দেশের দলিত ও হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ অধিকারবঞ্চিত। তাঁদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে বৈষম্য বিলোপ করতে হবে। পাশাপাশি দেশে তাঁদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই সম্প্রদায়ের সঠিক সংখ্যা প্রকাশের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হুসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথাগুলো বলেন বক্তারা। ‘সংস্কার ও রাষ্ট্রভাবনায় হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠী’ শীর্ষক সেমিনারটির আয়োজন করে ‘হরিজন অধিকার আদায় সংগঠন’।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হলে যারা সবচেয়ে বেশি নিপীড়িত তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই হবে প্রথম কাজ। সেখানে যদি পরিবর্তন করা যায় তাহলে সমাজের বাকি অংশেও পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। সেটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’ তিনি বলেন, ‘হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের মতো যেসব সংগঠন আছে তাদের সংগঠিত করতে হবে।’

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, দলিত-হরিজনদের অধিকার আদায়ে তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, নিজেদের মধ্যে বিবাদ রাখা যাবে না। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় কোটা পদ্ধতি রাখা উচিত বলেন সারা হোসেন। তিনি বলেন, এটি সরকারি, বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই হতে পারে, এর মধ্য দিয়ে দলিত-হরিজনসহ পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় এটি করা উচিত।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, হরিজনরা পিছিয়ে নেই বরং তাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে। সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের নানা প্রকল্প রয়েছে, তার মাধ্যমে কাজের সুযোগ রয়েছে। সে জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘দলিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমে আমার দাবি থাকবে শুমারিতে হরিজন-দলিতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করা, যেন তাদের জন্য উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা সহজ হয়। দ্বিতীয়ত দলিত এবং হরিজনদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। পাশাপাশি এ সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য কর্মসংস্থানের দাবি জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘হরিজন ও দলিতদের ক্ষেত্রে ধর্মগত-জাতগত পরিচয় এবং পেশাগত পরিচয়ের ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করছিলাম স্বাধীনতার পর এ বৈষম্যগুলো থাকবে না, কিন্তু হয়েছে। ২৪–এর গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক বয়ান তৈরি করা হয়েছে; সে জন্য আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে।’

সেমিনারে বৈষম্যকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বাধীন কমিশন ও হরিজন-দলিতদের স্বার্থ রক্ষায় ‘বৈষম্য বিলোপ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ গঠনসহ আটটি দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠীকে বিনা মূল্যে শিক্ষা ও চিকিৎসা, শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোটা, উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়েদের সরকারি সব পেশায় সম-অধিকার নিশ্চিত করতে বিশেষ কোটাব্যবস্থা চালু, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেতন বৃদ্ধি ও চাকরি স্থায়ীকরণ, সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি, উৎসব বোনাস, অবসর ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবি রয়েছে।

এ ছাড়া সরকারি খাসজমিতে হরিজন জনগোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে বসবাসের বন্দোবস্ত, পুরোনো জায়গায় বসবাসরত হরিজন-দলিতদের নামে দলিল করা এবং পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ না করা, হরিজন জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হরিজন-দলিতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান এবং শহীদ পরিবারের দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেওয়া, সংসদে সংরক্ষিত আসনে হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগে জাত হরিজনদের জন্য ঘোষিত ৮০ শতাংশ কোটা বাস্তবায়নের দাবিও জানানো হয়েছে সেমিনারে।

হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের সভাপতি সুরেশ বাসফোরের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের উপদেষ্টা লিটন বাসফোর, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত এবং বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি শ্রী কৃষ্ণলাল প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর জনগ ষ ঠ র দ র জন য ন দল ত সরক র ত করত

এছাড়াও পড়ুন:

ফেসবুকের বন্ধুতালিকা ‘রিসেট’ করার ভাবনা ছিল জাকারবার্গের

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিযোগিতা নস্যাৎ করে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে চলছে মেটার বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত মামলার বিচার। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ সোমবার এই মামলায় সাক্ষ্য দেন। শুনানিতে আদালতে উপস্থাপন করা হয় মেটার অভ্যন্তরীণ কিছু ই–মেইল, যেখানে উঠে আসে এক সময় সবাইকে ফেসবুকে বন্ধু তালিকা ‘শূন্য’ থেকে শুরু করতে বাধ্য করার এক অভিনব প্রস্তাব।

২০২২ সালে পাঠানো একটি ই–মেইলে জাকারবার্গ লেখেন, বন্ধু তৈরিতে দ্বিগুণ জোর। সবাইকে তাঁদের বন্ধুতালিকা (গ্রাফ) মুছে দিয়ে নতুন করে শুরু করতে দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, কিশোর-তরুণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ইনস্টাগ্রামের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ায় ফেসবুকের ব্যবহার কমছিল। এই প্রেক্ষাপটে ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের সক্রিয়তা বাড়াতে নতুন কিছু ভাবনার অংশ হিসেবেই জাকারবার্গ ওই প্রস্তাব দেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে মেটার অভ্যন্তরেই প্রস্তাবটি নিয়ে আপত্তি ওঠে। ফেসবুক বিভাগের প্রধান টম অ্যালিসন ই–মেইলের জবাবে লেখেন, আপনার প্রস্তাবিত প্রথম বিকল্পটি (বন্ধু সংযোগে জোর) আমার কাছে বাস্তবসম্মত বলে মনে হচ্ছে না। ইনস্টাগ্রামে বন্ধু সুবিধাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটি অকার্যকর হলে ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

জাকারবার্গ আরও একটি বিকল্প প্রস্তাব করেছিলেন। ফেসবুককে বন্ধুভিত্তিক মাধ্যমের বদলে অনুসরণভিত্তিক (ফলোয়ার) মাধ্যমে রূপান্তর করার চিন্তা ছিল তাঁর। যদিও এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়নি, তবে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে উঠে আসা এসব ভাবনা থেকে প্রযুক্তি মাধ্যমটি ভবিষ্যতে কোন পথে হাঁটতে চায়, তার একটা ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়।

মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) ২০২০ সালে মেটার বিরুদ্ধে এই প্রতিযোগিতা-বিরোধী মামলা করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখার জন্য পরিকল্পিতভাবে প্রতিযোগীদের ঠেকিয়ে দিয়েছে। এফটিসির ভাষ্য, সম্ভাবনাময় প্রতিযোগীরা যখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, তখন মেটা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার বদলে কিনে নিয়ে সেই ‘হুমকি’ দূর করেছে। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি উদ্ভাবনশীল মাধ্যমগুলোকে হুমকিস্বরূপ মনে করে অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতাবিরোধী একক আধিপত্য গড়ে তুলেছে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ