এবারের সেরা ‘ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ’ চট্টগ্রামের অভিষেক দাশ
Published: 19th, April 2025 GMT
এবছরের সেরা ‘ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ’ হয়েছেন চট্টগ্রামের অভিষেক দাশ। শুক্রবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাঁকজমকপূর্ণ এক আয়োজনে ষষ্ঠ পর্বের সেরা বাংলাবিদ নির্বাচন করা হয়। ছয়জনের উপস্থিতিতে ইতিহাস, বানান, সাহিত্য, শব্দার্থ, কবিতা, সংস্কৃতি বিভাগে জমজমাট প্রশ্নোত্তর, শব্দসৃষ্টি, শব্দরহস্যসহ বেশকয়েকটি পর্বের প্রতিযোগিতায় সেরাদের বাছাই করা হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেরা বাংলাবিদ হয় যথাক্রমে রিফা তাসনিয়া ও রশ্মি তুলতুল চৌধুরী। চূড়ান্ত পর্বের উপস্থাপনা করেন জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম।
দেশজুড়ে দীর্ঘ ১০ মাস ধরে বাছাইপর্ব এবং স্টুডিও পর্ব শেষে সেরা ছয়জন বাংলাবিদকে নিয়ে আয়োজিত হয় এ প্রতিযোগিতা। চূড়ান্ত পর্যায়ের সেরা ৬ বাংলাবিদ ছিলেন বরিশালের আদিবা মহসিন, সিলেটের প্রিয়ন্তি দাশ প্রান্তি, চট্টগ্রামের রশ্মি তুলতুল চৌধুরী, খুলনার সানিয়ান শুভ্র বিশ্বাস, ঢাকার রিফা তাসনিয়া, চট্টগ্রামের অভিষেক দাশ। দেশজুড়ে ৯টি অঞ্চলের বাছাই পরীক্ষা এবং ১৯টি স্টুডিও পর্বের জমজমাট প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশব্যাপী লক্ষাধিক শিক্ষার্থী থেকে বাছাই করে নেওয়া হয় শীর্ষ ছয় প্রতিযোগিকে। এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিযোগিদের কণ্ঠে গাওয়া গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এছাড়াও আগুন, মাশা এবং ফেরদৌস গান পরিবেশন করেন।
মহোৎসবের সেরা ৬ বাংলাবিদের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকারী জিতে নেবেন ১০ লাখ টাকার মেধাবৃত্তি এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী পাবেন যথাক্রমে ৩ লাখ ও ২ লাখ টাকার মেধাবৃত্তি। এ ছাড়া প্রথম ১০ জন প্রতিযোগী পাচ্ছেন একটি ল্যাপটপসহ ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার করার জন্য ৫০ হাজার টাকার বাংলা বই ও বইয়ের আলমারি।
নতুন প্রজন্মের কাছে শুদ্ধ বাংলা, বানান ও ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননকে শাণিত করা এবং বাংলাকে হৃদয়ে ধারণ করানোর উদ্দেশ্যে ইস্পাহানি মির্জাপুরের উদ্যোগে ও পৃষ্ঠপোষকতায় চ্যানেল আইয়ে প্রচার হয় প্রতিযোগিতাটি।
শুক্রবারের উৎসবে উপস্থিত ছিলেন ইস্পাহানি টি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর হান্নান এবং চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজ।
ওমর হান্নান তার বক্তৃতায় জানান, এবার প্রথম বাংলাবিদ প্রতিযোগিতায় মাদ্রাসা এবং ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছিলেন। শীর্ষ ছয়জনের মধ্যেও একজন ইংরেজি মাধ্যমের একজন রয়েছেন।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন অতিথি বিচারক বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ফজলুল হক, প্রতিযোগিতার প্রধান বিচারক লেখক আনিসুল হক, বিচারক অভিনয়শিল্পী ত্রপা মজুমদার ও বিচারক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তারিক মনজুর। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, শাইখ সিরাজ, ইস্পাহানি গ্রুপের পরিচালক জাহিদা ইস্পাহানী, মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি, ইমাদ ইস্পাহানি, ড.
রাজশাহীর ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী বাংলাবিদ তৌফিক আলম এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মুহাম্মাদ ইবরাহিমকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
‘কী সুন্দর তাই না, একজন শিক্ষকের এই পরিণতি’
‘কী সুন্দর তাই না! আমার বাবা কত মানুষকে ঘরে রেখে পড়িয়েছেন, কত মানুষকে টাকা ছাড়া পড়িয়েছেন, কত মানুষের ফি মওকুফ করেছেন। আজ একজন শিক্ষকের এই পরিণতি!’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী চৌধুরী (টিএসি) উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্যকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করানোর অভিযোগ উঠেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুক পোস্টে এ কথা লেখেন ওই শিক্ষকের মেয়ে ভাবনা আচার্য। বাবাকে পদত্যাগপত্রে সই করানোর ঘটনার ভিডিও যুক্ত করে বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। কান্তি লাল আচার্যের তিন মেয়ের মধ্যে ভাবনা আচার্য সবার ছোট। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।
কান্তি লাল আচার্যকে পদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনাটি ঘটে বুধবার। অভিযোগ উঠেছে, ওইদিন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিদ্যালয়ে মিছিল নিয়ে গিয়ে কান্তি লাল আচার্যকে ঘেরাওয়ের পর জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নিয়েছেন।
ভাবনা আচার্য ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমার বাবা কান্তি লাল আচার্য ৩৫ বছর ধরে ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। আমার বাবাকে গতকাল (বুধবার) কোনোরকম প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়া বলপূর্বক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করানো হয়। আমার বাবার কী অপরাধ, কী সমস্যা, কিছু বলা হয়নি।’
ভাবনা আচার্য লেখেন, ‘জানেন, স্কুলে ঝামেলা হওয়ার আগে বাবাকে মানা করা হয় স্কুলে যেতে। বলছিল, স্কুলে গেলে অপমান হতে হবে। বাবা সেই কথার উত্তরে বলেন, আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমার কোনো অপরাধ নেই। আমাকে পদ থেকে সরে যেতে বললে নির্দ্বিধায় আমি সরে যাব। তবুও আমি স্কুলে যাব। আমি কেন পালিয়ে বেড়াব। কেউ আমার অপরাধের প্রমাণ আনতে পারলে আনুক।’
ভাবনা আচার্য আরও লেখেন, ‘বাবাকে পদত্যাগ করানোর আগে স্কুলে ককটেল ফাটানো হচ্ছিল। আমার বাবা তখনো নির্ভীক। জোর করে সাইন করতে বলছিল এমন একটি কাগজে, যেখানে লেখা ছিল-দুর্নীতির অভিযোগে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি। বাবা নির্ভয়ে বলেছিল, আমি দুর্নীতি করিনি, এই পেজে আমি সাইন করব না। এমনিতেই পদত্যাগ করছি। সেই সময় বাবাকে একদল মারতে যায়। পরবর্তীতে, আরেকটি কাগজে লেখা হয়—ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি।’
এ ঘটনার পর বাবা অসুস্থ হয়ে গেছেন উল্লেখ করে ভাবনা লেখেন, ‘একজন শিক্ষকের এই অপমান! পৃথিবীতে একমাত্র হীন জাতি আমরা, যারা পদে পদে শিক্ষকদের টার্গেট করে এই অপমানজনক পরিস্থিতি উপহার দিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘...জানেন, আমরা মেয়েরা বাবার অপদস্থ হওয়ার ভিডিও দেখে রাতে ঘুমাতে পারছি না। ভাবুন উনি শিক্ষক নয় শুধু, উনি আমাদের বাবা। আপনার বাবার সাথে এমন হলে আপনার কেমন লাগবে বলুন!’
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ের পরিচালনায় গঠিত অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। কমিটির বর্তমান সভাপতি জামায়াত–সমর্থিত মহিউদ্দিন আহমেদ। বুধবার প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগপত্রে সই করানোর সময় মহিউদ্দিন আহমেদও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তাকেও অনেকটা জিম্মি করে রাখা হয়। তার এক আত্মীয়ের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। পদত্যাগপত্রে সই করানোর পর ভাটিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ারের গাড়িতে করে কান্তি লাল আচার্যকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়।
ভাটিয়ারী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম বলেন, বিদ্যালয়ের সাবেক কমিটিসহ প্রধান শিক্ষক নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত। তাদের শাস্তি ও পদত্যাগ দাবি করেছি। প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বলেন জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আশ্চার্য বলেন, ২০২৮ সালের মার্চ মাসে আমার চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। সাবেক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন। তা সততার সঙ্গে পালন করে আসছি। নবগঠিত অ্যাডহক কমিটি মিটিং করে আমাকে বাদ দিতে পারতো। কিন্তু আমাকে অসম্মান করে বাধ্যতামূলক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। যারা এ গর্হিত কাজ করেছে অধিকাংশ আমার ছাত্র ছিল। বলার কিছু নাই। বিচার সৃষ্টিকর্তার ওপর ছেড়ে দিলাম।