বছরের শুরুতে উইন্ডিজের কাছে সিরিজ হেরেই শেষ হয়েছিল সরাসরি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার আশা। গত বৃহস্পতিবার ক্যারিবীয় মেয়েদের কাছে হেরেই হুমকির মুখে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন। তাই বলে সবকিছু একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। আজ শেষ গ্রুপ ম্যাচে স্বাগতিক পাকিস্তানকে হারাতে পারলে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে যাবেন জ্যোতি-শারমিনরা। এমনকি অল্প ব্যবধানে হারলেও বিশ্বকাপে যাবেন তারা। এজন্য অন্যান্য খেলার ফলের ওপর নির্ভর করতে হবে। 

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে রীতিমতো উড়ছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে টানা তিন ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান নিয়েছিল তারা। কিন্তু চতুর্থ ম্যাচে এসে হোঁচট খায় বাংলাদেশ। উইন্ডিজের কাছে হারে ৩ উইকেটে। অথচ এ ম্যাচ জিততে পারলে পাকিস্তানের মতো তারাও এক ম্যাচ হাতে রেখে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে যেত। কিন্তু এ দিন ব্যাটিং-বোলিং উভয় বিভাগে ব্যর্থ হয় তারা। ব্যাটিংয়ে দারুণ ফর্মে থাকা অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি মাত্র ৫ রানে বোল্ড হয়ে যান। ফারজানা ও শারমিন বড় জুটি গড়লেও অন্যরা ব্যর্থ হন। বল হাতে ক্যারিবীয়দের চাপে রাখতে পারলেও শেষ পর্যন্ত জয় এনে দিতে পারেননি নাহিদা-ফাহিমারা। 

ছয় দলের এই বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব থেকে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দল আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ভারতে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপের টিকিট পাবে। টানা চার ম্যাচ জিতে ইতোমধ্যে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান। চার ম্যাচে তিন জয় নিয়ে বাংলাদেশ আছে পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে। চার ম্যাচের দুটি জিতে তাদের পরে আছে স্কটল্যান্ড ও উইন্ডিজ। আয়ারল্যান্ড ও থাইল্যান্ডের আসর শেষ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় স্থানের জন্য এখন বাংলাদেশ, স্কটল্যান্ড ও উইন্ডিজের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। 

এ তিন দলের মধ্যে বাংলাদেশ কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। আজ পাকিস্তানকে হারাতে পারলে বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের। হেরে গেলেও সুযোগ থাকবে। এর কারণ হলো বাংলাদেশের নেট রান রেট (১.

০৩৩) বেশ ভালো। শেষ ম্যাচ বাংলাদেশ হারলে এবং স্কটল্যান্ড (০.১৩৬) ও উইন্ডিজ (-০.২৮৩) নিজ নিজ খেলায় জিতলে তিন দলের পয়েন্ট হবে সমান ৬। তখন নেট রান রেটের ভিত্তিতে নেওয়া হবে এক দলকে। 

২০২৫ নারী বিশ্বকাপের আসর বসবে সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে ভারতে। বাংলাদেশ মাত্র একবারই ৫০ ওভারের টুর্নামেন্টটি খেলেছে, ২০২২ সালে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব শ বক প র উইন ড জ

এছাড়াও পড়ুন:

অন্তহীন দুঃস্বপ্নে বন্দি গাজার বাসিন্দারা

ইসরায়েলের বর্বর বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে গাজা। আশ্রয়কেন্দ্র, ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, মসজিদ কোনো কিছুই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে চলেছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকার বাসিন্দারা। যেখানেই তারা আশ্রয় নিচ্ছে, হামলা করে তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। গুলি ছোড়া হচ্ছে যাত্রাপথেও। যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও হামলা শুরুর পর এক মাস ধরে গাজায় কোনো খাদ্য সহায়তা ঢুকতে দেয়নি দখলদার ইসরায়েল। খাবার, পানি, চিকিৎসার অভাব এবং চারদিকে বিস্ফোরণের মধ্যে গাজাবাসী যেন এক অন্তহীন দুঃস্বপ্নে বন্দি হয়ে পড়েছে। এ দুর্দশার কোনো শেষ নেই। আশা নিয়ে বেঁচে থাকা তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। 

১৮ মাস ধরে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় স্বাস্থ্যসেবা বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ২১টি আংশিকভাবে সেবা দিচ্ছে। চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ডা. উইসাম সুক্কার ও তাঁর দল উত্তর গাজার একটি অফিসকে ক্লিনিকে রূপান্তর করেছেন। তারও একটা অংশ বোমা হামলায় ধসে পড়েছে। 

তিনি বলেন, খুব সীমিত সম্পদ নিয়ে এই কঠিন পরিস্থিতিতেও আমরা উত্তর গাজায় থাকার চেষ্টা করছি। খাবার ও পানির অভাবের কারণে এখানে অপুষ্টি এবং বিভিন্ন রোগব্যাধি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। পেটেরপীড়া থেকে শুরু করে চর্মরোগ খুব সাধারণ হয়ে পড়েছে। আমরা অনেক শিশুকে পাই যারা শ্বাসনালির সংক্রমণ ও ডায়রিয়ায় ভুগছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় একই জায়গায় অনেক শিশু থাকে এবং ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমাদের চ্যালেঞ্জ ক্রমেই বাড়ছে। কারণ বিপুলসংখ্যক রোগীর বিপরীতে চিকিৎসা সরঞ্জাম খুবই কম। এ ছাড়া আমরা জটিল সমস্যা পাই এবং আমরা জানি না যে এই রোগীদের কোথায় পাঠাতে হবে। কারণ গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। 

ক্লিনিক থেকে বের হওয়ার সময় সুক্কার তাঁর পরিবারকে ফোন করে, যারা গত দেড় বছরে তাঁর সঙ্গে ৯ বার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তিনি বলেন, গাজার অন্যদের মতো আমার শিশুদের জন্যও পরিষ্কার পানি ও খাবার নিশ্চিত করতে প্রতিদিন যুদ্ধ করতে হয়। আমাদের বিদ্যুৎ নেই, সব জায়গায় মোবাইল ফোনের ব্যাটারি চার্জ করার ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে বড় কথা, কোনো আশা রাখা সত্যিই কঠিন। আমরা এমন এক দুঃস্বপ্নের মধ্যে বাস করছি, যা শেষ হচ্ছে না। এই যুদ্ধ কখন শেষ হবে? 

গতকাল শনিবারও গাজাজুড়ে ভয়াবহ ইসরায়েলি হামলা চালানো হয়েছে। দক্ষিণে রাফাহ ও খান ইউনিস থেকে শুরু করে উপত্যকায় কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নুসাইরাত শরণার্থী শিবির, উত্তরে বেইত লাহিয়া এবং বেইত হানুনে হামলা চালানো হয়েছে। বিশেষ করে খান ইউনিসের আশপাশের এলাকায় তিনটি পৃথক অভিযানে ১১ জন নিহত হয়েছেন। সবমিলিয়ে শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৭০ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মাস ধরে ইসরায়েলের হামলায় উপত্যকায় কমপক্ষে ৫১ হাজার ৬৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন আহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) একটি জরুরি সতর্কতায় জানিয়েছে, গাজার এখনই খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। সেখানে লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। ইসরায়েলি বোমা হামলা এবং অবরোধের কারণে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে না পেরে মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ