‘মৌলিক সংস্কার’ বলতে কী বোঝাতে চাইছে জাতীয় নাগরিক পার্টি
Published: 19th, April 2025 GMT
নির্বাচনের সময় নিয়ে ‘স্পষ্ট’ হওয়ার জন্য বিএনপি যেদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করল, সেদিনই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলল, মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া নির্বাচন দিলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি যেখানে ন্যূনতম বা জরুরি সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে, সেখানে ‘মৌলিক পরিবর্তন’ বলতে এনসিপি কী বোঝাতে চাচ্ছে, সেই আলোচনাও সামনে এসেছে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গঠিত দলটির নেতারা বলছেন, মৌলিক পরিবর্তন বা সংস্কার মানে হচ্ছে ক্ষমতার ভারসাম্য। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বর্তমান ক্ষমতাকাঠামো এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এ ব্যবস্থা সংবিধানের মাধ্যমে সমর্থিত হওয়ার কারণেই শেখ হাসিনার সরকার ‘ফ্যাসিবাদী’ হয়ে উঠতে পেরেছিল। ফলে কোনো বড় রাজনৈতিক দল যদি রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোকেন্দ্রিক সংস্কারের বিরোধিতা করে অন্য সব সংস্কারে রাজিও হয়, তাতে দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে না।
ন্যূনতম সংস্কার বলতে কিছু নেই। সংস্কার মানেই মৌলিক গুণগত পরিবর্তন। মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে সবাইকে একমত হতে হবে।নাহিদ ইসলাম, আহ্বায়ক, এনসিপিমৌলিক সংস্কার বলতে এনসিপির শীর্ষ নেতারা অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কিছু প্রস্তাবের কথা বলছেন। সব প্রস্তাবই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার সঙ্গে যুক্ত। এগুলো হলো প্রধানমন্ত্রীর একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সংসদ নেতা হওয়ার সুযোগ বন্ধ করা, একজন ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালনের সুযোগ, সাংবিধানিক বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী, সরকারি দল ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিসহ জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসি গঠন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে নিম্নকক্ষে সংসদীয় আসন ও উচ্চকক্ষ আনুপাতিক ভোটভিত্তিক নির্বাচনের ব্যবস্থা এবং সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি).উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরার শিশু ধর্ষণ: বিচারব্যবস্থাকে যেভাবে বদলে দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
মাগুরার শিশুটি ধর্ষণের পর মৃত্যুর এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে দেখছিলাম। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি, সেটা হলো দীর্ঘসূত্রতা। একটি মামলার নিষ্পত্তি হতে হতে অনেক সময় একটি প্রজন্মই পার হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ যখন আদালতের দরজায় যেতে চান, তখন তিনি ন্যায়বিচারের আশায় যান।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন—সময়, টাকা আর ধৈর্য তিনটাকেই হার মানাতে হয়। তখন মানুষ শুধু হতাশই হন না, বিশ্বাস হারান পুরো ব্যবস্থার ওপর।
তবে আজকের দিনে এসে আমরা আর একা নই। আমাদের পাশে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), যেটি ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বিচারব্যবস্থার এই দীর্ঘসূত্রতা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। ব্যাপারটা এমন না যে এআই এসে বিচারকের জায়গা নিয়ে নেবে—বরং, এআই বিচারকের কাজে সহায়ক হতে পারে, আর আগে থেকে যে প্রক্রিয়াগুলো অতি ধীরগতির ছিল, সেগুলোকেই গতি দিতে পারে।
যেমন ধরা যাক, একটা মামলা ফাইল করার প্রক্রিয়ায় কী কী দরকার—নথি তৈরি, আগের রায় খুঁজে আনা, আইনি ধারা অনুসন্ধান, ডেটা অর্গানাইজ করা ইত্যাদি। এই কাজগুলো করতে একজন আইনজীবী বা সহকারী অনেক সময় ব্যয় করে। কিন্তু এআই টুল দিয়ে এসব কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায়। এর ফলে কাগজপত্র ঠিকঠাক জমা পড়ে, ভুল কম হয়, এবং বিচারক সরাসরি মূল বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারেন।
যদি এআই বা অন্য ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে সিস্টেমটা একটু গুছিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে মানুষকে দিনের পর দিন কোর্টে ঘুরে বেড়াতে হবে না, মামলার নথি হারিয়ে যাবে না, কিংবা বছরের পর বছর শুনানির তারিখ পিছিয়ে যাবে না। মানুষ তখন অন্তত বুঝতে পারবেন—তাঁর কণ্ঠস্বর কেউ শুনছে, বিচারব্যবস্থাটা তাঁর পাশে আছে।এ ছাড়া এআই দিয়ে অগ্রাধিকার নির্ধারণও করা যায়—মানে কোন মামলা আগে শুনানি দরকার, কোনটা অপেক্ষা করতে পারে, বা কোনটা জরুরি। এআই আগের রায় বিশ্লেষণ করে বলতেও পারে, একটি মামলার নিষ্পত্তিতে সাধারণত কত সময় লাগে। এতে মামলা ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর হয়, মানুষও একটা ধারণা পান, তাঁর মামলা কত দূর এগোল। এই জিনিসগুলোর প্রায় সবকিছুই অনলাইনে দেখছেন উন্নত দেশগুলোর মানুষ।
এভাবে শুরুতেই যদি এআই বা অন্য ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে সিস্টেমটা একটু গুছিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে মানুষকে দিনের পর দিন কোর্টে ঘুরে বেড়াতে হবে না, মামলার নথি হারিয়ে যাবে না, কিংবা বছরের পর বছর শুনানির তারিখ পিছিয়ে যাবে না। মানুষ তখন অন্তত বুঝতে পারবেন—তাঁর কণ্ঠস্বর কেউ শুনছে, বিচারব্যবস্থাটা তাঁর পাশে আছে।
মাগুরার শিশুটির মৃত্যুর খবরে সাত দিনের যে একটা টাইমলাইন ছিল, সেটাও হারাত না। আমাদের জন্য এ ধরনের জিনিসগুলো খুবই কষ্ট দেয়। সরকারের ইচ্ছে আছে, কিন্তু টুলের অভাবে সরকারকে অকারণে গালি খেতে হচ্ছে।
সুতরাং বিচারব্যবস্থার এই অকারণ দেরি, এই হাহাকার আমরা চাইলে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে অনেকটাই কমিয়ে ফেলতে পারি। দরকার শুধু ইচ্ছা, নেতৃত্ব, আর সিস্টেমের সঙ্গে প্রযুক্তির একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা। তাহলেই মানুষ বলবে—‘বিচার পেতে এত দিন লাগত, এখন তো তাড়াতাড়ি হচ্ছে!’ এবং এই প্রযুক্তির শীর্ষে থেকে এগুলো আমাদের ‘সলভ’ করতে হবে। আমাদের স্পর্শ করতে পারতে হবে প্রতিটি মানুষের জীবন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করি বলে সরকার চাইলে এই জায়গায় সহায়তা দিতে রাজি আছি। জীবনের শুরুতে সামরিক বাহিনীতে ঢুকেই আমরা একটা জিনিস শিখেছিলাম, জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড।
রকিবুল হাসান টেলিকম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় মানবিক রাষ্ট্র বইয়ের লেখক