চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে ভারত যাচ্ছেন জেডি ভ্যান্স
Published: 18th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স চার দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন। তিনি এমন সময় ভারতে যাচ্ছেন যখন প্রতিদেশী দেশ চীনের সঙ্গে শুল্ক আরোপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। দুই শক্তিশালী দেশের এই দ্বন্দ্বে বিশ্ব অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে দেনদরবারের মধ্যে এই সফরে জেডি ভ্যান্স ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। অন্যদিকে জেডি ভ্যান্সের এ সফরের ঠিক আগ মুহূর্তে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলো সফর শেষ করেছেন। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে চীনকে একটি স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শি জিনপিং এ সফর করেন। সর্বশেষ দুই দিন আগে তিনি মালয়েশিয়া সফরে ছিলেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জেডি ভ্যান্সের সফরের কথা জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সফরে দুই দেশই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা-পর্যালোচনার সুযোগ দেবে।
ভ্যান্সের সফরসূচি অনুযায়ী, দিল্লি যাওয়ার আগে আজ শুক্রবার তিনি ইতালি সফরে যাবেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৃতীয় মেয়াদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভ্যান্স। এ বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প এখনও কোনো দেশ সফর করেননি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার (২১ এপ্রিল) সফরের প্রথম দিন অর্থনীতি ও ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে তাদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। উভয় দেশ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে কাজ করছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ছাড়া বাকি সব দেশের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন। অন্যদিকে অন্য দেশগুলো উচ্চ শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন, কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে এই হার ২৪৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। তার জবাবে মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে চীন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন এখন শুল্ক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এর ফলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি গতি কিছুটা ধীর হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন শুল্কনীতি ঘোষণার পরপরই দিল্লি ও ওয়াশিংটন বাণিজ্যিক সমঝোতায় দ্রুত পৌঁছাতে কাজ করে যাচ্ছে। ভারত ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পণ্যের উপর শুল্ক কমিয়েছে এবং ট্রাম্পের হুমকির মুখে আরও বিস্তৃত পরিসরে শুল্ক কাটছাঁটের কথা বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ছিল যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পৌঁছেছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলারে। ট্রাম্পের অভিষেকের পরপরই ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং দুই নেতা আলোচনায় বসেছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র শ ল ক আর প শ ল ক আর প র সফর
এছাড়াও পড়ুন:
জীবনের প্রথম উপার্জন, তা–ও আবার বছরের পয়লা দিনে
আমার ছেলেবেলায় পয়লা বৈশাখের বড় একটা অংশজুড়ে ছিল কেনাকাটা। ১০-১৫ দিন আগে থেকেই বাবা আর কাকার সঙ্গে ‘এটা কিনে দাও, সেটা কিনে দাও’ বলে দেনদরবার চলত। এখনো বাড়িতে কেনাকাটার রীতি আছে। তবে এখন আর জোর করার প্রয়োজন হয় না। উল্টো যদি বলি, ‘লাগবে না, সেদিনই না কিনলাম’ বাবা রাগ করেন, শোনেন না। এবারও বিকাশে টাকা পাঠিয়ে বললেন, ‘কিছু কিনে নিও।’
পরপরই ফোনে মা আর বোনের হুমকি, ‘কিনে ছবি পাঠাবি। না কিনলে কিন্তু খবর আছে!’
বাড়ির একেবারে কাছেই বড় বটগাছটার নিচে বেশ কয়েকটা দোকান ছিল। একই পাড়ায় আমরা যাঁরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়তাম, অনেকেই দলবেঁধে বটগাছের নিচে ক্রিকেট, হাডুডুসহ বিভিন্ন খেলা খেলতাম। সংগত কারণেই দোকানি কাকুরা আমাদের চিনতেন। পয়লা বৈশাখের দিন কোনো না কোনো দোকানে হালখাতা থাকতই। দোকানের সামনের দিকটা রঙিন কাগজ আর কাগজের ফুল দিয়ে সাজানোর দায়িত্ব আমাদের ওপর পড়ত। নববর্ষের দিন সকালে দলবেঁধে দোকান সাজানোর কাজ করতাম। বিকেলে বন্ধুরা মিলে মেলায় যেতাম। নাগরদোলা, গানবাজনা, ম্যাজিক শো—কত–কী যে থাকত, গেলেই প্রাণ জুড়িয়ে যেত।
বন্ধুরা মিলে একবার ঠিক করলাম, মেলায় আমরাও দোকান দেব। তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। কিন্তু দোকান দিতে হলে মেলার আয়োজকদের কাছ থেকে জায়গা বরাদ্দ নিতে হবে, তা ছাড়া দোকান নিতে হলে নির্দিষ্ট টাকাও দিতে হবে। শুরুতেই নিজেদের টিফিনের জমানো টাকা থেকে একটা তহবিল তৈরি করা হলো। কিন্তু অনুমতি?
সেবার মেলার মাতব্বর ছিলেন আমাদের বান্ধবী মৌবনী ভদ্রের কাকা। মৌবনীর সঙ্গে পড়ালেখা নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিল। জানতাম, সে আমাকে ঈর্ষা করে। তাই কথাটা তাকে বলব কি বলব না যখন ভাবছি, তখনই বন্ধুরা এসে নিয়ে গেল মৌবনীর কাছে। শুরুতে যদিও বলেছিল, ‘ছোট্ট পোলাপানের আবার দোকান কি রে!’
কিন্তু পরপরই হেসে বলেছিল, ‘চিন্তা করিস না, ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তবে আমিও তোদের সঙ্গে থাকব। কাজ তেমন কিছু করতে পারব না। শুধু ভাগের টাকাটা দেব, পরে লাভ যা হবে, ভাগ দিবি।’
অগত্যা রাজি হতে হলো। ৫০ শতাংশ ছাড়ে মৌবনীর তরফে জায়গা বরাদ্দ পেলাম আমরা। দোকানের নাম রাখা হলো, ‘দুই দিনের দোকানি’।
আমার নিয়মিত বাজারে যাতায়াত ছিল। বাবার পরিচিত বড় দোকানও ছিল কয়েকটা। মেলার আগের দিন গিয়ে, বিক্রি না হলে ফেরত নেওয়ার শর্তে মালামাল নিয়ে এলাম। দোকানটাকে সবাই মিলে সাজালাম। ঝড়ের দিনে তালগাছ থেকে বাবুই পাখির বাসা নিচে পড়ত। সুমিতের সংগ্রহে ছিল। সুমিত নিয়ে এল। মৌবনী ভালো আঁকতে পারত। সুন্দর পাটির পরে ‘শুভ নববর্ষ/দুই দিনের দোকানির থেকে শুভেচ্ছা নিন’ লিখে দোকানের সামনে টানিয়ে দিল। মেলার ওই দুই দিন সেবার কি যে হইচই আর আনন্দে কেটেছিল, লিখে প্রকাশ করা কঠিন। আমাদের লাভও হয়েছিল। ৪২১ টাকা।
মৌবনী, সুমিত, রুদ্র সবাই কি খুশি! জীবনের প্রথম উপার্জন, তা–ও আবার বছরের পয়লা দিনে। চোখ বুজে পেছনে ফিরে তাকালে সব স্পষ্ট ভেসে ওঠে। বৃষ্টির প্রথম ফোঁটার মতো প্রবল মায়ায় হৃদয় তখন সিক্ত হয়ে যায়।
আরও পড়ুনগামছা কীভাবে বাঙালি সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হয়ে উঠল১৪ এপ্রিল ২০২৫