অস্ত্রের মহড়া, কালোতালিকা, কাদা-ছোড়াছুড়ি, জনসংযোগের নামে বলিউডে যা হয়
Published: 19th, April 2025 GMT
প্রচার-প্রচারণার কাজে তারকারা কোথাও গেলে সেখানে ফটোগ্রাফার পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠানো হয় বিনোদন বিটের সাংবাদিকদের কাছে। এসব বার্তা পাঠানো হয় ‘এ’ গ্রেডের তারকা থেকে শুরু করে উঠতি ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য। খুদে বার্তায় সময়ও উল্লেখ থাকে। শুধু তা-ই নয়, কোনো অভিনয়শিল্পী কিংবা নির্মাতা যখন বিব্রতকর কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, তাঁদের সেই বিষয়গুলো সামনে না আনার জন্যও বার্তা পাঠানো হয়।
কারা এসব কাজ করেন? একজন নিয়োগ পাওয়া পাবলিক রিলেশন অফিসার বা জনসংযোগ কর্মকর্তা। তারকাদের ফুটফরমাশের দিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি তাঁদের মতিগতি বুঝে বিভিন্ন ইচ্ছা পূরণ করে চলাই জনসংযোগ কর্মকর্তার কাজ হয়ে দাঁড়ায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস যেসব সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছে, তাঁদের সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে বলিউডে জনসংযোগের বিষয়টি গুটিকয় ব্যক্তির হাতে আবদ্ধ। তাঁরা তারকাদের নেতিবাচক দিকগুলোর পরিবর্তে ইতিবাচক বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরার জন্য চাপ সৃষ্টি করে থাকেন। আবার কোনো তারকার সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় কেউ যেন বিতর্ক উসকে দেওয়ার মতো কোনো প্রশ্ন না করেন, সে বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়। যদি কোনো সাংবাদিক এমনটা করে থাকেন, তাহলে তাঁর জন্য বিপজ্জনক সব পরিস্থিতি অপেক্ষা করে।
একজন চলচ্চিত্র সমালোচক জানান, ভারতের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর একটিতে প্রচারিত একটি সিরিজের সমালোচনা করেছিলেন তিনি। সমালোচনার শেষের কয়েকটি লাইন প্ল্যাটফর্মটির পছন্দ হয়নি। তাই তা পরিবর্তন করতে বলা হয় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। কিন্তু তিনি তা করেননি। পরিণতি হিসেবে জনসংযোগের কুৎসিত চেহারার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে।
‘জুয়েল থিফ’ সিনেমার প্রচারে তারকারা। এএফপি.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ধর্ষণের শিকার দাবি করা নারীর বক্তব্য ওসির মুঠোফোনে ধারণের পর ফেসবুকে, সমালোচনা
বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণ এবং মারধরের অভিযোগে ফেনীর এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে জেলার সদর মডেল থানায় মামলা করেন থাইল্যান্ডের নাগরিক এক নারী। মামলায় আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই নারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পুলিশের প্রশংসা করেন। প্রশংসাসূচক এই বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করেন ওসি, যা ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
নিজেকে ধর্ষণের শিকার দাবি করা একজন নারীর ভিডিও এভাবে ধারণ করা এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ওই নারীর সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলে দাবি আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীদের।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ওসির কক্ষে বসে পুলিশের প্রশংসা করে ইংরেজি ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন এক নারী। ফেসবুকে ভিডিওটির মন্তব্যের ঘরে ওই নারীকে কটাক্ষ করে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ফেনী টিমের সদস্য তন্বী সোম বলেন, ওই নারী নিজে ধর্ষণের শিকার এবং নির্যাতিত, এমন অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। ভুক্তভোগী নারীর বক্তব্যের ভিডিও এভাবে ওসির মুঠোফোনে ধারণ করা এবং তা পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দুঃখজনক। এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সংবেদনশীল এবং সতর্ক হতে হবে।
ফেনী জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আদালতের অনুমতি ছাড়া পুলিশ এ ধরনের কোনো ভুক্তভোগীর বক্তব্যের ভিডিও ধারণ এবং সেটি কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার বিষয়টি তো পুলিশের এখতিয়ারেই নেই। সেটি ধন্যবাদজনিত বিষয় হলেও ভিডিও রেকর্ড করে বিতরণ করা পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। পুলিশের এই বিষয়টি মামলার পরবর্তী শুনানিতে আদালতকে অবহিত করা হবে।’
বিদেশি ওই নারীর বক্তব্য নিজের মুঠোফোনে ধারণ করার কথা স্বীকার করেছেন ফেনী মডেল থানার ওসি মো. শামসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ওই নারী আমাদের কাজে খুশি হয়ে পুলিশের প্রশংসা করেছেন, যা পজিটিভ চিন্তা করে আমরা প্রচার করার জন্য বলেছি। ওই নারীর বক্তব্যে ধর্ষণের কোনো বিষয় উঠে আসেনি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটি প্রচারের পর বিরূপ মন্তব্য হবে, বিষয়টি আমাদের ধারণায় ছিল না। আমি লজ্জিত, বিষয়টিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।’
গত সোমবার ফেনী সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করা হয়। মামলাটিতে মোখসুদুর রহমান (৪৮) নামের একজন এবং অজ্ঞাতপরিচয় দুজনকে আসামি করেন থাইল্যান্ডের নাগরিক ওই নারী। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোখসুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, থাইল্যান্ডের বাসিন্দা ওই নারী হংকংয়ে ব্যবসা করতেন। এর সূত্রেই সেখানে মোখসুদুরের সঙ্গে পরিচয়। ভিসা জটিলতায় মোখসুদুর গ্রেপ্তার হয়ে হংকংয়ের কারাগারে ছিলেন। তখন তাঁকে কারামুক্ত হতে সাহায্য করেন ওই নারী। কারামুক্ত হয়ে মোখসুদুর রহমান বাংলাদেশে চলে আসেন। বিয়ের আশ্বাসে বাংলাদেশে ডেকে এনে গত বছরের ১২ অক্টোবর ওই নারীকে মোখসুদুর ধর্ষণ করেছেন বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়।
মামলার এজাহারে এ ছাড়া অভিযোগ করা হয়, মোখসুদুরকে ব্যবসার জন্য ২ লাখ ১০ হাজার হংকং ডলার ও বেশ কিছু স্বর্ণালংকার দিয়েছেন ওই নারী। ধর্ষণের ঘটনার পর নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি এসব টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য মোখসুদুরকে বলেন। পুনরায় বাংলাদেশে এসে গত রোববার মোখসুদুরের বাড়িতে গেলে তাঁকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ সময় ওই নারীর ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
২০১৯ সালের ২৭ মার্চ এক মাদ্রাসাছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তাঁর মা ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানায় একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেন। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জিজ্ঞাসাবাদের নামে ওই মাদ্রাসাছাত্রীর বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড করেন। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় সাইবার আইনে মামলা হলে সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের আট বছরের কারাদণ্ড হয়।