শৈলকুপায় বিশেষ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ, খরচ কম
Published: 18th, April 2025 GMT
দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা ঝিনাইদহের শৈলকুপাতে চালু হয়েছে পেঁয়াজ সংরক্ষণের বিশেষ ‘এয়ার ফ্লো’ পদ্ধতি। চাষি ও ব্যবসায়ীরা নিজেই অল্প যায়গায় এ পদ্ধতিতে অধিক পরিমাণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারছেন। খরচও অনেক কম। নতুন চালু হওয়া পেঁয়াজ সংরক্ষণের এ পদ্ধতির সঠিক হিসাব উপজেলা কৃষি অফিসে না থাকলেও জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন জেলায় পরিদর্শনে যাচ্ছেন সরকারি কৃষি কর্মকর্তারা।
পেঁয়াজ চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি এয়ার ফ্লো মেশিনে মাত্র ১০ ফুট থেকে ১২ ফুট জায়গায় তিন থেকে সাড়ে তিনশ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি মণে এক মাসে বিদ্যুৎ খরচ মাত্র এক টাকা।
নাদপাড়া গ্রামের লিটন হোসেন মণ্ডল জানান, তিনি পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য প্রথম শৈলকুপা বাজারের আশপাশে মাচা ভাড়া করার জন্য চেষ্টা করেন। একশ মণ পেঁয়াজের জন্য ঘরের মালিক এক মৌসুমের জন্য একটি মাচার ভাড়া দাবি করেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। পরে তিনি খোঁজ পান, বাতাস দেওয়ার মেশিনের সাহায্যে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। ফরিদপুরে এই এয়ার ফ্লো মেশিন পাওয়া যায়। সেখানে যোগাযোগ করে দুটি মেশিন ৪০ হাজার টাকায় কেনেন। মেশিনের মাধ্যমে তিনি পৌর এলাকার শাহী মসজিদপাড়াতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করছেন।
তিনি জানান, এ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে চালু হলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখবেন। তিনি দুটি মেশিন বসিয়ে ছয়শ মণ পেঁয়াজ রেখেছেন; যার বিদ্যুৎ খরচ একেরারেই সামান্য। মাসে তিনি ৫শ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছেন বলে জানান। তিনি আরও জানান, এ পদ্ধতি পেঁয়াজ সংরক্ষণে পচনের কোনো ভয় নেই। সংরক্ষণ শেষে ঘাটতি হবে বছর শেষে মণে দুই কেজি। যেখানে মাচায় পেঁয়াজ রাখলে পচনের ভয় থাকে। প্রতি মণে ঘাটতি হয় ১০ থেকে ১৫ কেজির বেশি। তাঁর জানা মতে, শৈলকুপা শহরে আরও দুই জায়গাতে এ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনো আধুনিক পদ্ধতি ছিল না। এয়ার ফ্লো পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় অধিক পরিমাণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে।’ তিনি শুনেছেন, শৈলকুপায় কেউ কেউ এ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ শুরু করেছেন। এ পদ্ধতি জনপ্রিয় করতে সরকারি খরচে উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা চাষিদের পাবনাসহ বিভিন্ন জেলা পরিদর্শন করছেন।
তিনি জানান, সাধারণ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণে বছরে পচন ও শুকিয়ে ঘাটতি হয় ৩০ শতাংশ। নতুন পদ্ধতিতে ঘাটতি হবে মাত্র ৫ শতাংশ। সারাদেশে এ পদ্ধতি চালু হলে আমদানিনির্ভরতা কমবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কুবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ভুল প্রশ্ন সরবরাহ, আহ্বায়ককে অব্যাহতি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহের ঘটনা ঘটেছে। এতে ইউনিটটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহকে ভর্তি কমিটি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষা শেষে এ অভিযোগ ওঠে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির একাধিক সূত্র জানায়, ‘সি’ ইউনিটে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা প্রশ্নপত্র নির্ধারিত থাকলেও কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একাধিক হলে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতে ব্যবসায় শিক্ষার প্রশ্নপত্র তুলে দেওয়া হয়। পরে ভুল বুঝতে পেরে প্রশ্নপত্র পরিবর্তন করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
কুবিতে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
যানজটে স্বপ্ন ভঙ্গ কুবির এক ভর্তিচ্ছুর
ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমরা যারা বিভাগ পরিবর্তন করে মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, আমাদের কেন্দ্র ছিল মূলত সেই বিভাগের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু ওই ভবনের কয়েকটি কক্ষে ভুল করে আমাদের কাছে ব্যবসায় শিক্ষার প্রশ্ন দেওয়া হয়। প্রায় ৪০ মিনিট পর বিষয়টি সংশোধন করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “প্রথমে খুব নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। পরে ১ ঘণ্টার পূর্ণ সময় দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষা মোটামুটি ভালোই হয়েছে।”
চট্টগ্রাম থেকে পরীক্ষা দিতে আসা মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন, “ভুল প্রশ্ন দেওয়ার কারণে পরীক্ষার শুরুতে আমরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। বিষয়টি কক্ষ পরিদর্শকদের জানালে সেটা ফিরিয়ে নিয়ে সঠিক প্রশ্ন দেওয়া হয়।”
এ বিষয়ে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, “মানবিক বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীর কাছে ভুল করে ব্যবসায় শিক্ষার প্রশ্ন পৌঁছে যায়। রোল নম্বর যাচাই করে আমরা বিষয়টি শনাক্ত করি এবং তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ দেওয়া হয়।”
এদিকে, পরীক্ষার্থীদের ভুল প্রশ্ন প্রদানের দায়ে ওই ইউনিটের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহকে ভর্তি কমিটি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “ঘটনার পর আমি নিজে ওই কক্ষে গিয়েছিলাম। দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারপরও এমন ভুল অনাকাঙ্ক্ষিত এবং তা অপেশাদারিত্বের পরিচায়ক। দায়িত্বরতদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।”
তিনি বলেন, “এ ঘটনার জন্য ইতোমধ্যে উনাকে (আহ্বায়ক) ভর্তি পরীক্ষার সকল কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে উনাকে এ ঘটনার কারণ জানানোর জন্য শোকজ করা হয়েছে।”
ইউনিটের দায়িত্ব কাকে দেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনকে এ দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তিনি ফলাফলসহ বাকিসব কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।”
অব্যাহতির বিষয়ে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, “আমি এ ধরনের কোনো লিখিত চিঠি পাইনি। লিখিত চিঠি পাওয়ার পর মন্তব্য করতে পারবো।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী