কণ্ঠনালির অসুখের লক্ষণ হলো গলাব্যথা, কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন, ফ্যাসফ্যাস শব্দ বা গলা ভাঙা, কাশি, কিছু গিলতে অসুবিধা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন বা গলা ভাঙা তীব্র হতে পারে, দীর্ঘমেয়াদিও হতে পারে। যদি ঘন ঘন কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন বা গলা ভাঙার সমস্যা হয় অথবা দুই সপ্তাহে ভালো না হয়, তবে অবশ্যই নাক-কান-গলা রোগের চিকিৎসক দেখাতে হবে।

কখন গলার স্বর বসে যায়

১.

শ্বাসনালির ওপরের অংশে সংক্রমণ হলে।

২. স্বরযন্ত্রের অপব্যবহারে, যেমন উচ্চ স্বরে কথা বলা, জনসমাবেশে বা বড় লেকচার গ্যালারিতে মাইক ছাড়াই জোরে কথা বল, অতিরিক্ত দীর্ঘক্ষণ বিরামহীন কথা বলা এবং চিৎকার করা।

৩. স্বরযন্ত্রের টিউমার, পলিপসহ কিছু অসুখ হলে।

৪. স্বরযন্ত্রের ক্যানসার হলে। দেশের ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৩০ ভাগই নাক, কান ও গলার ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁদের এক-তৃতীয়াংশ শুধু গলার ক্যানসারে ভুগছেন।

৫. স্বরযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা। যেমন ফুসফুসের ক্যানসার, গলার কোনো অস্ত্রোপচারে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গলা বসে যেতে পারে।

আরও পড়ুনকাশি হলে গলা ভেঙে যায়, কী করি২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩কণ্ঠস্বরের যত্নে করণীয়

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মতো কণ্ঠস্বরেরও যত্ন প্রয়োজন। এ জন্য দরকার কণ্ঠের পরিমিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার।

১. অযথা চিৎকার-চেঁচামেচি থেকে বিরত থাকতে হবে। উচ্চ স্বরে বা অনেক জোরে কথা বললে ভোকাল কর্ডে মাইক্রোহেমারেজ হয়, হেমাটোমা, ফাইব্রোসিস হয়ে অনেক সময় কণ্ঠ পরিবর্তন হয়ে যায়। অনেক সময় শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতারা, মায়েরা সন্তানের সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলেন; আবার সংগীতশিল্পী, ফেরিওয়ালা, হকারসহ বিভিন্ন কণ্ঠনির্ভরশীল পেশাজীবীরা জোরে গান করেন বা কথা বলেন। কণ্ঠের যত্নে জনবহুল জায়গায় বা শোরগোলের স্থানে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা উচিত।

২. অ্যালার্জি থেকেও অনেক সময় গলা বসার সমস্যা দেখা যায়। অনেক সময় কাশির কারণে ভোকাল কর্ড ফুলে যায়। এ ছাড়া পোস্টনাজাল ড্রিপ থেকেও গলা খুসখুস করতে পারে। তাই যাঁদের অ্যালার্জি আছে, তাঁরা অ্যালার্জি তৈরি করে, এমন বস্তু বা উপাদান যথাসম্ভব পরিহার করুন।

৩. ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। ধূমপান গলার যেকোনো সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। কণ্ঠনালির ক্ষতি করে। ধূমপানের কারণে ভোকাল কর্ডে ক্যানসার, পলিপ হতে পারে।

৪. অত্যধিক ঠান্ডা পানি পরিহার করুন। অনেক সময় প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বাইরে থেকে এসেই হুট করে আমরা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাই, যা আমাদের গলার জন্য ক্ষতিকর। যাঁদের ঠান্ডা অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে, তাঁদের বিশেষ সতর্কতা মেনে চলা উচিত। ঘামের কারণেও ঠান্ডা লেগে যেতে পারে, গলা ভেঙে যায়। ঠান্ডা লেগে যদি গলা বসে যায়, তবে সাময়িকভাবে কথা বলা বন্ধ করতে হবে বা কমিয়ে দিতে হবে। কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দিতে হবে, এমনকি ফিসফিস করেও কথা বলা যাবে না। গলা ভাঙা উপশমে বাষ্প বা স্টিম ইনহেলেশন ভালো। ফুটন্ত পানির বাষ্প যদি দৈনিক অন্তত ১০ মিনিট মুখ ও গলা দিয়ে টানা হয়, তবে উপকার মেলে। মেনথল ইনহেলেশনও কণ্ঠনালিকে কিছুটা আর্দ্রতা দেয়।

আরও পড়ুনগলা–মুখ শুকিয়ে যাওয়া ঠেকাতে কী করবেন০৩ এপ্রিল ২০২২

৫. পানিশূন্যতা গলা ভাঙার আরেকটি বড় কারণ। অনেকে সারা দিন কথা বলেন কিন্তু যথেষ্ট পানি খান না, এ কারণে কণ্ঠের ক্ষতি হয়। প্রতিদিন অন্তত দুই লিটার পানি খেতে হবে।

৬. আমরা অনেক দেরি করে রাতে খাই এবং খেয়েই শুয়ে পড়ি। এটিও কিন্তু কণ্ঠনালির জন্য ভালো না। হাইপার অ্যাসিডিটির (ল্যারিঙ্গো ফ্যারিঞ্জাল রিফ্লাক্স ডিজিজ) কারণে গলার আশপাশে প্রদাহ হয়, কণ্ঠনালি ফুলে যায়। রাতের খাবার খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পরে শুতে যাওয়া উচিত। ঘুমানোর সময় মাথা যেন শরীরের তুলনায় একটু উঁচুতে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলবেন। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমানো যাবে না।

গলা ভাঙা বা গলা বসার উপসর্গকে অবহেলা করবেন না। দীর্ঘস্থায়ী স্বরভঙ্গের যে কারণটি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো কণ্ঠনালির ক্যানসার। কারও যদি স্বরভঙ্গ তিন সপ্তাহের বেশি থাকে, তাহলে অবশ্যই নাক–কান–গলা রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী, নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট

আরও পড়ুনঘুম থেকে উঠতেই গলা খুসখুস করে যেসব কারণে১৬ মার্চ ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ক সময় র সমস য অন ক স

এছাড়াও পড়ুন:

কী কী কারণে কণ্ঠের সমস্যা হতে পারে

কণ্ঠনালির অসুখের লক্ষণ হলো গলাব্যথা, কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন, ফ্যাসফ্যাস শব্দ বা গলা ভাঙা, কাশি, কিছু গিলতে অসুবিধা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন বা গলা ভাঙা তীব্র হতে পারে, দীর্ঘমেয়াদিও হতে পারে। যদি ঘন ঘন কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন বা গলা ভাঙার সমস্যা হয় অথবা দুই সপ্তাহে ভালো না হয়, তবে অবশ্যই নাক-কান-গলা রোগের চিকিৎসক দেখাতে হবে।

কখন গলার স্বর বসে যায়

১. শ্বাসনালির ওপরের অংশে সংক্রমণ হলে।

২. স্বরযন্ত্রের অপব্যবহারে, যেমন উচ্চ স্বরে কথা বলা, জনসমাবেশে বা বড় লেকচার গ্যালারিতে মাইক ছাড়াই জোরে কথা বল, অতিরিক্ত দীর্ঘক্ষণ বিরামহীন কথা বলা এবং চিৎকার করা।

৩. স্বরযন্ত্রের টিউমার, পলিপসহ কিছু অসুখ হলে।

৪. স্বরযন্ত্রের ক্যানসার হলে। দেশের ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৩০ ভাগই নাক, কান ও গলার ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁদের এক-তৃতীয়াংশ শুধু গলার ক্যানসারে ভুগছেন।

৫. স্বরযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা। যেমন ফুসফুসের ক্যানসার, গলার কোনো অস্ত্রোপচারে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গলা বসে যেতে পারে।

আরও পড়ুনকাশি হলে গলা ভেঙে যায়, কী করি২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩কণ্ঠস্বরের যত্নে করণীয়

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মতো কণ্ঠস্বরেরও যত্ন প্রয়োজন। এ জন্য দরকার কণ্ঠের পরিমিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার।

১. অযথা চিৎকার-চেঁচামেচি থেকে বিরত থাকতে হবে। উচ্চ স্বরে বা অনেক জোরে কথা বললে ভোকাল কর্ডে মাইক্রোহেমারেজ হয়, হেমাটোমা, ফাইব্রোসিস হয়ে অনেক সময় কণ্ঠ পরিবর্তন হয়ে যায়। অনেক সময় শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতারা, মায়েরা সন্তানের সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলেন; আবার সংগীতশিল্পী, ফেরিওয়ালা, হকারসহ বিভিন্ন কণ্ঠনির্ভরশীল পেশাজীবীরা জোরে গান করেন বা কথা বলেন। কণ্ঠের যত্নে জনবহুল জায়গায় বা শোরগোলের স্থানে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা উচিত।

২. অ্যালার্জি থেকেও অনেক সময় গলা বসার সমস্যা দেখা যায়। অনেক সময় কাশির কারণে ভোকাল কর্ড ফুলে যায়। এ ছাড়া পোস্টনাজাল ড্রিপ থেকেও গলা খুসখুস করতে পারে। তাই যাঁদের অ্যালার্জি আছে, তাঁরা অ্যালার্জি তৈরি করে, এমন বস্তু বা উপাদান যথাসম্ভব পরিহার করুন।

৩. ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। ধূমপান গলার যেকোনো সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। কণ্ঠনালির ক্ষতি করে। ধূমপানের কারণে ভোকাল কর্ডে ক্যানসার, পলিপ হতে পারে।

৪. অত্যধিক ঠান্ডা পানি পরিহার করুন। অনেক সময় প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বাইরে থেকে এসেই হুট করে আমরা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাই, যা আমাদের গলার জন্য ক্ষতিকর। যাঁদের ঠান্ডা অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে, তাঁদের বিশেষ সতর্কতা মেনে চলা উচিত। ঘামের কারণেও ঠান্ডা লেগে যেতে পারে, গলা ভেঙে যায়। ঠান্ডা লেগে যদি গলা বসে যায়, তবে সাময়িকভাবে কথা বলা বন্ধ করতে হবে বা কমিয়ে দিতে হবে। কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দিতে হবে, এমনকি ফিসফিস করেও কথা বলা যাবে না। গলা ভাঙা উপশমে বাষ্প বা স্টিম ইনহেলেশন ভালো। ফুটন্ত পানির বাষ্প যদি দৈনিক অন্তত ১০ মিনিট মুখ ও গলা দিয়ে টানা হয়, তবে উপকার মেলে। মেনথল ইনহেলেশনও কণ্ঠনালিকে কিছুটা আর্দ্রতা দেয়।

আরও পড়ুনগলা–মুখ শুকিয়ে যাওয়া ঠেকাতে কী করবেন০৩ এপ্রিল ২০২২

৫. পানিশূন্যতা গলা ভাঙার আরেকটি বড় কারণ। অনেকে সারা দিন কথা বলেন কিন্তু যথেষ্ট পানি খান না, এ কারণে কণ্ঠের ক্ষতি হয়। প্রতিদিন অন্তত দুই লিটার পানি খেতে হবে।

৬. আমরা অনেক দেরি করে রাতে খাই এবং খেয়েই শুয়ে পড়ি। এটিও কিন্তু কণ্ঠনালির জন্য ভালো না। হাইপার অ্যাসিডিটির (ল্যারিঙ্গো ফ্যারিঞ্জাল রিফ্লাক্স ডিজিজ) কারণে গলার আশপাশে প্রদাহ হয়, কণ্ঠনালি ফুলে যায়। রাতের খাবার খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পরে শুতে যাওয়া উচিত। ঘুমানোর সময় মাথা যেন শরীরের তুলনায় একটু উঁচুতে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলবেন। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমানো যাবে না।

গলা ভাঙা বা গলা বসার উপসর্গকে অবহেলা করবেন না। দীর্ঘস্থায়ী স্বরভঙ্গের যে কারণটি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো কণ্ঠনালির ক্যানসার। কারও যদি স্বরভঙ্গ তিন সপ্তাহের বেশি থাকে, তাহলে অবশ্যই নাক–কান–গলা রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী, নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট

আরও পড়ুনঘুম থেকে উঠতেই গলা খুসখুস করে যেসব কারণে১৬ মার্চ ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ