ছয় দাবি আদায়ে কারিগরি শিক্ষার্থীদের ‘কাফন মিছিল’
Published: 18th, April 2025 GMT
ছয় দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে কাফনের কাপড় পরে মিছিল করেছেন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) জুমার নামাজ শেষে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের হল মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে এ মিছিল বের হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে, আমি কে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
কারিগরি শিক্ষার্থীদের ছয় দাবি:
জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন ও মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে।
২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (১০ম গ্রেড) পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এ পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে ‘কারিগরি ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়‘ নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্তি নিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একমত হতে পারছে না। এনবিআর বলছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর আইআরডি বিলুপ্ত হবে। অন্যদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, আইআরডি বহাল থাকবে এবং তারাই রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করবে।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে এনবিআর ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে গত ১৬ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এনবিআরকে বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর পর এনবিআর রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া তৈরি করেছে। এই অধ্যাদেশ আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হতে পারে।
অধ্যাদেশের ১০ ধারায় বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে আইআরডি বিলুপ্ত হবে। রাজস্ব নীতি বিভাগে ন্যস্ত হবে আইআরডির জনবল। এ ছাড়া আইআরডির বিদ্যমান কার্যক্রম রাজস্ব নীতি বিভাগে অথবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অন্য কোনো বিভাগে যথাযথভাবে বিভাজন করবে সরকার। ১১ ধারায় বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নিজ নিজ বিভাগের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন, আদেশ, ব্যাখ্যা ইত্যাদি জারি করতে পারবে।
এদিকে গত ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সংস্কার কমিশনগুলোর বাছাই করা আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগ নির্ধারিত ছকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবে। এ জন্য দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলোর তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ সমকালকে বলেন, যে কাজগুলো রাজনৈতিক দলের মতামত ছাড়াই অল্প সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য তারা উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ পুনর্গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিবের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
আইআরডি সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান সমকালকে বলেন, নতুন অধ্যাদেশ নিয়ে কাজ চলছে। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রস্তাবটি কোন দিক থেকে কীভাবে এসেছে, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। দুই ধরনের প্রস্তাবের মধ্যে কোনটা বাস্তবায়ন হতে পারে– এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সমকালকে বলেন, দুটি প্রস্তাবেই উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গুরুত্বটা বেশি থাকে। তবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কার্যকরভাবে আলাদা হলে সে ক্ষেত্রে একদিকে এনবিআর রাজস্ব নীতি বাস্তবায়নে অধিকতর স্বাধীনতা ভোগ করবে; অন্যদিকে আইআরডি রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী তার স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে পারবে। ভারতে একদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগ এবং অন্যদিকে প্রত্যক্ষ কর বোর্ড ও পরোক্ষ কর বোর্ড এ কাজগুলো করে থাকে। স্বাধীনতা ও জবাবদিহি পরস্পরের পরিপূরক।
বিলুপ্ত হবে এনবিআর
নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আদেশ ১৯৭২ (১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির মূল আদেশ (৭৬ নং) রহিত হবে এবং এর অধীন প্রতিষ্ঠিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত হবে। তবে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিদ্যমান জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ন্যস্ত হবে। ন্যস্ত করা জনবল থেকে প্রয়োজনীয় জনবল যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাজস্ব নীতি বিভাগে পদায়ন করা যাবে। কোনো মামলা বা আইনগত কার্যধারা কোনো আদালতে চলমান থাকলে তা এমনভাবে নিষ্পত্তি করতে হবে, যেন ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির মূল আদেশ রহিত হয়নি এবং আইআরডি বিলুপ্ত হয়নি। আরোপিত কোনো শুল্ক, কর, সারচার্জ, ফি বা অন্য কোনো পাওনা এই অধ্যাদেশ জারির অব্যবহিত পূর্বে অনাদায়ী থাকলে বা কোনো বিষয় অনিষ্পন্ন থাকলে আগের অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে নিষ্পন্ন করতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ
নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে। সরকার এ দুই বিভাগের জন্য যথাযথ সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করবে। রাজস্ব নীতি বিভাগের বিভিন্ন পদ আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, কাস্টমস, অর্থনীতি, ব্যবসা প্রশাসন, গবেষণা ও পরিসংখ্যান, প্রশাসন, নিরীক্ষা ও হিসাব এবং আইনসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের থেকে পূরণযোগ্য হবে। কাস্টমস, এক্সাইজ ও মূল্য সংযোজন কর আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনাল হবে রাজস্ব নীতি বিভাগের সংযুক্ত দপ্তর।
রাজস্ব নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে পরামর্শক কমিটি
সরকার রাজস্ব নীতি প্রণয়নে রাজস্ব নীতি বিভাগকে নিয়মিত পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করবে। অর্থনীতিবিদ, রাজস্ব বিশেষজ্ঞ, আইন বিশেষজ্ঞ, হিসাব ও নিরীক্ষা বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী সংগঠন ও পেশাজীবী প্রতিনিধি, ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রতিনিধিত্বে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হবে।
শুধু প্রশাসনিক কাজ করতে পারবে প্রশাসন ক্যাডার
রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক অনুবিভাগে কাজ করতে পারবেন বিসিএস প্রশাসন, কর, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর্তৃক তপশিলে বর্ণিত আইন বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে নিয়োজিত পদে শুধু বিসিএস কর, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করবেন।