সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের ১ম ধাপ ঢাকার বৈঠক
Published: 18th, April 2025 GMT
প্রায় ১৫ বছরের বিরতি শেষে ঢাকায় গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিলেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দুই পররাষ্ট্রসচিব। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের ৯ দিন আগে এ বৈঠক হলো। দুই পররাষ্ট্রসচিবের আলোচনাকে দেখা হচ্ছে দেড় দশকের স্থবির সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের প্রথম ধাপ হিসেবে। কারণ, দুই পক্ষই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আলোচনার অন্য প্রক্রিয়াগুলো নিয়মিত রাখার ওপর জোর দিয়েছে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠক নিয়ে দুই পক্ষই আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছে। দুই পক্ষ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মো.
সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বোঝাপড়া ও অভিন্ন স্বার্থে জোর দিয়েছে। আর পাকিস্তান সম্পর্ক এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কৌশলগত সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে।
স্থবির সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনে দুই পক্ষের একমতের বিষয়গুলো তাদের সংবাদ সম্মেলন আর বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিফলিত হলেও ব্যতিক্রমও আছে। বিশেষ করে একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যার জন্য দেশটির আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান—এই অমীমাংসিত ঐতিহাসিক তিনটি বিষয়ের সমাধানের প্রসঙ্গ ঊহ্য থেকেছে পাকিস্তানের বিজ্ঞপ্তিতে।
অথচ বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের মধ্য দিয়ে সম্পর্কটা যে জায়গায় এসেছে, তাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ককে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর আশু সুরাহা জরুরি। পাকিস্তান এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমাসহ তিন সমস্যার প্রসঙ্গ ঊহ্য রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের একাধিক সদস্য জানান, আলোচনা হলেও পাকিস্তান বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়গুলো বাদ দেওয়ার নীতি অনুসরণ করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১ নভেম্বর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পরও একাত্তরে গণহত্যার জন্য ক্ষমাসহ তিন সমস্যার কথা পাকিস্তানের বিজ্ঞপ্তিতে এড়িয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশের বিজ্ঞপ্তিতে প্রসঙ্গটি উল্লেখ ছিল। এবারের মতো ২০১০ সালেও পাকিস্তান অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছিল।
এর দুই বছর পর পাকিস্তানের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকায় এসেছিলেন। ৬ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরের সময় শেখ হাসিনার হাতে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র তুলে দেওয়ার পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। ওই সময় হিনা রাব্বানি অতীত ভুলে সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন।
আরও পড়ুনপাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়াসহ তিন বিষয়ে সুরাহা চেয়েছে বাংলাদেশ১৭ এপ্রিল ২০২৫সাবেক কূটনীতিক এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঐতিহাসিক অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। সামনে রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা হলে বাংলাদেশ জবাব আশা করতে পারে। যেহেতু বাংলাদেশের দাবি যৌক্তিক, পাকিস্তান আজ না হোক কাল আমাদের দাবি মানবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
এদিকে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন একটি প্রতিবেদন ছেপেছে, যার শিরোনাম ‘শীর্ষ কূটনীতিক ১৫ বছর পর ঢাকায় বরফ গলিয়েছেন’। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ বছর ধরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের ‘শীতল যুদ্ধ’ বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। দুই পররাষ্ট্রসচিব তাঁদের বৈঠকে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য অভিন্ন ভিত্তি খুঁজে পেয়েছেন।
আরও পড়ুনবিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে : প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব৫ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রসচ ব র পরর ষ ট র জন ত ক প রসঙ গ ব ষয়গ ল র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
‘মরতেই যদি হয়, তবে বীরের মতো মরব’
গাজার আলোকচিত্রী ফাতিমা হাসৌনা জানতেন, মৃত্যু তার দুয়ারে কড়া নাড়ছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা, ইসরায়েলের হামলায় নিজের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যাওয়া, বারবার ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া, আর পরিবারের ১১ সদস্যকে হারানোর মতো কঠিন সব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তিনি গেছেন। ১৮ মাস ধরে ইসরায়েলের চালানো অনেক নির্মমতা সহ্য করেছেন ক্যামেরাবন্দি। এ ভয়াবহ বাস্তবতার মাঝেও ফাতিমার একটাই চাওয়া ছিল– তার মৃত্যু যেন নৈঃশব্দে না হয়; তিনি যেনো নীরবে চলে না যান। পৃথিবী জানুক তিনি চলে গেছেন।
গাজার ফাতিমারা এখন নতুন জীবনের স্বপ্ন না দেখে এভাবেই অনাগত নির্মম মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। ইসরায়েলের অবিরাম বোমা হামলার মধ্যে তাদের এখন তেমন কোনো প্রত্যাশা নেই। সহায়-সম্বল, স্বজন হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোফাইলে ফাতিমা লিখেন, ‘আমি মরলে, আমার সেই মৃত্যু যেন গর্জে ওঠে। আমি যেন শুধু একটুখানি খবর বা কোনো সংখ্যায় পরিণত না হই। আমি চাই এমন এক মৃত্যু, যা দাগ কেটে যাবে সময়ের বুকে, যার ছবি কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।’
গত বুধবার উত্তর গাজায় নিজ বাড়িতে বিয়ের একদিন আগে ২৫ বছরের ফাতিমা হাসৌনা ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। সঙ্গে মারা গেছেন গর্ভবর্তী বোনসহ তার পরিবারের আরও ১০ সদস্য।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি, তাদের নাগরিক ও সেনাদের ওপর হামলায় জড়িত এক হামাস সদস্যকে লক্ষ্য করে তারা এ হামলা চালিয়েছে।
ফাতিমার মৃত্যুর ঠিক একদিন আগে ঘোষণা আসে যে, তাকে নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে ফ্রান্সের একটি স্বাধীন চলচ্চিত্র উৎসবে, যা কান চলচ্চিত্র উৎসবের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয়। ইরানি নির্মাতা সেপিদেহ ফারসি নির্মিত সেই প্রামাণ্যচিত্রের নাম ‘পুট ইউর সৌল অন ইওর হ্যান্ড এন্ড ওয়াক’। এতে ফারসি ও ফাতিমার ভিডিও কথোপকথনের মাধ্যমে গাজার জীবন আর যুদ্ধের ভেতর মানুষের টিকে থাকার গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
ফারসি এটাকে বর্ণনা করছেন, ‘ফাতিমা যেন গাজায় আমার দৃষ্টিতে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন অগ্নিকন্যা, পূর্ণ ছিলেন জীবনে। আমি তার হাসি-কান্না, আশা ও নৈরাশাকে ফ্রেমবন্দি করেছি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাবান।’
ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবনযাপন করা ফারসি বলেন, তিনি আশঙ্কা করছিলেন যে ফাতিমাকে একজন আলোকচিত্রী হিসেবে তার বহুল প্রচারিত কাজের জন্য ও সম্প্রতি তথ্যচিত্রে অংশ নেওয়ার জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। তার সে আশঙ্কাই সত্যি হল।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক জায়গা, যেখানে ২০২৩ সাল থেকে ১৭০ জনেরও বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তবে কেউ কেউ এ সংখ্যা ২০৬ জন বলেও উল্লেখ করেন। নিহতদের মধ্যে আল-জাজিরাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক রয়েছেন। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান