ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েলের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে হামাস। তারা বরং পাল্টা একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসরায়েল যদি গাজায় না যুদ্ধ করে ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের মুক্তি দেয়, তাহলে গাজায় বন্দী জিম্মিদের ফেরত দেবে তারা। হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

ওই কর্মকর্তার নাম খলিল আল–হায়া। তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। টেলিভিশনের সম্প্রচার করা বক্তব্যে আল–হায়া বলেন, ইসরায়েল যে অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে, তার সঙ্গে একমত নয় হামাস। কারণ, গত মাসে গাজায় নতুন করে যে ভয়াবহ হামলা শুরু হয়েছে, এই চুক্তির মাধ্যমে তা থামানোর প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত করবে ইসরায়েল।

নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকার আংশিক চুক্তিকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন হামাসের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘ওই চুক্তির ভিত্তিই হলো (ফিলিস্তিনিদের) ধ্বংস ও অনাহারে রাখার মাধ্যমে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। এমনকি সব জিম্মির জীবনের বিনিময়ে হলেও তারা তা করতে চায়।’

ইসরায়েল সরকারের হিসাবে, গাজায় এখনো ৫৯ জন জিম্মি হামাসের হাতে বন্দী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৪ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। খলিল আল-হায়া বলেন, যুদ্ধ বন্ধ, ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের মুক্তি এবং গাজা পুনর্গঠন—এই তিন শর্ত বাস্তবায়নের বিনিময়ে হামাসের হাতে বন্দী থাকা বাকি সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে ‘বড় পরিসরে আলোচনার’ জন্য প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা।

২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। পরে ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এই সময়ে মধ্যে ৩৮ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। উপত্যকাটিতে আবার যুদ্ধবিরতির জন্য মিসরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে সেই আলোচনায় এখন পর্যন্ত সামান্যই অগ্রগতি দেখা গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জেমস হেউইট। তিনি বলেছেন, ‘হামাসের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, তারা শান্তির প্রতি আগ্রহী নয়, বরং চিরস্থায়ী সহিংসতা চাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যে শর্তগুলো দিয়েছে, তাতে কোনো বদল আসেনি—জিম্মিদের মুক্তি দিন, না হয় নরকের মুখে পড়ুন।’

এদিকে যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে আলোচনার মধ্যেও গাজায় চরম নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার গাজায় প্রায় ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে তারা। এদিন উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩২ জন। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ১৮ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৫১ হাজার ৬৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

কুবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ভুল প্রশ্ন সরবরাহ, আহ্বায়ককে অব্যাহতি 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহের ঘটনা ঘটেছে। এতে ইউনিটটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহকে ভর্তি কমিটি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষা শেষে এ অভিযোগ ওঠে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির একাধিক সূত্র জানায়, ‘সি’ ইউনিটে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা প্রশ্নপত্র নির্ধারিত থাকলেও কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একাধিক হলে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতে ব্যবসায় শিক্ষার প্রশ্নপত্র তুলে দেওয়া হয়। পরে ভুল বুঝতে পেরে প্রশ্নপত্র পরিবর্তন করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

কুবিতে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত 

যানজটে স্বপ্ন ভঙ্গ কুবির এক ভর্তিচ্ছুর

ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমরা যারা বিভাগ পরিবর্তন করে মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, আমাদের কেন্দ্র ছিল মূলত সেই বিভাগের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু ওই ভবনের কয়েকটি কক্ষে ভুল করে আমাদের কাছে ব্যবসায় শিক্ষার প্রশ্ন দেওয়া হয়। প্রায় ৪০ মিনিট পর বিষয়টি সংশোধন করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “প্রথমে খুব নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। পরে ১ ঘণ্টার পূর্ণ সময় দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষা মোটামুটি ভালোই হয়েছে।”

চট্টগ্রাম থেকে পরীক্ষা দিতে আসা মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন, “ভুল প্রশ্ন দেওয়ার কারণে পরীক্ষার শুরুতে আমরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। বিষয়টি কক্ষ পরিদর্শকদের জানালে সেটা ফিরিয়ে নিয়ে সঠিক প্রশ্ন দেওয়া হয়।”

এ বিষয়ে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, “মানবিক বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীর কাছে ভুল করে ব্যবসায় শিক্ষার প্রশ্ন পৌঁছে যায়। রোল নম্বর যাচাই করে আমরা বিষয়টি শনাক্ত করি এবং তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ দেওয়া হয়।”

এদিকে, পরীক্ষার্থীদের ভুল প্রশ্ন প্রদানের দায়ে ওই ইউনিটের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহকে ভর্তি কমিটি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “ঘটনার পর আমি নিজে ওই কক্ষে গিয়েছিলাম। দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারপরও এমন ভুল অনাকাঙ্ক্ষিত এবং তা অপেশাদারিত্বের পরিচায়ক। দায়িত্বরতদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।”

তিনি বলেন, “এ ঘটনার জন্য ইতোমধ্যে উনাকে (আহ্বায়ক) ভর্তি পরীক্ষার সকল কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে উনাকে এ ঘটনার কারণ জানানোর জন্য শোকজ করা হয়েছে।”

ইউনিটের দায়িত্ব কাকে দেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনকে এ দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তিনি ফলাফলসহ বাকিসব কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।”

অব্যাহতির বিষয়ে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, “আমি এ ধরনের কোনো লিখিত চিঠি পাইনি। লিখিত চিঠি পাওয়ার পর মন্তব্য করতে পারবো।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ