চুরির অপবাদ দেওয়ায় নিজের শরীরে আগুন, ৬ দিনের মাথায় অটোরিকশাচালকের মৃত্যু
Published: 18th, April 2025 GMT
কুমিল্লার চান্দিনায় চুরির অপবাদ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া সেই অটোরিকশাচালক ছয় দিন পর মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার বেলা সোয়া একটার দিকে মো. সবুজ (৩০) নামের ওই অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়। আগুনে তাঁর শরীরের প্রায় ৩৫ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল।
আজ সন্ধ্যায় সবুজের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
দুই সন্তানের জনক মো. সবুজ চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়নের গড়ামারা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। তিনি চান্দিনা উপজেলা সদরের বেলাশহর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন পরিবার নিয়ে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। ১৩ এপ্রিল রাতে চান্দিনা উপজেলা সদরের সরকারি হাসপাতাল–সংলগ্ন এলাকায় চুরির অপবাদ দিয়ে তাঁর অটোরিকশা ছিনিয়ে নেওয়ায় নিজের শরীরের পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সবুজ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, চান্দিনা সদরের হাসপাতাল সড়কে ইউনুছ মিয়ার অটোরিকশা গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে সবুজসহ তিনজন নিজেদের অটোরিকশা রাখতেন। পালাক্রমে তাঁরা তিনজন পাহারাও দিতেন। ২০২৪ সালের ৭ ডিসেম্বর রাত সাড়ে তিনটায় ওই গ্যারেজ থেকে দুটি অটোরিকশা চুরি হয়ে যায়। যেদিন অটোরিকশাগুলো চুরি হয়, সেদিন পাহারা ছিল সবুজের। ঘটনার পর তিনি দাবি করেন, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে অটোরিকশা নিয়ে যায় চোর চক্র।
পরবর্তী সময়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চোর শনাক্ত করে গত ৪ মার্চ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০ জনকে আসামি করে চান্দিনা থানায় একটি মামলা করেন চুরি হওয়া একটি অটোরিকশার মালিক দুলাল মিয়া। ওই মামলায় মানিক নামের একজনকে ধরে পুলিশে দেন এলাকাবাসী। তবে কয়েকজন মাতবর স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কথা বলে মানিককে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন। পরে উল্টো সবুজকে চোর আখ্যা দিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু সবুজের পক্ষে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার সক্ষমতা না থাকায় তিনি ওই সিদ্ধান্ত মানেননি।
আরও পড়ুনচুরির অপবাদ দেওয়ায় শরীরে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা, দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে১৪ এপ্রিল ২০২৫সর্বশেষ গত রোববার (১৩ এপ্রিল) রাতে কয়েকজন মাতবরের ইন্ধনে সালাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি সবুজকে আটক করে তাঁর অটোরিকশাটি নিয়ে যান এবং তাঁকে চোর বলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে চাপ দেন। এ সময় সবুজ অপবাদ সহ্য করতে না পেরে প্রকাশ্যে নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে দ্রুত স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নিভিয়ে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। সেখানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে সবুজকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। আজ দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।
সুবজের স্ত্রী খুশি আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গরিবের জন্য আইন, বিচার—কিছুই নাই। মাতবররা চোর ধরে ছেড়ে দিছে, আর আমার স্বামীকে চুরির অপবাদ দিয়ে জরিমানা করল। তাদের কারণে মানুষ আমার স্বামীকে চোর বলত। আমার স্বামী এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে মারা গেছে। আমার স্বামীর অটোরিকশাটিও ফিরিয়ে দেয়নি। আমি এখন কীভাবে বাঁচব। দুটি সন্তান নিয়ে কোথায় যাব?’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ র র অপব দ দ আম র স ব ম সব জ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে ছাত্রীর মৃত্যু, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও স্বজনদের ভিন্ন ভাষ্য
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার একটি মাদ্রাসার পাঁচতলা ভবনের জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে এক শিক্ষার্থীর (১৩) মৃত্যু হয়েছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, বাড়ি যেতে না পারায় মেয়েটি লাফ দেয়। তবে স্বজনেরা দাবি করেছেন, এখানে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি থাকতে পারে।
গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। বিষয়টি রাতেই জানাজানি হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মাদ্রাসার পাঁচতলার একটি জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয় সে।
মাদ্রাসার মুহতামিমের ভাষ্য, ঈদের ছুটির পর সপ্তাহখানেক আগে ওই শিক্ষার্থীর নিয়মিত ক্লাস শুরু হয়। তবে মাদ্রাসার আবাসিকে থাকতে সে অনাগ্রহী ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে সে তার মাকে ফোন করে বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। পরে রাতে মাদ্রাসার একটি জানালার ফাঁক দিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়ে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে তাঁরা কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় পাঠানো হয়। রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করতে না পেরে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ওই শিক্ষার্থীর মামা বলেন, তাঁরা চেয়েছিলেন ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করতে, তবে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। তাঁরা থানায় অভিযোগ করবেন। পুরো ঘটনা সুষ্ঠুভাবে তদন্তের দাবি জানান।
মেয়েটির এক স্বজন দাবি করেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। জানালার একটি বড় ফাঁক দিয়ে মেয়েটি নিচে পড়ে যায়। যদি গ্রিল সঠিকভাবে থাকত, এমনটা না–ও হতে পারত।
মাদ্রাসার মুহতামিম বলেন, ‘দিবাগত রাত তিনটার দিকে স্থানীয় এক ব্যক্তি রাস্তায় মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখে আমাকে ফোন করেন। পরে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। জানালার ওই অংশে ফাঁক ছিল, তবে সেটি আগে তেমনভাবে আমাদের নজরে আসেনি।’
এ বিষয়ে লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জানালার একটি অংশে রডের ফাঁক আছে, সেটি বেশ বড়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখান দিয়েই মেয়েটি পড়েছে। তবে তদন্ত চলছে। মেয়েটির লাশের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হবে। যৌন নিপীড়নের কোনো অভিযোগ থাকলে, সেটিও পরীক্ষা করা হবে। এখন পর্যন্ত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বা পরিবারের কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি।