু হচ্ছে আগামীকাল সিলেট টেস্ট দিয়ে, যা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রায় চার বছর পর প্রথম। এমন একটি ম্যাচের আগে অধিনায়ক নাজমুলকে শুরুতেই বলতে হয়েছে দুই যুগেও দেশে টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে না নিয়ে, ‘এত বছর টেস্ট খেলার পরে যখন টেস্ট সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের কথা বলতে হয়, এটা অবশ্যই দুঃখজনক। তবে আমার মনে হয়, যদি গত বছর থেকে শুরু করি, আমরা চারটা ম্যাচ জিতলাম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ১২টি টেস্টের মধ্যে। চারটি ম্যাচই বড় দলের বিপক্ষে।’

গত বছর পাকিস্তানের মাটিতে দুটি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে একটি এবং ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিলেট টেস্টকে মনে করিয়ে দিলেন নাজমুল।
একই জবাবের শেষ অংশে নাজমুল দেন নতুন শুরুর ঘোষণা, ‘গত বছর থেকেই কীভাবে টেস্ট দলটায় একটা সংস্কৃতি তৈরি করতে পারি বা আমরা কীভাবে খেলাটা খেলতে চাই এই বিষয়গুলো নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল। নতুন কোচ আসার পরে তার একটা পরিকল্পনা আছে, সে আসলে কীভাবে দলটাকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে চায়, যেগুলো এরই মধ্যে ক্রিকেটারদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। পাশাপাশি আমরা যারা খেলছি, আমাদের একটা ইনপুট তো ছিলই। আমি আশা করব এ বছর যে পাঁচ-ছয়টা টেস্ট ম্যাচ আছে, নতুন কিছু আপনারা দেখতে পাবেন ইনশা আল্লাহ।’

গত বছর ১০ টেস্ট খেলে তিনটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। সব কটিই দেশের বাইরে। ঘরের মাঠে জয় ছিল না। নাজমুলের সংবাদ সম্মেলনে বারবার ঘুরেফিরে আসা ‘নতুন’ শুরুর ব্যাখ্যাটা আসলে কী? জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁর কাছেই।

নাজমুল উত্তর দিয়েছেন এভাবে—‘অধিনায়ক হিসেবে আমি যেটা চিন্তা করি যে আমরা প্রত্যেকটা ম্যাচ যেন জেতার জন্য খেলি। এখানে কোনো স্বার্থবাদী ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা আমাদের কারও নেই। আমি যেটা একটু আগেও বললাম যে নতুন কিছু আমরা চেষ্টা করব এবং এটাও শুরু হবে আগামীকাল থেকে। ওটার জন্য যে ধরনের মনমানসিকতা, প্রস্তুতি থাকা দরকার, ক্রিকেটাররা তা নিচ্ছে। পাশাপাশি আমি আশা করব যে যাঁরা ম্যানেজমেন্টে আছেন বা যাঁরা ক্রিকেট বোর্ডে আছেন, তাঁরাও আমাদের এই বিষয়গুলো নিয়ে সহযোগিতা করবেন।’

বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন দরকার জানিয়ে অধিনায়ক যোগ করেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যেহেতু আমাদের গত ২০-২২ বছরে টেস্ট ক্রিকেট একই রকম ছিল, খুব বেশি উন্নতি হয়নি। তাই এই জায়গাটাতে নিশ্চয়ই আমাদের কিছু পরিবর্তনের দরকার আছে। ওই পরিবর্তনটাই করার চিন্তা করছি। আমি আশা করব যে এই পরিবর্তন আমাদের টেস্ট ক্রিকেটে কাজে লাগবে।’

শরীরী ভাষাতেও নতুন কিছু ফুটিয়ে তোলার প্রত্যয় ছিল নাজমুলের কণ্ঠে, ‘পরিস্থিতি যেমনই হোক, জেতার মনমানসিকতা থাকা। ২০ উইকেট নেওয়ার জন্য বোর্ডে যেমন রান থাকা দরকার, ওই রান যেন আমরা ব্যাটিং ইউনিট দিতে পারি—এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ–আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি যেমনই থাক.

.. শরীরী ভাষা... একটু আগে যেটা নিয়ে কথা হল যে আমরা যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে জিতলাম, জেতার জন্য সবার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ও রকম অ্যাগ্রেসিভ ছিল। ওই জিনিসগুলো গুরুত্বপূর্ণ। ওই জিনিসগুলো আমরা কীভাবে প্রতি ম্যাচে ধারাবাহিকভাবে করছি, এটা দেখার বিষয়। আমাদের ক্রিকেটার যারা আছি, এই জিনিসগুলো টানা করার চেষ্টা করব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র ক নত ন ক ছ গত বছর র জন য দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজার অর্ধেক এলাকা ইসরায়েলের দখলে: ‘সোমালিয়ার মতো পরিস্থিতি হতে পারে’

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার বড় অংশ দখল করে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডের মানচিত্র বদলে দিচ্ছে তারা। হত্যাযজ্ঞ ও দখলদারির মুখে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এই স্থান দিন দিন মানুষের বসবাসের ‘অযোগ্য’ হয়ে পড়ছে।

১৮ মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় চরম নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে সেই নৃশংসতা আরও বাড়িয়েছে তারা। গত বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, গাজার ৩০ শতাংশ এলাকা বাফার জোন বা সংঘাতের প্রভাব এড়াতে বিশেষ অঞ্চলে পরিণত করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। সেখান থেকে বাসিন্দাদের বিতাড়িত করা হয়েছে।

গাজার আয়তন ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, এই আয়তনের ৩০ শতাংশের বেশি এলাকা এখন ইসরায়েলের দখলে। ফ্রান্সভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চের গবেষক অ্যাগনেস লেভালয়িসের ভাষ্যমতে, গাজাকে বসবাসের ‘অযোগ্য’ করে তোলাটাই ইসরায়েলের কৌশল।

তবে সামরিক তথ্যের ভিত্তিতে এএফপির হিসাবে, গাজায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে ১৮৫ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা রয়েছে। এটি উপত্যকাটির মোট ভূখণ্ডের প্রায় ৫০ শতাংশ। গাজার বড় অংশে নিরাপত্তা অঞ্চলে সৃষ্টির পাশাপাশি  তিনটি করিডর গড়ে তুলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেগুলো হলো ফিলাডেলফি, মোরাগ ও নেতজারিম করিডর। এগুলো গাজাকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করেছে।

গাজার বড় অংশে নিরাপত্তা অঞ্চলে সৃষ্টির পাশাপাশি  তিনটি করিডর গড়ে তুলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেগুলো হলো ফিলাডেলফি, মোরাগ ও নেতজারিম করিডর। এগুলো গাজাকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করেছে।‘সোমালিয়ার মতো পরিস্থিতি হতে পারে’

জাতিসংঘের ভাষ্যমতে, ইসরায়েলের হামলায় গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বর্তমানে উপত্যকাটির বাসিন্দাদের বিতাড়িত করে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যেখানে মৌলিক অধিকারগুলো ভোগ করার সামান্য সুযোগ রয়েছে বা একেবারেই নেই। সেখানে এখন শুধুই ধ্বংসস্তূপ। আর ইসরায়েলের হামলায় গাজার ৮০ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।

ইসরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল মিলশতেইন বলেন, ‘সরকারের কৌশল কী, তা আমি জানি না। হয়তো পুরো গাজা নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে এর শেষ হবে। এর অর্থ সেখানে একটি বেসামরিক প্রশাসন বা সামরিক সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। এমন পরিস্থিতির জন্য যে মূল্য দিতে হবে, তা ইসরায়েলিরা জানেন কি না, আমি নিশ্চিত নই।’

আরও পড়ুনযদি আমি মারা যাই, তাহলে আলোড়িত মৃত্যুই চাই: মৃত্যুর আগে গাজার আলোকচিত্রীর পোস্ট২ ঘণ্টা আগে

গবেষক অ্যাগনেস লেভালয়িস মনে করেন, ইসরায়েল হয়তো গাজার আরও বেশি অংশ দখলে নিতে পারবে না। তারা বাকি অংশগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে দিতে পারে এবং খুব সামান্য ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ দিতে পারে। এতে করে সোমালিয়ার মতো পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। বিষয়টি এমন যে নৈরাজ্য দেখা দেবে এবং এই ধ্বংসস্তূপ থেকে শাসন করার মতো কোনো কর্তৃপক্ষ উঠে আসতে পারবে না।

ফেব্রুয়ারিতে গাজার বাসিন্দাদের বিতাড়িত করে সেখানে ‘অবকাশযাপন কেন্দ্র’ গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও এ নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এ ছাড়া ইসরায়েলের অনেকে গাজায় আগের মতো বসতি গড়ে তোলার পক্ষে কথা বলছেন। ২০০৫ সালে গাজা থেকে ইসরায়েলি বসতি সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

মাইকেল মিলশতেইন বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে গাজার বাসিন্দাদের উপত্যকাটি ছেড়ে যেতে হবে। এটি একটি উদ্ভট চিন্তাভাবনা। এই পরিকল্পনা যে কাল্পনিক একটি বিষয়, তা বেশির ভাগ ইসরায়েলিও জানেন। এমনকি ট্রাম্পও মনে হয় ওই পরিকল্পনা নিয়ে এখন আগ্রহী নন।

ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর গাজায় অন্তত ১ হাজার ৬৯১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে নিহত হয়েছেন ৫১ হাজার ৬৫ ফিলিস্তিনি।আরও পড়ুনগাজাবাসীও কি সুবর্ণরেখার মতো ঘরের স্বপ্ন দেখে৯ ঘণ্টা আগেএক দিনে ২৪ জনকে হত্যা

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। মাঝে ১৯ জানুয়ারি থেকে মাস দুয়েকের জন্য যুদ্ধবিরতি চলেছিল। পরে ১৮ মার্চ থেকে আবারও সেখানে নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজায় সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের হিসাবে, গতকাল শুক্রবারও উপত্যকাটিতে হামলা চালিয়ে অন্তত ২৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে।

সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণে খান ইউনিস এলাকায় ইসরায়েলের হামলার পর ফিলিস্তিনি একটি পরিবারের বাড়ি ও আশপাশের ঘরবাড়ি থেকে অন্তত ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। এ ছাড়া গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণ—সর্বত্র ইসরায়েলের হামলায় আরও ১৪ জন নিহত হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ হিসাবে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর গাজায় অন্তত ১ হাজার ৬৯১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে নিহত হয়েছেন ৫১ হাজার ৬৫ ফিলিস্তিনি। একই সময়ে আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন। হতাহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

আরও পড়ুনতিন শর্তে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে চায় হামাস২২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনআল-আকসায় ইহুদিদের প্রবেশ ‘নজিরবিহীনভাবে’ বাড়ছে, কিসের ইঙ্গিত২২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ