হামাগুড়ি দিয়ে কেন্দ্রে এসে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ইউনুস
Published: 19th, April 2025 GMT
এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে পরীক্ষার্থীদের ভিড়। ইউনিফর্ম পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলাদাভাবে চোখে পড়ছিল শারীরিক প্রতিবন্ধী এক কিশোরকে। একটি ইজিবাইক থেকে নামার পর কিশোরটি হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ করে কেন্দ্রে। গায়ের ইউনিফর্ম দেখে বোঝা যায় সেও পরীক্ষার্থীদের একজন।
গত বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা মেলে মো.
পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থী মো. ইউনুসের সঙ্গে কথা হয়। সে বলে, ‘আল্লাহ আমাকে যেভাবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, তাতে আমি সন্তুষ্ট। বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে খুবই কষ্ট হতো। সহপাঠী বন্ধুরা সাহায্য করত নানা সময়। ক্লাসে গিয়ে বসার সময়ও বন্ধুরা আমাকে পছন্দমতো জায়গায় বসতে দিত। আমি লেখাপড়া করে ভালো একজন ব্যবসায়ী হতে চাই।’ সে আরও বলে, ‘আমার বাবা নৈশপ্রহরীর চাকরি করেন। আটজনের সংসার বাবার একার রোজগারে চলে। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে অবশ্যই আমার শিক্ষার এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে।’
ইউনুসের মা নুরুজ্জামান বলেন, জন্মগতভাবে ইউনুস প্রতিবন্ধী। দুই হাঁটুর পাশাপাশি দুই হাতের ওপর ভর করে সে চলাফেরা করে। জালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে টেকনাফ মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ থাকায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দিয়েছে। সে প্রতিনিয়ত লেখাপড়া করে যাচ্ছে।
শুধু ইউনুস নয়, আবদুল হামিদ নামের আরও এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ওই পরীক্ষার্থী ইউনুসের খালাতো ভাই। কেন্দ্রের সচিব ও এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাব্বির আহমদ বলেন, দুই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীই দুটি কক্ষে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। কেন্দ্রের পরিদর্শকসহ সবাই তাদের প্রতি খেয়াল রাখছেন।
কেন্দ্রের পরিদর্শক সৈয়দা তাহমিনা খানম বলেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তারা ভালোভাবেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। খাতা জমা দেওয়ার সময় রোল নম্বর ঠিকমতো লিখেছে কি না, যাচাই-বাছাই করা হয়।
মো. ইউনুস ও আবদুল হামিদের বিষয়ে টেকনাফ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ইউনুস ও হামিদ পরস্পর খালাতো ভাই। দুজন শিক্ষার্থী খুবই ভদ্র। তাদের পড়াশোনা দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে, এমনটা আশা করি।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনায় বিষাক্ত মদপানে ২ যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
পাবনায় বিষাক্ত মদপানে দুই যুবক মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে তারা মারা যান। উভয় পরিবার তাদের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে কোনো তথ্য বা কথা বলতে রাজি হননি। ঘটনার পর থানায় অভিযোগও করেনি পরিবারের সদস্যরা।
মারা যাওয়ারা হলেন- পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার সঞ্চিত সরকারের ছেলে সুমন সরকার (৩৫) এবং রাধানগর মক্তব এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে মামুন হোসেন (৩২)। তারা দুইজনই স্থানীয় একটি ব্যান্ড সাউন্ড প্রতিষ্ঠানের সদস্য। একই সঙ্গে বাদ্যযন্ত্র শিল্পি হিসেবে পরিচিত।
আরো পড়ুন:
এটা অবহেলা, আমি বিচার চাই: সাজিদের বাবা
রংপুরে বিভাগীয় ইজতেমা শুরু, ২ মুসল্লির মৃত্যু
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাতে দুই যুবক একটি অনুষ্ঠান শেষে মদপান করেন। তারপর তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয় তাদের।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সুখি খাতুন বলেন, “একজনকে রাত ১২টা এবং অপরজনকে রাত ৩টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। একজন হাসপাতালে মারা গেলে তাকে তার স্বজনরা নিয়ে চলে যান। আরেকজন রাজশাহী নেওয়ার পথে মারা গেছেন।”
পাবনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দুলাল হোসেন বলেন, “হাসপাতালের নথিপত্র অনুযায়ী তাদের মৃত্যুর কারণ মদ্যপান উল্লেখ করা হয়েছে। কোথা থেকে, কীভাবে, কী মদ পানে তারা মারা গেছেন এ বিষয়ে তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।”
তিনি আরো বলেন, “মারা যাওয়াদের একজন হিন্দু হওয়ায় তার সৎকার করেছেন পরিবারের সদস্যরা। অপরজনের মরদেহ থানায় আনা হয়েছে। এখনো মৃত্যুর বিষয়ে কোনো পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করেনি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ