দেশের ইন্টারনেট সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) ২০২৫-২৭ মেয়াদকালের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন হবে ১৭ মে। নির্বাচনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সাধারণ সদস্য শ্রেণি থেকে নয়জন এবং সহযোগী সদস্য শ্রেণি থেকে চারজন করে মোট ১৩ জন নির্বাচিত হবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে আইএসপিএবির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।

চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকার তথ্যমতে, নির্বাচনে সাধারণ সদস্য শ্রেণিতে নয়টি পদের বিপরীতে ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন এডিএন টেলিকম লিমিটেডের মো.

আজহারুল হক চৌধুরী, আলফা নেটওয়ার্কের মো. ইরফান উদ্দিন, আম্বার আইটি লিমিটেডের মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম, অন্তরঙ্গ ডটকম লিমিটেডের মো. আসাদুজ্জামান, ব্রিনক সিস্টেমের মো. শরিফুল ইসলাম, সার্কেল নেটওয়ার্কের মাহবুব আলম, এক্সোর্ড অনলাইনের সাব্বির আহমেদ, আইসিসি কমিউনিকেশন লিমিটেডের সাইফুল ইসলাম, ইনভেনশন টেকনোলজি লিমিটেডের মো. মিঠু হাওলাদার, কে এস নেটওয়ার্ক লিমিটেডের নাজমুল করিম ভূঁইয়া, লিংক থ্রি টেকনোলজিস লিমিটেডের মো. রেজাউল ইসলাম, মাজেদা নেটওয়ার্কস লিমিটেডের মো. নেয়ামুল হক খান, ওয়ান স্কাই কমিউনিকেশনের রাশেদুর রহমান এবং রেড ডাটা লিমিটেডের মইন উদ্দিন আহমেদ।

নির্বাচনে সাধারণ সদস্য শ্রেণিতে ১৪ জন প্রার্থী মূলত দুটি প্যানেলে ভাগ হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ বিষয়ে আইএসপিএবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সাধারণ সদস্য শ্রেণির নয় পদের বিপরীতে নয় সদস্যের একটি প্যানেল শিগগিরই ঘোষণা করব। এই প্যানেলের প্রাথমিকভাবে মনোনীত সদস্যরা হলেন মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম, সাইফুল ইসলাম, রাশেদুর রহমান, মইন উদ্দিন আহমেদ, নাজমুল করিম ভূঁইয়া, মো. নেয়ামুল হক খান, মো. আসাদুজ্জামান, মাহবুব আলম এবং মো. মিঠু হাওলাদার।

নির্বাচনে অপর দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইএসপিএবির সাবেক সভাপতি মো.আজহারুল হক চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংগঠনের পরিবর্তনের জন্য আমরা পাঁচ সদস্যের প্যানেল গঠন করেছি। বিজয়ী হলে সংগঠনের সব সদস্যের কল্যাণে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি টেলিকমের নতুন নীতিমালা এবং স্টারলিংক চালুর প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আমরা বিটিআরসি ও আইসিটি বিভাগের সঙ্গে কাজ করব। প্যানেলের সদস্যরা হলেন—মো.আজহারুল হক চৌধুরী, মো. ইরফান উদ্দিন, মো. শরিফুল ইসলাম, সাব্বির আহমেদ এবং মো. রেজাউল ইসলাম।

আইএসপিএবির সাধারণ ও সহযোগী সদস্য শ্রেণিতে ভোটার সংখ্যা যথাক্রমে ২৬৩ এবং ৬৯৯। আইএসপিএবি নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ আলী। সদস্য হিসেবে রয়েছেন রাকিব হোসেন ও মো. এরশাদ হোসেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ ল ইসল ম ন টওয আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

স্টারলিংক আসছে, দেশি ইন্টারনেট ব্যবসার কী হবে

দেশে আসছে স্টারলিংকের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা। প্রযুক্তিগত দিক থেকে এ পরিষেবা আমাদের জন্য নতুন। তবে ব্যবহারের দিক থেকে এর সঙ্গে তুলনীয় কিছু ইতিমধ্যেই আমরা ব্যবহার করছি। যদিও সেটি ইন্টারনেটের জন্য নয়, টেলিভিশনের জন্য। বিভিন্ন ধরনের তারের মাধ্যমে সংযোগ দেওয়া কেব্‌ল টিভি পরিষেবা ছাড়াও দেশে রয়েছে স্যাটেলাইটভিত্তিক আকাশ ডিজিটাল টিভি।

এই দুই ধরনের পরিষেবায় রয়েছে দামের ও গুণগত পার্থক্য। প্রত্যন্ত এলাকায়, যেখানে তারের মাধ্যমে সংযোগ দিয়ে টেলিভিশন পরিষেবা প্রদান ব্যয়বহুল, অলাভজনক বা কষ্টসাধ্য, সেখানেও সহজে আকাশের ডিশ বসিয়ে টেলিভিশন দেখার ব্যবস্থা করা যায়।

স্টারলিংকের ইন্টারনেটও সেবা প্রদানের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে কিছুটা আকাশের মতো। প্রত্যন্ত অনেক অঞ্চল, দূরবর্তী দ্বীপ, চরাঞ্চল, গহিন বনাঞ্চল, যেখানে তার বা টাওয়ারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া প্রায় অসম্ভব, অথবা গুটিকয়েক ব্যবহারকারীর জন্য সেখানে বিনিয়োগ অলাভজনক, সেখানে স্টারলিংক বা সমজাতীয় পরিষেবা ইন্টারনেট পাওয়ার সুযোগ তৈরি করবে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে যখন প্রচলিত ইন্টারনেট সংযোগ অকেজো হয়ে পড়ে, তখনো বিকল্প হিসেবে থাকবে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেটের গুরুত্ব।

স্যাটেলাইটভিত্তিক যোগাযোগ ও ডেটা আদান-প্রদান পরিষেবা আগেও ছিল। এর মধ্যে জিওস্টেশনারি বা ভূস্থির স্যাটেলাইট পৃথিবীর সঙ্গে সমান গতিতে আবর্তিত হয় এবং পৃথিবীর সাপেক্ষে স্থির থাকে। এগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটারের উচ্চতায় থাকে। পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বেশ দূরে থাকায় এগুলোর মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদানে তুলনামূলক বেশি সময় (ল্যাটেন্সি) লাগে। টেলিভিশনের মতো পরিষেবাগুলোতে মূলত ডেটা গ্রহণ করাটাই যথেষ্ট হলেও ইন্টারনেটের মতো পরিষেবাগুলোতে অনবরত ডেটার আদান-প্রদান, অর্থাৎ উভয়মুখী যোগাযোগ প্রয়োজন বিধায় কম দূরত্বের স্যাটেলাইট অধিক কার্যকর।

জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের তুলনায় লো আর্থ অরবিট (লিও) বা নিম্ন ভূকক্ষপথের স্যাটেলাইট অনেক কম উচ্চতায় পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে বলে সেগুলো থেকে ডেটা আদান-প্রদানে সময় লাগে কম। তবে সেগুলো দিনে কয়েকবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, অর্থাৎ পৃথিবীর সাপেক্ষে স্থির নয়। যেখানে তিনটি জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট দিয়ে প্রায় গোটা পৃথিবী কাভার করে ফেলা সম্ভব, সেখানে উচ্চতার ওপর নির্ভর করে লিও স্যাটেলাইট লাগতে পারে কয়েক শত থেকে কয়েক হাজার পর্যন্ত।

বর্তমানে স্টারলিংকের সাত হাজারের বেশি স্যাটেলাইট ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতার কক্ষপথে আছে। পরিকল্পনা আছে সে সংখ্যা ৩৫ হাজার পর্যন্ত বৃদ্ধি করার। এই বিশাল পরিমাণ স্যাটেলাইটবহর পরিচালনায় কী পরিমাণ ব্যয় হতে পারে, সেটি সহজেই অনুমেয়।

প্যাকেজভেদে স্টারলিংক সংযোগের মূল্য প্রতি মাসে ৩০ ডলার থেকে শুরু হয়ে ২ হাজার ডলার পর্যন্ত আছে। বসতবাড়ির জন্য থাকা রেসিডেনশিয়াল লাইট ও রেসিডেনশিয়াল প্যাকেজের মাসিক সংযোগমূল্য যথাক্রমে ৮০ ডলার ও ১২০ ডলার। তবে দেশভেদে এ মূল্য ভিন্ন। যেমন রেসিডেনশিয়াল লাইট প্যাকেজের দাম জিম্বাবুয়ে বা কেনিয়ার জন্য প্রায় ৩০ ডলার। আবার ভুটানের জন্য ৩৫ ডলার হলেও শ্রীলঙ্কার জন্য ৫০ ডলার। সংযোগ নেওয়ার শুরুতে এককালীন কিনতে হবে প্রায় ৬০০ ডলার মূল্যের হার্ডওয়্যার কিট। এই প্যাকেজে ডাউনলোডের গতি ৭৫ থেকে ২৪০ এমবিপিএস, আপলোডের গতি ৮ থেকে ৩০ এমবিপিএস, ল্যাটেন্সি হবে ৯৯ মিলিসেকেন্ডের কম। দাম অনুযায়ী অন্যান্য প্যাকেজে আছে সেবার মান ও গতির তারতম্য।

বাংলাদেশে আইএসপি ৫০০ থেকে হাজার টাকায় সংযোগ দেয়। এর সঙ্গে স্টারলিংক কীভাবে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকবে, সেটিও দেখার বিষয়। যেসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যবহারকারীর উচ্চগতি ও মানের ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন, প্রাথমিকভাবে তারাই হয়তো স্টারলিংকের লক্ষ্য।

তবে দাম কমাতে পারলে বিশালসংখ্যক ব্যবহারকারীকে সংযুক্ত করতে পারার সম্ভাবনা তো থাকবেই। দেশে মিনিটে ১০ টাকার মোবাইল যোগাযোগ একসময় মিনিটে ১০ পয়সায় গিয়ে ঠেকেছে। স্টারলিংক প্রথমে সাধারণের নাগালের বাইরে থাকলেও ক্রমান্বয়ে গ্রাহক সংযুক্ত করার সম্ভাব্য সব চেষ্টাই তারা করবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে স্বল্পমূল্যে ভাগাভাগি করে ১০ ডলারে খরচ নিয়ে আসা, কিস্তিতে কিট কেনাসহ বিভিন্ন পন্থারও উদ্ভব হয়েছে।

আমাদের দেশের ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী আইএসপিগুলো দামের বিচারে এখন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে। কিন্তু সমস্যা হলো তাদের সেবার মান ও ধারাবাহিকতায়। গতির ওঠানামা, অপ্রতুল গ্রাহকসেবা, প্রতিশ্রুত সেবার সঙ্গে প্রাপ্ত সেবার তফাত ইত্যাদি নানা কারণে তারা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। হয়তো সে সুযোগই প্রতিযোগীরা নিতে চেষ্টা করবে। তবে এটিও ঠিক যে গ্রাহক কিছু বেশি টাকা খরচ করলে প্রচলিত সংযোগেই আরও উচ্চগতি বা উচ্চ মান পাওয়া সম্ভব।

প্রায় তিন হাজার আইএসপির সঙ্গে এ দেশের কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান জড়িত। সেবার মান বাড়ানোর জন্য বাজারে প্রতিযোগিতা আসুক। কিন্তু নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তিলে তিলে গড়ে ওঠা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সামান্যতম অবিচার হওয়ার সুযোগ যেন না থাকে। নীতিসুবিধা থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, ঋণ ইত্যাদি যেন তারা পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্টারলিংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর স্যাটেলাইট সারা পৃথিবীকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। আর আমাদের ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আবর্তিত হচ্ছে শুধুই আমাদের ঘিরে, শুধুই বাংলাদেশকে ঘিরে। কার্যত তারাই আমাদের স্যাটেলাইট।

 ● ড. বি এম মইনুল হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পরিচালক

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টেলিযোগাযোগ খাত সংস্কারে গ্রাহকের স্বার্থ প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, বিটিআরসি চেয়ারম্যান
  • স্টারলিংক আসছে, দেশি ইন্টারনেট ব্যবসার কী হবে