নবীগঞ্জ উপজেলার করগাওঁ ইউনিয়নের পুরুষোত্তমপুর গ্রামের নোহেল আহমেদসহ ১০ যুবকের কাছ থেকে ইতালিতে ভালো চাকরির লোভ দেখিয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে একই ইউনিয়নের গুমগুমিয়া গ্রামের নাজিম উল্লার ছেলে ইতালি প্রবাসী আক্কাছ মিয়া ও তার ভাই এবং স্ত্রীর বিরুদ্ধে।

উচ্চ সুদে ঋণের টাকা দিয়েও ইতালি যেতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী নোহেল আহমেদসহ ১০টি পরিবার। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় একাধিকবার গ্রাম্য সালিশের মুরুব্বি, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দ্বারস্থ হয়েও কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগীরা। তবে আক্কাছের ভাইয়ের মাধ্যমে ৭ লাখ টাকা ফেরত দিলে বাকি ১ কোটি ৯ লাখ টাকা উদ্ধার করা যায়নি।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন নোহেল আহমেদ।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার করগাওঁ ইউনিয়নের গুমগুমিয়া গ্রামের নাজিম উল্লার ইতালি প্রবাসী ছেলে আক্কাছ মিয়া, তার ভাই রফিক মিয়া, নাসির মিয়া, বশির মিয়া, সফিক মিয়া ও তার স্ত্রী আলপিনা বেগম পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে একই ইউনিয়নের পুরুষোত্তমপুর গ্রামের মৃত তোফাজ্জল হকের ছেলে নোহেল আহমেদকে ইতালিতে ভালো চাকরির সুযোগ-সুবিধা আছে, জনপ্রতি ১২ লাখ টাকায় ভিসা দেওয়া যাবে, সেই সাথে ভালো কোম্পানিতে চাকরির সুযোগের লোভ দেখিয়ে নোহেল আহমদের মাধ্যমে সে নিজেসহ ১০ জনের ইতালির ভিসার জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যায়ক্রমে প্রবাসী আক্কাছ মিয়াসহ তার পরিবারের কাছে প্রদান করেন। কিছু দিন পর আক্কাছ মিয়া তাদের নামে ইতালির ভিসা পাঠান। ওই ভিসাগুলো যাচাই-বাছাই করে অনলাইনে চেকিং করে দেখা যায় সব ভিসা জাল। জাল ভিসা পেয়ে অসহায় ওই যুবকেরা ও তাদের পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়ে। ভেস্তে যায় স্বপ্নের দেশ ইতালি যাওয়া। ভুক্তভোগীরা বারবার প্রতারক আক্কাছ মিয়া ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে সঠিক ভিসা বা টাকা ফেরত না পেয়ে সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিচ্ছেন। এক পর্যায়ে ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করলেও প্রায় ২/৩ বছর ধরে দেই দিচ্ছি বলে বাকি টাকা দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে উচ্চ সুদে ঋণ করে এবং কেউ কেউ জায়গা জমি বিক্রি করে টাকা দেওয়ায় পথে বসেছেন।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী নোহেল আহমেদ বলেন, পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে আক্কাছ মিয়া, তার ভাইয়েরা ও তার স্ত্রী মিলে আমাকে ভালো চাকরির লোভ দেখিয়ে ইতালি নেওয়ার স্বপ্ন দেখান। ফলে আমিসহ ১০ জনের পাসপোর্ট ও জনপ্রতি ১২ লাখ করে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা আমার মাধ্যমে প্রদান করি। টাকাগুলো আক্কাছ মিয়া, তার ভাইয়েরা ও তার স্ত্রী আলপিনা বেগমের কাছে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হয়। টাকাগুলো নিয়ে ৩ মাসের মধ্যে ভিসা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৬ মাস পরে ভিসা দিলেও তা জাল ভিসা। আমিসহ ১০টি পরিবার বর্তমানে ঋণের বোঝা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এ ব্যাপারে করগাওঁ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, ইতালি যাওয়ার জন্য উল্লিখিত টাকা আক্কাছ মিয়া ও তার পরিবারের কাছে প্রদানের ঘটনা সত্য। আমরা অনেক চেষ্টা করে ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করলেও বাকি টাকা উদ্ধার করতে পারিনি।

ভুক্তভোগীরা প্রবাসী প্রতারক আক্কাছ মিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত র পর ব র র ন হ ল আহম দ প রব স চ কর র

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে ছাত্রীর মৃত্যু, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও স্বজনদের ভিন্ন ভাষ্য

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার একটি মাদ্রাসার পাঁচতলা ভবনের জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে এক শিক্ষার্থীর (১৩) মৃত্যু হয়েছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, বাড়ি যেতে না পারায় মেয়েটি লাফ দেয়। তবে স্বজনেরা দাবি করেছেন, এখানে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি থাকতে পারে।

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। বিষয়টি রাতেই জানাজানি হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মাদ্রাসার পাঁচতলার একটি জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয় সে।

মাদ্রাসার মুহতামিমের ভাষ্য, ঈদের ছুটির পর সপ্তাহখানেক আগে ওই শিক্ষার্থীর নিয়মিত ক্লাস শুরু হয়। তবে মাদ্রাসার আবাসিকে থাকতে সে অনাগ্রহী ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে সে তার মাকে ফোন করে বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। পরে রাতে মাদ্রাসার একটি জানালার ফাঁক দিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়ে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে তাঁরা কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় পাঠানো হয়। রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করতে না পেরে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ওই শিক্ষার্থীর মামা বলেন, তাঁরা চেয়েছিলেন ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করতে, তবে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। তাঁরা থানায় অভিযোগ করবেন। পুরো ঘটনা সুষ্ঠুভাবে তদন্তের দাবি জানান।

মেয়েটির এক স্বজন দাবি করেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। জানালার একটি বড় ফাঁক দিয়ে মেয়েটি নিচে পড়ে যায়। যদি গ্রিল সঠিকভাবে থাকত, এমনটা না–ও হতে পারত।

মাদ্রাসার মুহতামিম বলেন, ‘দিবাগত রাত তিনটার দিকে স্থানীয় এক ব্যক্তি রাস্তায় মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখে আমাকে ফোন করেন। পরে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। জানালার ওই অংশে ফাঁক ছিল, তবে সেটি আগে তেমনভাবে আমাদের নজরে আসেনি।’

এ বিষয়ে লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জানালার একটি অংশে রডের ফাঁক আছে, সেটি বেশ বড়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখান দিয়েই মেয়েটি পড়েছে। তবে তদন্ত চলছে। মেয়েটির লাশের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হবে। যৌন নিপীড়নের কোনো অভিযোগ থাকলে, সেটিও পরীক্ষা করা হবে। এখন পর্যন্ত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বা পরিবারের কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ