কোনো জাতির উন্নয়নের সর্বাধিক আলোচিত ও স্বীকৃত মাপকাঠি হলো শিক্ষা। লৈঙ্গিক সমতা অর্জনের প্রথম ও প্রধান ধাপ হলো ছেলেমেয়ে উভয়েরই শিক্ষায় সমভাবে এগিয়ে থাকা। আজকের বাংলাদেশে এসে এ কথা বলা মনে হয় খুব অসত্য হবে না, আমরা এ ধাপ ভালোভাবে পেরিয়ে এসেছি। কারণ, প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগামী দেশগুলোর মতো আমাদের মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভালো করছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছেলেদের পেছনে ফেলেছে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) প্রকাশিত সর্বশেষ ২০২৪ সালের মার্চ মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিকে ছাত্রীর হার ৫০.

৭৩ শতাংশ; যেখানে তারা ছাত্রদের চেয়ে ১.৪৬ শতাংশ এগিয়ে আছে। প্রাথমিকে ছাত্রী  ৫১.২১ শতাংশ, যেখানে তারা ছাত্রদের চেয়ে এগিয়ে ২.৪২ শতাংশ। আরেকটি বিষয় দেখা যাচ্ছে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা কম ঝরে পড়ছে। পঞ্চম শ্রেণি থেকে উন্নীত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের সাফল্য আরও বেশি– ৫৭.৯৩ শতাংশ, যেখানে ছেলেদের হার ৪২.০৭ শতাংশ। এর পরবর্তী ধাপ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েরা আরও এগিয়ে– ৫৮.১৩ শতাংশ, যা তাদের ছেলেদের সঙ্গে ১৬.২৬ শতাংশের পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে ৯.৮০ শতাংশ। যেসব বিদ্যালয়ে মহাবিদ্যালয় যুক্ত, সেখানেও মেয়ে আছে ৫৩.০৬ শতাংশ, যা ছেলেদের চেয়ে ৬.১২ শতাংশ বেশি। শুধু মহাবিদ্যালয়ে ডিগ্রি (পাস) ও স্নাতকোত্তর রয়েছে, সেখানে মেয়েরা এগিয়ে আছে ১.৫০ শতাংশ হারে। মাদ্রাসায়ও দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল– সব মিলিয়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশ এগিয়ে। সেখানে মেয়েদের হার ৫৩.৬৮ শতাংশ, ছেলেদের হার ৪৬.৩২ শতাংশ। পেশাগত শিক্ষায় মেয়েরা আরও অনেক বেশি এগিয়ে। এখানে তারা ছেলেদের ২৩ শতাংশ হারে পেছনে ফেলেছে। এগিয়ে আছে মেডিকেল শিক্ষায়ও। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় কয়েক বছর ধরেই মেয়েরা ধারাবাহিকভাবে অনেক এগিয়ে। এই এগিয়ে থাকাতেও তারা ক্রমবর্ধমান হারে সাফল্য দেখাচ্ছে। যেমন ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে ছিল ১০.২৬ শতাংশ হারে, এর পরের বছর ১৫.৩৮ শতাংশ হারে। এর পর ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এগিয়ে ছিল ১৮.০৪ শতাংশ এবং এ বছর পার্থক্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬.২৬ শতাংশ। 
এর পেছনে বেশ কিছু প্রভাবক কাজ করেছে। রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতা, নারীকেন্দ্রিক শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন, চাকরিতে নারীদের জন্য বিশেষ সংরক্ষিত আসন, ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে গণমাধ্যম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নারী শিক্ষা-কর্মের প্রচারণা, প্রায় প্রতিটি প্রশিক্ষণে নারী উন্নয়নবিষয়ক সেশন রাখা– এসবের সমন্বিত ফল আজকের এই সফলতা। 
আরও লক্ষণীয়, ধনী পরিবারের চেয়ে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মেয়েরাই সেখানে বেশি সফল বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। শিক্ষায় নারীর এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতেই হবে।

মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন: গবেষক, ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
zahan.one@gmail.com

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কুবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ভুল প্রশ্ন সরবরাহ, আহ্বায়ককে অব্যাহতি 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহের ঘটনা ঘটেছে। এতে ইউনিটটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহকে ভর্তি কমিটি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষা শেষে এ অভিযোগ ওঠে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির একাধিক সূত্র জানায়, ‘সি’ ইউনিটে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা প্রশ্নপত্র নির্ধারিত থাকলেও কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একাধিক হলে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতে ব্যবসায় শিক্ষার প্রশ্নপত্র তুলে দেওয়া হয়। পরে ভুল বুঝতে পেরে প্রশ্নপত্র পরিবর্তন করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

কুবিতে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত 

যানজটে স্বপ্ন ভঙ্গ কুবির এক ভর্তিচ্ছুর

ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমরা যারা বিভাগ পরিবর্তন করে মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, আমাদের কেন্দ্র ছিল মূলত সেই বিভাগের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু ওই ভবনের কয়েকটি কক্ষে ভুল করে আমাদের কাছে ব্যবসায় শিক্ষার প্রশ্ন দেওয়া হয়। প্রায় ৪০ মিনিট পর বিষয়টি সংশোধন করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “প্রথমে খুব নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। পরে ১ ঘণ্টার পূর্ণ সময় দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষা মোটামুটি ভালোই হয়েছে।”

চট্টগ্রাম থেকে পরীক্ষা দিতে আসা মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন, “ভুল প্রশ্ন দেওয়ার কারণে পরীক্ষার শুরুতে আমরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। বিষয়টি কক্ষ পরিদর্শকদের জানালে সেটা ফিরিয়ে নিয়ে সঠিক প্রশ্ন দেওয়া হয়।”

এ বিষয়ে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, “মানবিক বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীর কাছে ভুল করে ব্যবসায় শিক্ষার প্রশ্ন পৌঁছে যায়। রোল নম্বর যাচাই করে আমরা বিষয়টি শনাক্ত করি এবং তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ দেওয়া হয়।”

এদিকে, পরীক্ষার্থীদের ভুল প্রশ্ন প্রদানের দায়ে ওই ইউনিটের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহকে ভর্তি কমিটি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “ঘটনার পর আমি নিজে ওই কক্ষে গিয়েছিলাম। দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারপরও এমন ভুল অনাকাঙ্ক্ষিত এবং তা অপেশাদারিত্বের পরিচায়ক। দায়িত্বরতদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।”

তিনি বলেন, “এ ঘটনার জন্য ইতোমধ্যে উনাকে (আহ্বায়ক) ভর্তি পরীক্ষার সকল কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে উনাকে এ ঘটনার কারণ জানানোর জন্য শোকজ করা হয়েছে।”

ইউনিটের দায়িত্ব কাকে দেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনকে এ দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তিনি ফলাফলসহ বাকিসব কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।”

অব্যাহতির বিষয়ে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, “আমি এ ধরনের কোনো লিখিত চিঠি পাইনি। লিখিত চিঠি পাওয়ার পর মন্তব্য করতে পারবো।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ