‘ডাকু ইঁদুরের’ পাল কেড়ে নিয়েছে সব বন্দির ঘুম
Published: 18th, April 2025 GMT
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা পাঁচ হাজার বন্দির দুই বেলা খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলা হয় নালানর্দমায়। সেই উচ্ছিষ্ট খায় ইঁদুরের পাল। এ খাবার খেয়ে দৈত্যাকার হয়ে উঠছে একেকটি ইঁদুর। সাধারণ ইঁদুর থেকে কয়েক গুণ বড় হওয়ায় এদের কারাগারের সবাই ডাকে ‘ডাকু ইঁদুর’। কারাগারের ছয়টি ভবনের নিচতলায় থাকা ১২টি ওয়ার্ডে এসব ইঁদুর দিনে-রাতে হানা দিয়ে বন্দিদের কামড়ে দেয়। অনেক সময় ঘুমন্ত বন্দির শরীরেও উঠে যায়। ওয়ার্ডের শৌচাগারেও ইঁদুরের যন্ত্রণা থেকে নিস্তার নেই, কমোডের ভেতরেও করে কিলবিল। এসব ইঁদুরের আতঙ্কে ঘুম হারাম সাড়ে ৫০০ বন্দির।
যদিও গেল ছয় মাসে কারাগারের ভেতরে মেরে ফেলা হয়েছে সহস্রাধিক ইঁদুর। তবু ইঁদুরের উৎপাত থামছে না। বন্দিদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখে কীটনাশক ও ওষুধ ছিটিয়েও ইঁদুর মারতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো.
কারাগারের জেলার মাসুদ হাসান জুয়েল বলেন, নালানর্দমার উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে দ্রুত ইঁদুরের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। দেড় থেকে দুই হাজার মারার পরও ইঁদুরের সংখ্যা কমছে না। বন্দিদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার কারণে ওষুধ ও কীটনাশক দিয়েও ইঁদুর মারতে পারছি না। বন্দি ভবনের নিচতলায় ইঁদুরের উৎপাত এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
মো. কাদের নামে সদ্য জামিনে মুক্ত এক আসামি বলেন, ‘আমি যমুনা ভবনের নিচতলার ওয়ার্ডে প্রায় দুই মাস ছিলাম। সেখানে ইঁদুরের অত্যাচারে রাতে ঘুমাতে ভয় পেতাম। বাথরুমেও ঠিকমতো প্রাকৃতিক কাজ করতে পারতাম না।’
গত রোববার আদালতে হাজিরা দিতে আসা বন্দি রমজান বলেন, ‘মেঘনা ভবনের নিচতলার একটি ওয়ার্ডে আমি থাকি। সেখানেও আগে ইঁদুরের উৎপাত ছিল। কারা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ইদুর না মারলে এ অত্যাচার বন্ধ হবে না।’
চট্টগ্রাম কারাগারে পাঁচতলা ছয়টি বন্দি ভবন রয়েছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, সাংগু ও হালদা ভবনের নিচতলায় দুটি করে ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ৪০ থেকে ৫০ বন্দি থাকেন। সে হিসাবে ছয়টি ভবনের নিচের ১২ ওয়ার্ডে সাড়ে ৫০০ বন্দি বাস করেন। আর এই ১২টি ওয়ার্ডেই সবচেয়ে বেশি উৎপাত করছে ডাকু ইঁদুর। পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রতিটি বন্দি ভবনের সঙ্গে সরাসরি বড় বড় নালার সংযোগ রয়েছে। তাই সহজেই নালা ও পাইপের মাধ্যমে ইঁদুর বন্দি ভবনের নিচতলায় পৌঁছে যায়। আবার নালা থেকে মাটিতে উঠেও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করে। কারণ সন্ধ্যার পর কারাগারের ভেতর মানুষের হাঁটাচলা না থাকায় ইঁদুরগুলো সহজেই নালার ওপর উঠে কারাগারজুড়ে বিচরণ করে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভবন র ন চতল য় ই দ র র উৎপ ত ভবন র ন চ বন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে ছাত্রীর মৃত্যু, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও স্বজনদের ভিন্ন ভাষ্য
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার একটি মাদ্রাসার পাঁচতলা ভবনের জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে এক শিক্ষার্থীর (১৩) মৃত্যু হয়েছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, বাড়ি যেতে না পারায় মেয়েটি লাফ দেয়। তবে স্বজনেরা দাবি করেছেন, এখানে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি থাকতে পারে।
গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। বিষয়টি রাতেই জানাজানি হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মাদ্রাসার পাঁচতলার একটি জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয় সে।
মাদ্রাসার মুহতামিমের ভাষ্য, ঈদের ছুটির পর সপ্তাহখানেক আগে ওই শিক্ষার্থীর নিয়মিত ক্লাস শুরু হয়। তবে মাদ্রাসার আবাসিকে থাকতে সে অনাগ্রহী ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে সে তার মাকে ফোন করে বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। পরে রাতে মাদ্রাসার একটি জানালার ফাঁক দিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়ে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে তাঁরা কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় পাঠানো হয়। রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করতে না পেরে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ওই শিক্ষার্থীর মামা বলেন, তাঁরা চেয়েছিলেন ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করতে, তবে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। তাঁরা থানায় অভিযোগ করবেন। পুরো ঘটনা সুষ্ঠুভাবে তদন্তের দাবি জানান।
মেয়েটির এক স্বজন দাবি করেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। জানালার একটি বড় ফাঁক দিয়ে মেয়েটি নিচে পড়ে যায়। যদি গ্রিল সঠিকভাবে থাকত, এমনটা না–ও হতে পারত।
মাদ্রাসার মুহতামিম বলেন, ‘দিবাগত রাত তিনটার দিকে স্থানীয় এক ব্যক্তি রাস্তায় মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখে আমাকে ফোন করেন। পরে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। জানালার ওই অংশে ফাঁক ছিল, তবে সেটি আগে তেমনভাবে আমাদের নজরে আসেনি।’
এ বিষয়ে লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জানালার একটি অংশে রডের ফাঁক আছে, সেটি বেশ বড়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখান দিয়েই মেয়েটি পড়েছে। তবে তদন্ত চলছে। মেয়েটির লাশের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হবে। যৌন নিপীড়নের কোনো অভিযোগ থাকলে, সেটিও পরীক্ষা করা হবে। এখন পর্যন্ত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বা পরিবারের কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি।