অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কত দিন ক্ষমতায় থাকবে বা থাকা উচিত, সে বিষয়ে দেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এ আলোচনা মূলত দুটি কারণে তৈরি হয়েছে: এক. দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপি নির্বাচনের জন্য সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করছে; দুই. সংস্কার, আওয়ামী লীগের বিচার এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মতবিরোধ।

এই বিতর্কের গভীরে প্রবেশ করার আগে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের পূর্ববর্তী সরকারগুলোর পার্থক্য বিবেচনা করা দরকার। বাংলাদেশ রাষ্ট্র তৈরি হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সরকার আগে গঠিত হয়নি। মনে রাখতে হবে, এটি কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয় বা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত কোনো ‘সেনা-সমর্থিত’ সরকারও নয়; বরং এটি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সংঘটিত ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত একটি সরকার।

বিগত সরকার দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে দেশকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকারকে সুদূরপরাহত করা হয়েছিল। সেই ভঙ্গুর দেশকে সামনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের কাঁধে। প্রায় দেড় হাজার শহীদ ও ২০ হাজার মানুষ আহত হওয়ার বিনিময়ে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার প্রতি জনমানুষের প্রত্যাশা বেশি থাকবে, এটা স্বাভাবিক।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার সীমিত সামর্থ্য দিয়ে সেই আকাশ পরিমাণ স্বপ্নকে বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে; এর বড় উদাহরণ এবারের পুরো রমজানে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরে রাখা। পাশাপাশি এবারের ঈদযাত্রায় সরকার যানজট নিরসন করে জনগণের ভোগান্তি লাঘব করতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে বিপর্যয় হয়েছিল, তার উন্নতিতেও এই সরকার যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। ফলে এই সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ও প্রত্যাশা—দুটিই দিন দিন বাড়ছে, কেউ কেউ এমনটা মনে করেন।

আমাদের দেশের মানুষকে এ রকম গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী সরকারের প্রতি আস্থাশীল হতে দেখা যায়। এর অন্যতম কারণ হলো নির্বাচনের পর যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসুক, তাদের ও জনতার মধ্যে একধরনের অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়। তাঁরা নিজের রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ভিড় ছাপিয়ে সাধারণ মানুষের মনের কথা খুব কমই শোনার সুযোগ পেয়ে থাকেন। সে কারণে শুধু নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রচর্চার মধ্য দিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কয়েক দশক ধরে বারবার ব্যর্থ হয়েছে।

আরও পড়ুনরাজনৈতিক দল সংস্কার একবারে হয় না  ২২ ঘণ্টা আগে

সুষ্ঠু নির্বাচন কি ভালো সরকার তৈরি করতে পারছে?

বাংলাদেশে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত চারটি সাধারণ নির্বাচনকে দেশ-বিদেশের প্রায় সব মহলেই গ্রহণযোগ্য ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে এই চারটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারগুলো তাদের পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে; বরং এই ২০ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলোর কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রবণতাই প্রাধান্য পেয়েছে।

দুর্নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ক্রমাগত শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখা, সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক দলীয়করণ, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতের দমন-পীড়ন, নির্বাচনী সহিংসতা এবং বিরোধী দল হিসেবে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা—এসবই ছিল সেই সময়ের রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের প্রতি একধরনের অনীহা ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে।

ক্ষমতাসীন হয়েও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো, তারা ক্ষমতাকে জনগণের সেবায় নয়, দলীয় ও ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। ক্ষমতায় থাকাকালে তারা প্রধানত বিরোধী দলকে দমন ও ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার কৌশলেই ব্যস্ত থেকেছে। অন্যদিকে বিরোধী দল হিসেবে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো (১৯৯১-২০০৮) সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধার সৃষ্টি ও দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে।

এই দুষ্টচক্রের কারণে কোনো নির্বাচিত সরকারই ক্ষমতার মোহ কাটিয়ে প্রকৃত জনকল্যাণমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। জাতির এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরও কিছু সময় ক্ষমতায় থাকা উচিত’ এ ধরনের গুঞ্জন জনমনে শোনা যাচ্ছে।

আরও পড়ুনস্থানীয় সরকার নিয়েই মানুষ বেশি চিন্তিত১৬ এপ্রিল ২০২৫

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ

বর্তমানে বাংলাদেশ বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণভাবে ইতিহাসের এক জটিল ও চ্যালেঞ্জিং পর্যায় অতিক্রম করছে। আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় রাজনৈতিক দলের জনরোষের মুখে পড়ে প্রায় দেশছাড়া হওয়ার অবস্থা তৈরি হওয়া অথবা রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে প্রায় নির্বাসিত হওয়ার মতো ঘটনা—দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

একইভাবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কও একটি স্পর্শকাতর ও জটিল পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ভারতের প্রতি
অত্যধিক নির্ভরশীলতা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ দেশের সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া ভারতীয় মূলধারার মিডিয়ায় বাংলাদেশ বিরোধী প্রোপাগান্ডা এই ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের অপর প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধ একটি আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসাকে বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতির জন্য একটি ট্রান্সফরমেটিভ পর্যায় (রূপান্তর বা পরিবর্তন) হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনি নতুন শুল্কনীতি প্রবর্তন করে বিশ্ববাণিজ্যে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছেন, যা বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তার পররাষ্ট্রনীতি এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ভূরাজনৈতিক মেরুকরণ তৈরি করতে পারে, যার প্রভাবে বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক চীন সফর এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ভারতের একচ্ছত্র প্রভাব বৃদ্ধির বিপরীতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার এই কৌশল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সামগ্রিকভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে আলোচনা শুরু করেছে; অন্যদিকে চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কূটনৈতিক সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। এই দ্বৈত কৌশল বাংলাদেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশকে প্রস্তুত করবে।

এই পটভূমিতে মুহাম্মদ ইউনূসের বৈশ্বিক সুনাম ও নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের জন্য একটি কূটনৈতিক সম্পদ হিসেবে কাজ করছে। বর্তমানে আমরা এক ঐতিহাসিক সময়ের মুখোমুখি হয়েছি, যখন প্রথমবারের মতো অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জন্য একটি আঞ্চলিক ‘সফট পাওয়ার’ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান সাফল্য হতে পারে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জাতীয় সংহতি ধরে রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভারসাম্যপূর্ণ নীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক সংঘাত প্রশমিত করে দেশকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়াই এখন সবচেয়ে জরুরি। এ মুহূর্তে কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক সম্প্রীতিকে কতটা সাফল্যের সঙ্গে ধরে রাখতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

তড়িঘড়ি নির্বাচন সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করবে

বর্তমানে তড়িঘড়ি নির্বাচন হলে যে সমস্যাটি দেখা দিতে পারে, তা হলো সংস্কারের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া। বর্তমানে সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব মতামত প্রকাশ করতে শুরু করেছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সবার মতামতের ভিত্তিতে এই সংস্কারগুলোর বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রস্তুত করছে। এ মুহূর্তে সংস্কার সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকা উচিত। কারণ, বাংলাদেশের ইতিহাসে দেখা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার বাস্তবায়নের ব্যাপারে বরাবরই অনীহা প্রকাশ করে এসেছে।

১৯৯০ সালের তিন জোটের রূপরেখায় যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল, বিএনপি ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর সেগুলো বাস্তবায়নে সফল হতে পারেনি। পরে ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল, আওয়ামী লীগ সরকার তার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রস্তাব বাতিল করে দেয় এবং বাকি সংস্কারগুলোর ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন আনে। ফলে শহীদদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ যদি যথাযথ সংস্কার ছাড়াই নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয়, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো এসব সংস্কার বাস্তবায়নে কতটা আগ্রহী হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

একটি গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হলো পূর্ববর্তী সময়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা। এই বিচার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদিও ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে, তবু রাজনৈতিক দলগুলোর তুলনায় অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। কারণ, নির্বাচিত সরকারগুলোকে ক্ষমতায় আসার পর নানা ধরনের চাপের মুখোমুখি হতে হয়; বিরোধী দলের চাপ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ এবং নিজেদের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের দায়বদ্ধতা। ফলে তাদের পক্ষে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু বিচার কার্যক্রম পরিচালনা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। এ কারণে এ কাজগুলো সম্পাদন না করে নির্বাচন দিলে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হতে পারে।

এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এমন সব কাজ সম্পাদনের জন্য চাপ প্রয়োগ করা, যা ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকারের পক্ষে বাস্তবায়ন করা কঠিন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিচার এবং সামগ্রিক সংস্কার বাস্তবায়ন অন্যতম। তাই এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই সরকারকে এমন একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর সমাধান করে যেতে পারে।

সরকারের মেয়াদ কীভাবে নির্ধারিত হবে?

এ প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে দুটি বিষয়ের ওপর। প্রথমটি হলো জনগণের আকাঙ্ক্ষা আর দ্বিতীয়টি হলো রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন, আওয়ামী লীগের বিচার ও সামগ্রিক সংস্কারবিষয়ক কর্মপরিকল্পনা। সরকারের উচিত হবে এই দুটি বিষয়ের ওপর ঐকমত্য তৈরি করে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা। সেটি শুধু নির্বাচনী রোডম্যাপ নয়, বরং সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের একটি সামগ্রিক রোডম্যাপ।

এই পটভূমিতে যদি ‘ছোট সংস্কার’/ ‘বড় সংস্কার’ বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে চলতি বছরের ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী জুনে নির্বাচনের পরিকল্পনা করা হয়, তবে সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়াকে একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে উত্তরণ করা সম্ভব হতে পারে। এই সময়সীমার বিষয়ে সব মহলে ঐকমত্য তৈরি হলে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ও অন্য দলগুলোর জন্য বেশ কিছু সুবিধা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

প্রথমত, সংস্কার ও বিচারবিষয়ক মূল কাজগুলো সম্পাদন করা হলে নির্বাচন–পরবর্তী যারাই ক্ষমতায় আসবে, তাদের জন্য দেশ পরিচালনা করা তুলনামূলক সহজ হবে। দ্বিতীয়ত, এ সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলে পরবর্তী সরকারের জন্য একটি স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হবে। তৃতীয়ত, মুহাম্মদ ইউনূসের দক্ষতা, বৈশ্বিক সুনাম ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৌশলগত সার্বভৌমত্ব (স্ট্র্যাটেজিক অটোনমি) অর্জন করতে পারবে, যা পরবর্তী সরকারকে একটি বড় ধরনের সুবিধা প্রদান করবে।

অনির্দিষ্টকালের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় থাকা যেমন কাঙ্ক্ষিত নয়, তেমনি জনগণের অভ্যুত্থান–পরবর্তী মৌলিক আকাঙ্ক্ষার ন্যূনতম বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনও গ্রহণযোগ্য হবে না। এই দুইয়ের মধ্যে একটি যৌক্তিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ২০২৬ সালের জুনকে মাথায় রেখে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের একটি সমন্বিত রূপরেখা প্রণয়নের ব্যাপারে সব পক্ষ একযোগে কাজ করলে বাংলাদেশের জনগণ উপকৃত হবে।

 এস কে তৌফিক হক অধ্যাপক ও পরিচালক, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

সৈয়দা লাসনা কবীর অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মোহাম্মাদ ঈসা ইবন বেলাল গবেষণা সহযোগী, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল দ শ র জন য ক ষমত য় থ ক র জন য একট সরক র র প র র জন ত ত সরক র সরক র য দলগ ল র ঐকমত য জনগণ র পর য য় ল র জন ক রগ ল ক জ কর প রস ত স ফল য ন র জন ধরন র হওয় র অবস থ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় নিষিদ্ধ সংগঠনের ঝটিকা মিছিল নিয়ে যা বলছে পুলিশ 

নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও তাদের সমভাবাপন্ন বিভিন্ন সংগঠন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। 

শনিবার (১৯ এপিল) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স) উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, পুলিশের গতিবিধি অনুসরণ করে তারা কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় গাড়ি থেকে নেমে দু-এক মিনিট মিছিল করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে এসব মিছিলের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে তাদের অস্তিত্বের জানান দেয়।

তিনি আরো জানান, এসব দুর্বৃত্তদের তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও পরবর্তীতে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অনেককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন ও বেআইনি এসব সংগঠনের অপতৎপরতা রোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে। সর্বসাধারণকে এসব সংগঠনের বিচ্ছিন্ন অপতৎপরতা সম্পর্কে অহেতুক আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এই ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার ও সরকার পতন আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতাকে ’হত্যা’ ও অসংখ্য মানুষের ‘জীবন বিপন্ন‘ করা এবং বিভিন্ন সময় ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়।

ঢাকা/এমআর/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
  • সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দাবি
  • ঢাকায় নিষিদ্ধ সংগঠনের ঝটিকা মিছিল নিয়ে যা বলছে পুলিশ 
  • ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে
  • অযত্নে ভাসানীর স্মৃতিচিহ্ন, বিলুপ্তপ্রায় প্রতিষ্ঠানগুলোও
  • সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলির আবেদন শুরু
  • সচিবালয়ে বৈঠকে সন্তুষ্ট নন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা, আন্দোলন চলবে
  • রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শিথিল করল পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা
  • সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসবে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, শিথিল থাকবে রেল ব্লকেড কর্মসূচি