পাকিস্তানের পুলিশ দেশজুড়ে কেএফসির শাখাগুলো লক্ষ্য করে একের পর এক বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। বিক্ষোভ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে কেএফসির এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সমর্থনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ। এই রোষ গিয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফাস্টফুড চেইন কেএফসির ওপর। 

আরো পড়ুন:

বিবিসির প্রতিবেদন
ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব
বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে

ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা এই ফাস্টফুড চেইনের বয়কটের আহ্বান জানাচ্ছেন। দাবি করছেন এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র ইসরায়েলের প্রতীক।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, “গত সপ্তাহে দেশজুড়ে কমপক্ষে ২০টি কেএফসি আউটলেটে হামলার চেষ্টা রেকর্ড করা হয়েছে।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, লোহার রড হাতে জনতা কেএফসি আউটলেটে ঢুকে পড়ছে এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। করাচিতে দুটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

একটি ভিডিওতে দেখা যায় একজন লোক চিৎকার করে বলছেন, “তোমরা যেটা থেকে টাকা কামাচ্ছো, ওরা সেই টাকা দিয়ে গুলি কিনছে।”

সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, “এখানে জড়িত বেশিরভাগ বিক্রেতাই পাকিস্তানি এবং এই লাভ পাকিস্তানিদের কাছেই যায়।”

একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন, নিহত ব্যক্তি আসিফ নওয়াজ। তার বয়স ৪৫ বছর। কেএফসির এই কর্মী ১৪ এপ্রিল লাহোরের উপকণ্ঠে শেইখুপুরা শহরে এক বিক্ষোভ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন।

শেইখুপুরা অঞ্চলের পুলিশ কর্মকর্তা আতহার ইসমাইল জানান, নওয়াজ তখন রান্নাঘরে কাজ করছিলেন এবং তার কাঁধে একটি গুলি লাগে যা ১০০ ফুট দূর থেকে পিস্তল থেকে ছোঁড়া হয়েছিল। তিনি বিবিসিকে বলেন, মূল অভিযুক্ত এখনও পলাতক। তবে পুলিশ এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এত দূরত্ব থেকে ছোড়া ‍গুলি প্রাণঘাতী হয় না। তবে ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, গুলি কাঁধে লাগার পর বুকে চলে যায়।

ইসমাইল বিবিসিকে আরো বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ যায়নি যাতে বোঝা যায় নওয়াজকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছিল—এটি দুর্ঘটনাবশত ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাকিস্তান জুড়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা গাজা যুদ্ধের নিন্দা জানিয়েছেন।

ইসলামপন্থি দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে, কিন্তু কেএফসিতে হামলায় তাদের কোনো সদস্যের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী সুন্নি পণ্ডিত মুফতি তাকি উসমানি যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করা পণ্য বর্জনকে উৎসাহিত করেছেন।

তবে উভয়ই বিক্ষোভকারীদের সহিংসতা না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার জাতীয় ফিলিস্তিন সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে উসমানি বলেন, ইসরায়েলের পণ্য এবং কোম্পানি বর্জন করা অপরিহার্য হলেও, ইসলাম ‘এমন ধর্ম নয় যা অন্যদের ক্ষতি করতে উৎসাহিত করে’। তিনি বলেছেন, “কারো জীবন ঝুঁকি ফেলা নিষিদ্ধ কাজ।”

তিনি বলেন, “সুতরাং, আপনার প্রতিবাদ এবং বর্জন চালিয়ে যান, তবে শান্তিপূর্ণভাবে তা করুন। সহিংসতা বা অশান্তিপূর্ণ আচরণের কোনো উপাদান থাকা উচিত নয়।”

টিএলপি মুখপাত্র রেহান মহসিন খান বলেছেন, দলটি মুসলমানদের ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে, তবে কেএফসির আউটলেটের সামনে বিক্ষোভের কোনো আহ্বান জানায়নি।

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান এবং অন্যান্য মুসলিম দেশে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো আক্রমণ, বয়কট এবং বিক্ষোভের মুখোমুখি হওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।

কেএফসি এবং তাদের মূল কোম্পানি ইয়াম ব্র্যান্ডস এখনও এ বিষয়ে বিবিসির অনুরোধের জবাব দেয়নি।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক এফস র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানে কেএফসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিহত ১

পাকিস্তানের পুলিশ দেশজুড়ে কেএফসির শাখাগুলো লক্ষ্য করে একের পর এক বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। বিক্ষোভ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে কেএফসির এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সমর্থনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ। এই রোষ গিয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফাস্টফুড চেইন কেএফসির ওপর। 

আরো পড়ুন:

বিবিসির প্রতিবেদন
ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব
বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে

ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা এই ফাস্টফুড চেইনের বয়কটের আহ্বান জানাচ্ছেন। দাবি করছেন এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র ইসরায়েলের প্রতীক।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, “গত সপ্তাহে দেশজুড়ে কমপক্ষে ২০টি কেএফসি আউটলেটে হামলার চেষ্টা রেকর্ড করা হয়েছে।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, লোহার রড হাতে জনতা কেএফসি আউটলেটে ঢুকে পড়ছে এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। করাচিতে দুটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

একটি ভিডিওতে দেখা যায় একজন লোক চিৎকার করে বলছেন, “তোমরা যেটা থেকে টাকা কামাচ্ছো, ওরা সেই টাকা দিয়ে গুলি কিনছে।”

সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, “এখানে জড়িত বেশিরভাগ বিক্রেতাই পাকিস্তানি এবং এই লাভ পাকিস্তানিদের কাছেই যায়।”

একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন, নিহত ব্যক্তি আসিফ নওয়াজ। তার বয়স ৪৫ বছর। কেএফসির এই কর্মী ১৪ এপ্রিল লাহোরের উপকণ্ঠে শেইখুপুরা শহরে এক বিক্ষোভ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন।

শেইখুপুরা অঞ্চলের পুলিশ কর্মকর্তা আতহার ইসমাইল জানান, নওয়াজ তখন রান্নাঘরে কাজ করছিলেন এবং তার কাঁধে একটি গুলি লাগে যা ১০০ ফুট দূর থেকে পিস্তল থেকে ছোঁড়া হয়েছিল। তিনি বিবিসিকে বলেন, মূল অভিযুক্ত এখনও পলাতক। তবে পুলিশ এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এত দূরত্ব থেকে ছোড়া ‍গুলি প্রাণঘাতী হয় না। তবে ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, গুলি কাঁধে লাগার পর বুকে চলে যায়।

ইসমাইল বিবিসিকে আরো বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ যায়নি যাতে বোঝা যায় নওয়াজকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছিল—এটি দুর্ঘটনাবশত ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাকিস্তান জুড়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা গাজা যুদ্ধের নিন্দা জানিয়েছেন।

ইসলামপন্থি দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে, কিন্তু কেএফসিতে হামলায় তাদের কোনো সদস্যের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী সুন্নি পণ্ডিত মুফতি তাকি উসমানি যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করা পণ্য বর্জনকে উৎসাহিত করেছেন।

তবে উভয়ই বিক্ষোভকারীদের সহিংসতা না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার জাতীয় ফিলিস্তিন সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে উসমানি বলেন, ইসরায়েলের পণ্য এবং কোম্পানি বর্জন করা অপরিহার্য হলেও, ইসলাম ‘এমন ধর্ম নয় যা অন্যদের ক্ষতি করতে উৎসাহিত করে’। তিনি বলেছেন, “কারো জীবন ঝুঁকি ফেলা নিষিদ্ধ কাজ।”

তিনি বলেন, “সুতরাং, আপনার প্রতিবাদ এবং বর্জন চালিয়ে যান, তবে শান্তিপূর্ণভাবে তা করুন। সহিংসতা বা অশান্তিপূর্ণ আচরণের কোনো উপাদান থাকা উচিত নয়।”

টিএলপি মুখপাত্র রেহান মহসিন খান বলেছেন, দলটি মুসলমানদের ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে, তবে কেএফসির আউটলেটের সামনে বিক্ষোভের কোনো আহ্বান জানায়নি।

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান এবং অন্যান্য মুসলিম দেশে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো আক্রমণ, বয়কট এবং বিক্ষোভের মুখোমুখি হওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।

কেএফসি এবং তাদের মূল কোম্পানি ইয়াম ব্র্যান্ডস এখনও এ বিষয়ে বিবিসির অনুরোধের জবাব দেয়নি।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ