যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল এড়াতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করণীয় ও সতর্কতা
Published: 19th, April 2025 GMT
অভিবাসনবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে শত শত বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেন এমনটা করা হয়েছে, তা অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই জানা নেই। এ অবস্থায় যেসব শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যেতে চান, তাঁদের জন্য কিছু পরামর্শ আছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ৬ লাখ ৭৯ হাজার এফ-১ (F1 ভিসা হলো যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া স্টুডেন্ট ভিসা, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পূর্ণকালীন শিক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেয়) শিক্ষার্থী ভিসা আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৭৯ লাখ (৪১%) আবেদনই বাতিল হয়েছিল। গত এক দশকে এ হার সর্বোচ্চ। একই সময়ে এ বছরের মার্চ (২০২৫) থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কমপক্ষে ১ হাজার ২৪ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা হঠাৎ বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি।
আরও পড়ুনফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম, আইইএলটিএসে ৭ স্কোরে বৃত্তির আবেদন১৭ এপ্রিল ২০২৫কেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি
USCIS–United States Citizenship and Immigration Services নামের একটি নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এটি মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (Department of Homeland Security, DHS) একটি সংস্থা। মার্কিন অভিবাসন ও নাগরিকত্ব বিভাগ অভিন্ন ‘ঝুঁকি মূল্যায়ন’প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী ভিসা আবেদনকারীর সামাজিক যোগাযোগ অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করার প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে ‘প্রতারণা ও নিরাপত্তা হুমকি’ শনাক্ত করে।
ক্যাম্পাস প্রতিবাদে কঠোর পদক্ষেপ: প্রো-প্যালেস্টাইন (pro–Palestine) বা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবাধ্যতা প্রদর্শনের অভিযোগে জর্জ মেসন, জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২৫ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় আদেশের প্রভাব: একের পর এক নির্বাহী আদেশে ‘অ্যান্টি-সেমিটিজম’ বা ‘বিদেশবিরোধী’ বক্তব্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ফলে সামাজিক সেতুঘটনাও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচিত হচ্ছে।
আরও পড়ুনকানাডায় অভিবাসনে নতুন উদ্যোগ: বাড়তি সুযোগ ফ্রেঞ্চ ভাষা জানলেই১৬ এপ্রিল ২০২৫১.
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যেতে চাইলে আপনাকে যা করতে হবে
মনে রাখবেন, তাঁরা আপনার অনলাইন কার্যক্রম, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলও খতিয়ে দেখছে। তাই সতর্ক না হলে ছোট্ট একটি পোস্টও আপনার ভিসা বাতিলের কারণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের চোখে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় উগ্রতা প্রকাশ না করা-
কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্য বা ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য পোস্ট বা শেয়ার করাও বিপজ্জনক হতে পারে।
ইসরায়েলবিরোধী বা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য পরিহার-
বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে ইসরায়েল–সম্পর্কিত কোনো বিরূপ মন্তব্য, পোস্ট বা শেয়ার ট্র্যাভেল ব্যান বা ভিসা বাতিলের কারণ হতে পারে।
২. ভুয়া তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকুন
ফেক লোকেশন, মিথ্যা পরিচয় বা বিদেশভ্রমণের ভুল তথ্য প্রদান সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপরীত ফলাফল বয়ে আনতে পারে। অভিবাসনবিরোধী বা সরকারের সমালোচনামূলক মিম, ভিডিও বা বক্তব্য শেয়ার থেকে বিরত থাকুন।
আরও পড়ুননিউজিল্যান্ডের ‘টঙ্গারেওয়া স্কলারশিপ’, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সুযোগ৪ ঘণ্টা আগে৩. ডকুমেন্টেশন ও তথ্যের নির্ভুলতা নিশ্চিত করুন-
সব কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত ও হালনাগাদ রাখুন। যেমন I-20 ফর্ম, SEVIS ফি পরিশোধের রসিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিতকরণ প্রমাণপত্র ইত্যাদি।
ফেক বা অনুমোদনবিহীন বিশ্ববিদ্যালয় এড়িয়ে চলুন-
অতীতে কিছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভুয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন, যে কারণে এখন অনেক ইউনিভার্সিটি ও জাতীয়তাকেই সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।
যাত্রার সময় প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত থাকুন-
ইমিগ্রেশন অফিসার যেকোনো বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন—আপনার কোর্স, ফান্ডিং, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি। উত্তর যেন সঠিক ও স্পষ্ট হয়।
৪. আচরণ ও যোগাযোগে নম্রতা বজায় রাখুন
ইমিগ্রেশন অফিসারের সঙ্গে ভদ্রতা ও ধৈর্য বজায় রাখুন। অনেক সময় তল্লাশি বা জিজ্ঞাসাবাদ হতাশাজনক হতে পারে, কিন্তু সেই সময় ধৈর্য হারালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন-
স্নায়ুচাপ মুক্ত থেকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলা অত্যন্ত জরুরি। আপনি যদি নিজের কথায় বিভ্রান্ত হন বা অসংলগ্ন আচরণ করেন, তবে সেটি সন্দেহের জন্ম দিতে পারে।
৫. বিকল্প দেশ বা বিকল্প পরিকল্পনা কী হতে পারে-
বিকল্প দেশগুলোর কথাও চিন্তা করে রাখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য উচ্চশিক্ষার জন্য ভাবনায় রাখা যেতে পারে।
শেষ কথা
মনে রাখতে হবে, গত কয়েক মাস আগেও যুক্তরাষ্ট্র যে নীতিতে চলত, এখন সেই নীতি সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে ফেলেছে। অতএব যা–ই করবেন না কেন, বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে করতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অভিবাসন ও আন্তর্জাতিক নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ আরও কঠিন হয়ে উঠছে। তবে সচেতনতা, সতর্কতা ও বিকল্প পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এই পরিস্থিতির মধ্যেও নিজেদের পথ খুঁজে নিতে পারে। হতাশ না হয়ে আগামীর জন্য প্রস্তুত থাকাটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত র জন ত ক র জন য প রস ত ব কল প
এছাড়াও পড়ুন:
বহির্নোঙরে বন্দর কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জুয়েল। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা, বন্দর সম্প্রসারণে বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ার কারণ এবং এর সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারোয়ার সুমন।
সমকাল: চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রকল্প বলা হয় বে-টার্মিনালকে। তবু কেন বার বার হোঁচট খাচ্ছে এ প্রকল্প?
শফিকুল আলম জুয়েল: বে-টার্মিনাল প্রকল্প বার বার পেছানোর নেপথ্যে অনেক কারণ আছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা থাকা ও অর্থায়নের প্রক্রিয়া ঠিক করতে না পারা আমার কাছে সবচেয়ে বড় কারণ মনে হয়। অথচ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ত তিনগুণ। এখন সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ নোঙর করতে অপেক্ষা করতে হয় জোয়ারের জন্য। তখন আমরা ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজও অনায়াসে নোঙর করাতে পারতাম মূল জেটিতে। এতে করে আমাদের পণ্য পরিবহন খরচ কমত। কমে যেত জাহাজের অপেক্ষমাণ সময়ও। এতে করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও গতিশীল হতো।
সমকাল: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, বিশ্বজুড়ে শুল্কযুদ্ধের দামামা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ডলার সংকটের বাধা পেরিয়ে গত বছর চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার এবং কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে। এটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
শফিকুল আলম জুয়েল: কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ২০২৪ সালে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০ ফুট এককের কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে দুই লাখ ২৪ হাজার ৮৩৪টি। কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে প্রায় ৩০ লাখ টন। ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর হ্যান্ডল করে ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ একক কনটেইনার। ২০২৪ সালে দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরে ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৭ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। তবে বন্দরে জাহাজ আসার পরিমাণ কমেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে জাহাজ কম এসেছে ২৩৬টি। অবশ্য জাহাজের সংখ্যা কমলেও বেড়েছে আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ।
সমকাল: জাহাজ আসার সংখ্যা কেন কমছে?
শফিকুল আলম জুয়েল: ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর জাহাজ হ্যান্ডল করে ৪ হাজার ১০৩টি। ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৮৬৭টি জাহাজ আসে। এখন যেসব জাহাজ আসছে, সেগুলো আগের চেয়ে বড় জাহাজ। বন্দরে এখন সর্বোচ্চ ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে। আগে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যেত। তখন যদি এক হাজার কনটেইনার নিয়ে একটি জাহাজ আসত, এখন তার চেয়ে বড় অর্থাৎ দেড়-দুই হাজার কনটেইনার নিয়েও জাহাজ আসছে। এজন্য জাহাজ আসার পরিমাণ কমলেও বেড়েছে কনটেইনারের সংখ্যা।
সমকাল: কার্গো পণ্য পরিবহন ক্রমশ বাড়ছে। এজন্য বহির্নোঙরে বড় ভূমিকা রাখতে হচ্ছে শিপিং এজেন্টকে। সেখানে কোন কোন বিষয়ে আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত?
শফিকুল আলম জুয়েল: সর্বশেষ বছরে প্রায় ১৩ কোটি লাখ টন পণ্য হ্যান্ডল করেছে বন্দর। অথচ ২০২৩ সালে ১২ কোটি ২ লাখ টন পণ্য পরিবহন হয়। ২০২২ সালে এটি ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৫ হাজার টন। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সামাল দিতে বড় ভূমিকা রাখতে হয় শিপিং এজেন্টদের। কারণ, বন্দরে আসা পণ্যের ৭০ শতাংশেরও বেশি খালাস করতে হয় বহির্নোঙরে। সেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। দক্ষ ও যোগ্য লোক যাতে এ কাজ পরিচালনা করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
সমকাল: রেল ও নৌপথে পণ্য পরিবহনে কাঙ্ক্ষিত গতি নেই কেন?
শফিকুল আলম জুয়েল: চট্টগ্রাম বন্দর ও এর আওতাধীন কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও পানগাঁও নৌ টার্মিনাল দিয়ে ২০২৩ সালে আমদানি-রপ্তানি ও খালি মিলিয়ে কনটেইনার পরিবহন হয় ৩০ লাখ ৫০ হাজার টিইইউস। ২০২২ সালে হয় ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউস। এটি আরও বাড়ার কথা। যে হারে আমদানি-রপ্তানির পণ্য আসছে সেই হারে পণ্য পরিবহন হচ্ছে না রেল ও নৌপথে। এখানে অনেক ফ্যাক্টর বাধা হিসেবে কাজ করছে। রেলওয়েরও গাফিলতি আছে। তাদের পর্যাপ্ত ইঞ্জিনও নেই। আবার নৌপথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি আমরা। সেখানে ভাড়া নিয়েও
অসন্তোষ আছে। সমস্যা আছে পরিচালনা প্রক্রিয়াতেও। বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে রেল ও নৌপথে আসবে কাঙ্ক্ষিত গতি।