‘রনজিত দাসের আত্মজীবনী বাংলাদেশের ক্রীড়া-ইতিহাসের অনন্য সংযোজন’
Published: 18th, April 2025 GMT
কিংবদন্তিতুল্য ক্রীড়াবিদ রনজিত দাসের আত্মজৈবনিক বই ‘ক্রীড়াঙ্গনের ফেলে আসা দিনগুলো’র প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়েছে। আজ শুক্রবার সিলেট নগরের করেরপাড়া এলাকায় রনজিত দাসের বাসভবনে বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠান শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্রীড়া সংগঠক মো. ইউসুফ আলী। বক্তব্য দেন পাক্ষিক ‘ক্রীড়াজগত’ সম্পাদক দুলাল মাহমুদ, ক্রীড়াবিদ এলাম সুলতান, এস এম মান্নান, প্রবীর রঞ্জন দাশ ও নিষেন্দু দেব প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ক্রীড়াবিদ রনজিত দাস উপস্থিত ছিলেন। পরিবারের পক্ষে রনজিত দাসের সন্তান রীমা দাস ও রাজীব দাস বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাট্যকার মোস্তাক আহমদ।
‘ক্রীড়াজগত’ সম্পাদক দুলাল মাহমুদ বলেন, সারা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের একজন মডেল ছিলেন রনজিত দাস। তাঁর আত্মজীবনী বাংলাদেশের ক্রীড়া-ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক ও অনন্য সংযোজন। পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলার ক্রীড়াঙ্গনের গৌরবময় সোনালি ইতিহাস এ বইয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ঠাঁই পেয়েছে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসের কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব রনজিত দাস। ফুটবল, হকি ও ক্রিকেটে তাঁর অসাধারণ নৈপুণ্য ছিল। পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তান ফুটবল দলে তাঁকে বাদ দিয়ে দল গঠনের কথা চিন্তাই করা যেত না। পঞ্চাশ থেকে আশির দশক পর্যন্ত তিনি খেলাধুলার পাশাপাশি কোচ ও সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
রনজিত দাস ক্রিকেট ও হকি খেলেছেন। তবে ফুটবলার পরিচয়েই বেশি পরিচিত রনজিত দাস। ছিলেন গোলরক্ষক। পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে ফুটবল ও হকির গোলপোস্ট আগলানোর কীর্তি আছে রনজিত দাসের। পঞ্চাশের দশকে ফুটবল খেলার পর ঢাকায় হকি লিগে খেলেছেন ১৯৬৫-৭০ সাল পর্যন্ত। ফুটবলে আইএফএ শিল্ডে ত্রিপুরা একাদশ ও ঢাকা মোহামেডানের জার্সি পরে খেলেছেন। কলকাতা মোহামেডানেও ডাক পেয়ে খেলতে গেছেন ভারতে। দিল্লিতে খেলেছেন ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্ট ডুরান্ড কাপে। ১৯৫৮ সালে রনজিত দাসের অধিনায়কত্বে ঢাকা ফুটবল লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব। হকিতে অধিনায়ক ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান দলে। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের পর খেলেছেন সোনালী ব্যাংকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সিলেট দলের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি ২০০৬ সালে গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। পরের বছর পান জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রনজ ত দ স র অন ষ ঠ ন ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি নির্মাণ প্রকল্প বাতিল
শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সারা দেশে সমাধি নির্মাণের প্রকল্প থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, সমাধি নির্মাণের জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও সমাধি চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এসব কারণে ২০ হাজারের মধ্যে ১৫ হাজার ৬০৪টি সমাধি আর নির্মাণ করা হবে না। তবে ‘যুদ্ধসমাধি’ ধরনের কিছু করার কথা ভাবা হচ্ছে।
সারা দেশে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মোট ২০ হাজার সমাধি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, ২০১৮ সালে। ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ শিরোনামের প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয় ৪৬১ কোটি টাকা। পরে ব্যয় কমিয়ে করা হয় ৩৯৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার সমাধি করার সিদ্ধান্ত হয় গণপূর্ত অধিদপ্তরের দেওয়া তালিকা ধরে। আর ১৫ হাজার সমাধি করার কথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) দেওয়া তালিকা অনুযায়ী।
আমি দুটি সমাধি পরিদর্শনে গিয়েছি। তাতে দেখা গেছে, সমাধি দুটি ছোট ছোট। সমাধির জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না। এখন সমাধির পরিবর্তে ওয়ার সিমেট্রির (যুদ্ধসমাধি) মতো করা হবে। ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টাসরকারের উন্নয়ন প্রকল্প নজরদারি করা সংস্থা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন বলছে, প্রকল্পটি অনুমোদনের পর থেকে এ পর্যন্ত গণপূর্ত অধিদপ্তরের তালিকা দেওয়া ৫ হাজার সমাধির মধ্যে ৪ হাজার ১২৬টির কাজ শেষ হয়েছে। ২৭০টির কাজ চলমান। ইউএনওদের মাধ্যমে কোনো সমাধি নির্মিত হয়নি। আইএমইডির তথ্যমতে, গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৮০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে।
মূলত জমির জটিলতায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি করা যাচ্ছে না বলে জানান প্রকল্প পরিচালক পলি কর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ ব্যাপারে ভিন্ন প্রকল্প নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
সমাধির নকশা নিয়ে জটিলতার কারণেও প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক ছিল না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।চার সমস্যা চিহ্নিত
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের হাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হন। মূলত সেসব স্থানে সমাধি নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল। সমাধি নির্মাণ করতে গিয়ে মোটা দাগে চারটি সমস্যার কথা বলেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এক. সমাধির জায়গা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না; দুই. অন্যত্র সমাধি করতে গেলে জমি পাওয়া যাচ্ছে না; তিন. সমাধির নকশায় ত্রুটি এবং চার. সমাধির জন্য প্রতিবছর যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া দরকার, তা দেওয়া হয়নি। এসব কারণে অনুমোদনের পর ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে এক-চতুর্থাংশের কম।
সমাধি নির্মাণের জন্য উপজেলাগুলোতে ইউএনওকে সভাপতি করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল। কমিটির বাকি দুজন সদস্য ইউএনও মনোনীত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। তবে বিভিন্ন উপজেলা থেকে জানানো হয়, বেশির ভাগ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সেখানে সমাধি করা কঠিন। নির্ধারিত জায়গার বাইরে সমাধি করতে গেলে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। অনেকেই জমি দিতে আগ্রহী নন। আবার কোথাও কোথাও সরকার অনুমোদিত জায়গার মধ্যে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধি নেই।
এ বিষয়ে গত ২৯ মার্চ রংপুর, জামালপুর ও নোয়াখালীর তিন উপজেলার ইউএনওদের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তাঁরা নতুন কর্মস্থলে এসেছেন। তাঁরা বলেন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সমাধির কোনো তথ্য জানা নেই। সমাধির তালিকা সম্পর্কেও কিছু জানেন না তাঁরা।
উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গত ২৩ মার্চ তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, সমাধি নির্মাণের জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে সমাধি নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তাঁরা।নকশা নিয়েও জটিলতা
সমাধির নকশা নিয়ে জটিলতার কারণেও প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক ছিল না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য মূল নকশায় সমাধির দৈর্ঘ্য ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি, প্রস্থ ৫ ফুট এবং উচ্চতা ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি নির্ধারণ করা হয়। আর হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের জন্য দৈর্ঘ্য ৫ ফুট, প্রস্থ ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি, উচ্চতা ৩ ফুট নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ নকশা ধরে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে। পরে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি নির্মাণ প্রকল্পটি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল, ততটা দেওয়া হয়নি। দায়সারাভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল। প্রকল্প পরিচালক (পিডি) বদল হয়েছে অন্তত পাঁচবার। চাহিদা অনুযায়ী বাজেটও দেওয়া হতো না। সব দিক বিবেচনা করে প্রকল্পটি সমাপ্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের কাজ শূন্য
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা আইএমইডির পরিচালক (উপসচিব) নিশাত জাহান গত ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার তিনটি সমাধি পরিদর্শনে যান। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম চৌধুরী, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রুস্তম আলী চৌধুরীর সমাধি পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন তিনি। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কোনো সমাধি নির্মাণ করা হয়নি। বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ২৭০টি সমাধির নির্মাণকাজ চলছে। ৪ হাজার ১২৬টির কাজ শেষ হয়েছে। গত বছরের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে বাকি কাজ শেষ করতে আরও এক বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
‘যুদ্ধসমাধি করা হবে’
গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ২৪ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্প পর্যালোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম প্রকল্পটি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। পরে অক্টোবর মাসে এডিপি সভায় প্রকল্পের আওতায় নতুন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করার নির্দেশ দেন উপদেষ্টা। শুধু গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে নির্মাণাধীন সমাধিগুলোর বাকি কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত হয় সভায়।
উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গত ২৩ মার্চ তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, সমাধি নির্মাণের জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে সমাধি নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘আমি দুটি সমাধি পরিদর্শনে গিয়েছি। তাতে দেখা গেছে, সমাধি দুটি ছোট ছোট। সমাধির জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না। এখন সমাধির পরিবর্তে ওয়ার সিমেট্রির (যুদ্ধসমাধি) মতো করা হবে।’