একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আবু সাঈদ-মুগ্ধরা জীবন দেননি: হাসনাত কাইয়ুম
Published: 18th, April 2025 GMT
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেছেন, সংস্কারের বিরুদ্ধে একটি দল রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে, শুধু তাদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য আবু সাঈদ-মুগ্ধরা জীবন দেননি। গণ-অভ্যুত্থানের মৌলিক আকাঙ্ক্ষা ছিল রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার।
আজ শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আয়োজিত সমাবেশে এ কথাগুলো বলেন হাসনাত কাইয়ুম।
১৭ এপ্রিল প্রবাসী সরকারের শপথ গ্রহণ দিবস স্মরণে এবং শিল্প ক্ষেত্রে গ্যাস ও ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, পাচার-লুণ্ঠনকারীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, সংবিধান সংস্কার সভা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে করার দাবিতে এই সমাবেশ করা হয়।
হাসনাত কাইয়ুম বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে স্মরণ রাখতে হবে, গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষ নতুন রাজনীতির কথা বলছেন। এর অর্থ হলো, আন্দোলনে যাঁরা রাস্তায় ছিলেন, তাঁদের নিয়ে নতুন বন্দোবস্ত ঠিক করা। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলে এই সরকারও পার পাবে না।
রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের মাধ্যমে মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন হাসনাত কাইয়ুম। অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলে, ‘হঠাৎ করে ভোজ্যতেল ও শিল্প ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। অবিলম্বে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করুন। আর শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কেন আমাদের দেশে আসবেন? নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধি তাঁদের নিরুৎসাহিত করবে।’
হাসনাত কাইয়ুম বলেন, গত ১৫ বছরে দেশ থেকে যেসব টাকা লুট হয়েছে, বিদেশে পাচার হয়েছে, এদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। বিপরীতে অর্থ পাচারকারীরা নতুন পত্রিকা, টেলিভিশনের মালিক হচ্ছেন। তাঁরা নতুন করে পুনর্বাসিত হচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি সরকার। এই পরিবর্তন না হলে মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন নিশ্চিত হবে না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শপথ নেওয়া প্রবাসী সরকার সবচেয়ে সফল ছিল বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির অর্থবিষয়ক সমন্বয়ক দিদার ভূঁইয়া। তিনি বলেন, প্রবাসী সরকারের চেয়েও বেশি সফল হওয়ার সুযোগ ছিল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের। কিন্তু তারা সেই সুযোগ কতটা কাজে লাগাতে পেরেছে, সেটা বিবেচনা করতে হবে। হাতে গোনা কিছু সফলতা ছাড়া তাদের তেমন কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের নীতি প্রান্তিক কৃষকদের বঞ্চিত করছে বলে মন্তব্য করেন দিদার ভূঁইয়া। তিনি বলেন, সব পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা উৎপাদনকারীর হাতে থাকলেও কৃষিপণ্যের দাম মধ্যস্বত্বভোগীরা নির্ধারণ করেন। অন্য দ্রব্যের দাম লাগামহীন, অথচ কৃষিপণ্যের দাম কম। এই সরকার কৃষকের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে। তাঁরা সরকারকে প্রান্তিক মানুষকে ভালো রাখার পথ উন্মুক্ত করতে বলছেন, তা না হলে এই সরকার ব্যর্থ সরকারে পরিণত হবে।
সমাবেশ সঞ্চালনায় ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সমন্বয়ক সোহেল শিকদার। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য জাকিয়া শিশির, কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মামুনুর রশিদ, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসির উদ্দিন, রাষ্ট্র চিন্তার সদস্য সেলিম খান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফেসবুকের বন্ধুতালিকা ‘রিসেট’ করার ভাবনা ছিল জাকারবার্গের
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিযোগিতা নস্যাৎ করে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে চলছে মেটার বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত মামলার বিচার। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ সোমবার এই মামলায় সাক্ষ্য দেন। শুনানিতে আদালতে উপস্থাপন করা হয় মেটার অভ্যন্তরীণ কিছু ই–মেইল, যেখানে উঠে আসে এক সময় সবাইকে ফেসবুকে বন্ধু তালিকা ‘শূন্য’ থেকে শুরু করতে বাধ্য করার এক অভিনব প্রস্তাব।
২০২২ সালে পাঠানো একটি ই–মেইলে জাকারবার্গ লেখেন, বন্ধু তৈরিতে দ্বিগুণ জোর। সবাইকে তাঁদের বন্ধুতালিকা (গ্রাফ) মুছে দিয়ে নতুন করে শুরু করতে দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, কিশোর-তরুণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ইনস্টাগ্রামের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ায় ফেসবুকের ব্যবহার কমছিল। এই প্রেক্ষাপটে ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের সক্রিয়তা বাড়াতে নতুন কিছু ভাবনার অংশ হিসেবেই জাকারবার্গ ওই প্রস্তাব দেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে মেটার অভ্যন্তরেই প্রস্তাবটি নিয়ে আপত্তি ওঠে। ফেসবুক বিভাগের প্রধান টম অ্যালিসন ই–মেইলের জবাবে লেখেন, আপনার প্রস্তাবিত প্রথম বিকল্পটি (বন্ধু সংযোগে জোর) আমার কাছে বাস্তবসম্মত বলে মনে হচ্ছে না। ইনস্টাগ্রামে বন্ধু সুবিধাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটি অকার্যকর হলে ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
জাকারবার্গ আরও একটি বিকল্প প্রস্তাব করেছিলেন। ফেসবুককে বন্ধুভিত্তিক মাধ্যমের বদলে অনুসরণভিত্তিক (ফলোয়ার) মাধ্যমে রূপান্তর করার চিন্তা ছিল তাঁর। যদিও এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়নি, তবে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে উঠে আসা এসব ভাবনা থেকে প্রযুক্তি মাধ্যমটি ভবিষ্যতে কোন পথে হাঁটতে চায়, তার একটা ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়।
মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) ২০২০ সালে মেটার বিরুদ্ধে এই প্রতিযোগিতা-বিরোধী মামলা করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখার জন্য পরিকল্পিতভাবে প্রতিযোগীদের ঠেকিয়ে দিয়েছে। এফটিসির ভাষ্য, সম্ভাবনাময় প্রতিযোগীরা যখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, তখন মেটা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার বদলে কিনে নিয়ে সেই ‘হুমকি’ দূর করেছে। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি উদ্ভাবনশীল মাধ্যমগুলোকে হুমকিস্বরূপ মনে করে অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতাবিরোধী একক আধিপত্য গড়ে তুলেছে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস