শিশু বিকাশ কেন্দ্রের সেবা কি বন্ধের পথে?
Published: 18th, April 2025 GMT
আবু নাসের চৌধুরী। ফেনী জেনারেল হাসপাতাল শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মী। লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন। কিন্তু আট মাস বেতন পাননি বলে চিকিৎসা করাতে পারেননি। কী নির্মম বাস্তবতা! সমস্যাপূর্ণ শিশুদের চিকিৎসা করাতে যিনি এতদিন সহযোগিতা করেছেন, সেই আবু নাসের মারা গেলেন অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে।
সারাদেশের ৩৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মীরা আট মাস বেতন পাচ্ছেন না। অথচ শিশু বিকাশ কেন্দ্রে এসে আপনি শিশু ডাক্তার, ডেভেলপমেন্ট থেরাপিস্ট এবং
শিশু মনোবিজ্ঞানীর সেবা পেতে পারেন।
এক জায়গায় তিন ধরনের সেবা। অল্প খরচে অভিভাবকরা শিশুর শারীরিক, মানসিক ও বিকাশজনিত ত্রুটির চিকিৎসা করাতে পারছেন।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের চিকিৎসাও এখান থেকে দেওয়া হয়। অটিজম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, অতি চঞ্চলতা, খিঁচুনি, মৃগী রোগ ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় কথা, এখানে এসে এমন কিছু সমস্যা শনাক্ত হচ্ছে, যা হয়তো আর কিছু দিন দেরি হলে সারিয়ে তোলা প্রায় অসম্ভব বা খুব কঠিন হয়ে যেত।
এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৩৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে। তিন-চারটি বাদে বাকি সব ঢাকার বাইরে। সব কেন্দ্রই সরকারি জেলা হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে স্বাস্থ্য খাতে যে কয়েকটি সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কার্যক্রম অন্যতম। নিঃসন্দেহে এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
উন্নত বিশ্বে প্রায় প্রতিটি হাসপাতালেই এ ধরনের সেবা পাওয়া যায়। কারণ তারা জানে, শিশুরাই তাদের বড় সম্পদ। সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠন করতে হলে শিশুদের বিকাশের দিকে মনোযোগ দিতে হবে সবার আগে। তাই তারা আজ থেকে প্রায় এক শতাব্দী আগে এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে সরকারি পর্যায়ে এ ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে অনেক পরে। আরও যা কষ্টকর, এ কার্যক্রম নিয়ে স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের অবহেলা দৃশ্যমান। শিশু বিকাশ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা তারা কতটুকু অনুভব করেন, তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
শিশুর সংখ্যা বেশি হলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর সংখ্যা বাড়বে। ২০২৩ সালের ইউনিসেফের একটি রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার কমলেও প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। এটি আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে অশনিসংকেত।
কোনো কারণে এগুলো যদি বন্ধ হয়ে যায়, শিশুদের বিকাশজনিত সমস্যা প্রকট হবে, অটিজম চিকিৎসা বিঘ্নিত হবে। সর্বোপরি প্রতিবন্ধী ও মানসিক সমস্যাগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা বাড়বে। শুরুতে চিকিৎসা করাতে পারলে যে শিশুরা জনসম্পদে পরিণত হতে পারত, সেখানে তারা পরিণত হবে রাষ্ট্রের জন্য বোঝায়। নিঃসন্দেহে তা রাষ্ট্রের অগ্রগতিকে পেছনের দিকে টানবে।
তাই যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নিতে হবে। আশা করি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিনির্ধারকরা এদিকে বিশেষ মনোযোগ দেবেন। সরকারের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন করেন। সেখানে তারা কোনো প্রকার উস্কানিমূলক বক্তব্য, সহিংসতা কিংবা রাস্তা অবরোধ করেননি। প্রতিবাদের ব্যানারে বড় করে লেখা ছিল– শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন। প্রশ্ন হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী এই সরকার তাদের শান্তিপূর্ণ দাবির প্রতি সহানুভূতি দেখাবে কি?
nশ্যামল আতিক: প্যারেন্টিং বিষয়ক লেখক
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাবির সিন্ডিকেট থেকে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সিন্ডিকেট থেকে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের অপসারণ ও শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন ইউজিসি নীতিমালা বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী শিক্ষক হতে পারবে কি পারবে না, এটা আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট নির্ধারণ করে দিতে পারে না। প্রশাসন রাতের বেলা আওয়ামী সিন্ডিকেটের সঙ্গে মিটিংয়ে বসেন আবার দিনের বেলা বয়ান দেন তারা আওয়ামী বিরোধী। আওয়ামী শিক্ষকদের ক্ষেত্রে আপনারা সুশীলগীরি দেখাবেন না। এরা শ্রেণিকক্ষে ভিন্ন মতে বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে হেনস্থা ও পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে দিত। ইউজিসির নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। কেননা আপনারা নীতিমালা সংযোজন করে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করেন। নিজেদের ছেলে-মেয়ে এমনকি জামাতাকে পর্যন্ত শিক্ষক হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, আজকে যদি ৫ আগস্ট না আসত এবং আওয়ামী সরকারের পতন না হত, তাহলে যে শিক্ষকগুলো আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছে তাদের অবস্থা আওয়ামী শিক্ষকরা কী করত? তারা এত সহনশীলতা দেখাত না। তাদের প্রত্যেকের অবস্থা আজ খারাপ হত। অথচ বিপ্লবের দীর্ঘ প্রায় নয় মাস পার হলেও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা এখনও বহাল তবিয়তে আছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই দ্রুত তাদের অপসারণ করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আকিল বিন তালেব বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আবার রাস্তায় দাঁড়াতে হবে এটি আমরা কখনো ভাবিনি। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের যে ভূমিকা আমরা দেখতে পাচ্ছি তাতে ব্যথিত হওয়া ছাড়া কিছু বলার নেই। উপাচার্য স্যারের কাছে আমরা যে সংস্কারের দাবিগুলো জানিয়েছি, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। নয়তো আমরা আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম শহীদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র মিশনের সভাপতি জি এ সাব্বির, ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসভাপতি আমান উল্লাহ, ছাত্রদল কর্মী নাসিম আহমেদ প্রমুখ। এ সময় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।