মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য বর্তমানে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে; সেখানে এখনই রোহিঙ্গাদের নিরাপদভাবে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা জাতিসংঘসহ সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি, যাতে রাখাইন রাজ্যে শান্তি এবং স্থিতি অবস্থা ফিরে আসে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের একটি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করে। আশা করছি আমরা সফলভাবে রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন করতে পারব।’

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরে রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ উৎসব ‘মহা সাংগ্রাং পোয়ে’ উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ‘শুভ রাখাইন সাংগ্রেং ১৩৮৭’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খলিলুর রহমান। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কথাগুলো বলেন তিনি।

কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আয়োজিত ওই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। রাখাইন সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশ সকল ধর্মের, নৃগোষ্ঠীর, সংস্কৃতির একটি দেশ। আমাদের দেশে এই সময়টা হচ্ছে উৎসবের সময়। আমরা বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন করেছি। আজ রাখাইনদের সাংগ্রেং পেয়েতে এসেছি। ভালোই লাগছে।’ তিনি সবাইকে রাখাইন নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, মিয়ানমার সরকার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে সম্মত হওয়া বর্তমান সরকারের বিশাল কূটনৈতিক সফলতা। এটি সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপটি প্রয়োজন ছিল রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য।

এর আগে গতকাল দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেন খলিলুর রহমান। আশ্রয়শিবিরের একটি মসজিদে তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন।

এ প্রসঙ্গে খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বলেছি জাতিসংঘের উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হচ্ছে। সেই সম্মেলনে রোহিঙ্গারা যেন সংঘবদ্ধভাবে তাঁদের অবস্থান তুলে ধরেন। তাঁদের মধ্যে যেন নেতৃত্ব তৈরি করা যায়, যাতে নিরাপদে স্বদেশে ফেরত যেতে পারেন। আগামী ঈদে যেন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে পারেন, তার জন্য চেষ্টা চলছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র খ ইন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলবো’

অপারেশন থিয়েটার থেকে কাপড়ে মোড়ানো শিশুটিকে বের করতেই নার্সের কোল থেকে দ্রুত নিজের কোলে তুলে নিলেন সোহাগ হোসেন। মনে হলো, তিনি এর জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিলেন। কোলে নিয়ে শিশুটিকে আদর করতে থাকেন সোহাগ। এরপর তার কাছ থেকে একে একে নানি, খালাসহ উপস্থিত অন্য স্বজনরা কোলে নেন। সবার মুখে হাসি। সবাই খুব উচ্ছ্বসিত। সবার এত খুশি হওয়ার কারণ, এটা সোহাগ হোসেন ও সুমি আক্তারের প্রথম সন্তান। তার ওপর পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়ায় তাদের আনন্দ যেন একটু বেশিই।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার নিশ্চিন্তা গ্রামের আসবাব ব্যবসায়ী সোহাগ। গত সোমবার বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রহরে জয়পুরহাট শহরের আমতলী এলাকার বেসরকারি হাসপাতাল ফ্যামেলি কেয়ারে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী সুমি। সারা শহর যখন বৈশাখের আমেজে মাতোয়ারা, তখন সন্তানকে কোলে পেয়ে আত্মহারা এই দম্পতি।

তাঁরা জানান, পারিবারিকভাবে বছর খানেক আগে সোহাগ ও সুমির বিয়ে হয়। এর দেড়-দুই মাসের মাথায় সুমির গর্ভে সন্তান আসে। তখন থেকেই এই দম্পতি প্রহর গুনছিলেন– কখন তাঁরা সন্তানের মুখ দেখবেন। এলাকার রীতি অনুযায়ী প্রত্যক নারী প্রথম সন্তান জন্ম নেওয়ার দেড়-দুই মাস আগে বাবার বাড়িতে যান। সে অনুযায়ী গত রমজান মাসে বাবার বাড়িতে যান সুমি। চিকিৎসকের ধারণা অনুযায়ী তাঁর সন্তান জন্ম নেওয়ার কথা আরও এক সপ্তাহ পর। কিন্তু এর আগেই সোমবার রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ সুমির প্রসব ব্যথা শুরু হয়। তখন তাঁর স্বামী সোহাগ কাছে ছিলেন না। শ্বশুরবাড়ির লোকজন রাতেই তাঁকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে আমতলী এলাকায় ফ্যামেলি কেয়ারে নিয়ে যান। সোহাগ খবর পেয়ে ছুটে যান সেখানে। তখন থেকে চিকিৎসকরা নরমালে প্রসব করানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সকাল ৬টায় সিজারিয়ান অপারেশন করেন। এর মাধ্যমে পহেলা বৈশাখে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হয় সোহাগ-সুমির। সেই সঙ্গে বিশেষ দিনটি আরও স্মরণীয় হয়ে থাকল।

সুমি আক্তার বলেন, ‘হঠাৎ করে ব্যথা ওঠায় খুব ভয় পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল আর বাঁচবো না। এ সময় আমার স্বামীও কাছে ছিল না। তাই মনে হচ্ছিল, এই রাতই আমার শেষ রাত। স্বামী-সন্তানের মুখ আর দেখতে পাবো না। গভীর রাতে বাবা-মা কীভাবে হাসপাতালে নিয়ে গেছে তাও ঠিকঠাক বলতে পারি না। ওই মুহূর্তে অনেক বার আল্লাহকে স্মরণ করেছি। একবার দেখি আমার স্বামী কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। তখন মনে শক্তি পাই। ভাবলাম– এখন মারা গেলেও অন্তত সন্তানের বাবা ওর দায়িত্ব নেবে। ওকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে বড় করে তুলবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে থেকেই দু’জন মিলে সন্তানের নাম রেখেছি সিদরাতুল মুনতাহা। সাত দিনের মাথায় এই নামেই আকিকা দেওয়া হবে। আমার সন্তান বড় হয়ে কোরাআনের হাফেজা হবে। দ্বীন শিক্ষা দেবে। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’

পহেলা বৈশাখে সন্তানের জন্ম হবে, এ কথা কখনও ভাবেননি সুমি। তিনি বলেন, ‘ডাক্তার বলেছিল, এ মাসের ২১ অথবা ২২ তারিখে সন্তান হবে। কিন্তু তার আগে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনেই আমাদের সন্তান পৃথিবীতে এলো। তবে যেটা হয়েছে মন্দ না। আর যাই হউক অন্তত সন্তানের জন্ম তারিখ সব সময় মনে থাকবে!’

সুমির মা আনজু আরা বেগম বলেন, ‘সম্ভাব্য তারিখের আগে সিজার করে সন্তান প্রসব করাতে হবে, এটা নিয়ে ভয়েই ছিলাম। তবে ডাক্তার ও নার্সদের আন্তরিকতায় সব ভয় কেটে গেছে। নাতনির মুখ দেখে সব ভুল গেছি।’

শিশুটির ছোট খালা হাবিবা আক্তার বলেন, ‘বাচ্চা ঠিক আমার বড় আপার মতো হয়েছে। ওর বাবা-মা আগেই নাম ঠিক করে রেখেছে। তা না হলে আমি ওর নাম বৈশাখী রাখার জন্য দুলাভাইকে বলতাম। তবে আমি ওকে বৈশাখী বলেই ডাকবো।’

সোহাগ হোসেন বলেন, ‘বৈশাখ কী, আর চৈত্র কী, ছেলে কী আর মেয়ে কী, সন্তান তো সন্তানই। সন্তানের মুখ দেখে খুবই ভালো লাগছে। দুই দিন আগেও কাজের চাপে বাড়িতে যাওয়া ভুলে যেতাম। কিন্তু এখন সন্তানকে রেখে কোথায় যেতে মন চাইছে না।’

সুমির সিজারিয়ান অপারেশন করেন জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক জান্নাতুল ফেরদৌসী শাপলা। তিনি বলেন, ‘এই রোগী রোববার রাত দেড়টায় ভর্তি হন। সব স্বাভাবিক থাকায় তখন থেকে নরমালে প্রসব করার চেষ্টা করি। পরে ভোর ৬টায় সিজার করে শিশুটি জন্ম নেয়। তার ওজন ৩ কেজি ২০০ গ্রাম। মা ও মেয়ে দু’জনই সুস্থ আছে। নববর্ষের প্রথম দিনে প্রথম এই শিশুর জন্ম হওয়ায় হাসপাতালের পক্ষ থেকে শিশুটির বাবা, নানি ও খালাকে মিষ্টি খাওয়ানো হয়েছে।’

হাসপাতালের পরিচালক জামাল উদ্দীন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি নরমালে প্রসব করানোর। তবে তা সম্ভব হয়নি। ভোর ৬টায় পরিবারের অনুমতি নিয়ে সিজার করা হয়। নববর্ষের প্রথম প্রহরে প্রথম শিশুটি জন্ম নেওয়ায় সবার নজর কেড়েছে। আমরা তার সাফল্য কামনা করি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মালদ্বীপে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
  • ইয়ামালকে নিয়ে মেসি: সে এখনই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন
  • চীনের অর্থায়নে প্রস্তাবিত হাসপাতাল পঞ্চগড়ে স্থাপনের দাবিতে মুসল্লিদের অবস্থান
  • ইউসিবি বৈশাখী ফেস্টিভ্যালের বর্ণিল উদ্বোধন
  • কতগুলো বিষয়ে একমত, তা এখনই বলতে পারব না: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • আগামীর পথে এখনই পা ফেলতে হবে: বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা 
  • গোপালগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী চড়ক ঘুল্লী অনুষ্ঠিত
  • জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী উৎসব–ভাবনা কেমন হবে
  • ‘মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলবো’