কয়েক মাস আগে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির কার্যালয়টি ছিল জরাজীর্ণ। নেতা–কর্মীরা পুলিশের ভয়ে সেখানে বসতে পারেননি। গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর চিহ্নই ছিল না জেলা জামায়াত কার্যালয়ের। এই দল দুটির কার্যালয় এখন জমজমাট। দুই দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে চাঙা ভাব। তাঁরা ফুরফুরে মেজাজে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এদিকে গাইবান্ধা জেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কোনো কমিটি এখনো হয়নি। যাঁরা জাতীয় নাগরিক কমিটিতে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই এনসিপির ব্যানারে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও গণসংযোগ এবং নানা সামাজিক কাজ করে যাচ্ছেন।

রমরমা থাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের এখন অস্তিত্বই নেই। দলটির দুজন সাবেক সংসদ সদস্যসহ অনেক নেতা–কর্মী কারাগারে। শীর্ষস্থানীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ফোন বন্ধ। আর জাতীয় পার্টি ও জাসদের কর্মকাণ্ড অনেকটা থেমে আছে। সব মিলিয়ে গাইবান্ধা জেলায় রাজনীতির দৃশ্যপট পুরোটাই পাল্টে গেছে।

ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি

মামলার কারণে গত ১৫ বছর বিএনপির নেতা–কর্মীরা বিপর্যস্ত ছিলেন। দফায় দফায় শহরের সার্কুলার রোডের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে নেতা–কর্মীরা দলীয় কার্যালয় বসতে পারেননি। তাঁরা পালিয়ে বেড়াতেন। অনেক নেতা মাসের পর মাস কারাভোগ করে হতাশ হয়ে পড়েন। ৫ আগস্টের পর এখানে দলটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন পরিপাটি দলীয় কার্যালয়।

বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এখনো নেতা–কর্মীরা গুছিয়ে উঠতে পারেননি। সাত বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে জেলা বিএনপি, জেলা যুবদল ও জেলা ছাত্রদল। ফলে এ নিয়ে নেতা–কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধে আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিএনপি নেতা বলেন, অবিলম্বে জেলা ও উপজেলা কাউন্সিল সম্পূর্ণ না হলে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া আসন্ন ভোটের মাঠে সম্ভাবনা থাকলেও গত ৫ আগস্টের পর দলটি নেতা–কর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনতে পারেনি। ৫ আগস্টের পর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ইতিমধ্যে যুবদলের পাঁচজনকে দল থেকে বহিষ্কার এবং অনেককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, ফ্যাসিস্ট কিছু আওয়ামী লীগ নেতা ও দলের নিষ্ক্রিয় নেতারা বিভিন্ন থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কমিটিতে জায়গা পেয়েছে। ফলে দলের ত্যাগী নেতা–কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

এই বাস্তবতার মধ্যেও প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচনের গণসংযোগ করছেন। অনেকে উঠান বৈঠক করছেন। ভোট ও দোয়া চাইছেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

জেলা বিএনপির সভাপতি মইনুল হাসান সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে পলাশবাড়ী, সাদুল্লাপুর ও ফুলছড়ি থানা এবং গোবিন্দগঞ্জ পৌর বিএনপির কাউন্সিল হয়েছে। বর্তমানে ইউনিয়ন কাউন্সিল চলমান। এরপর থানা ও জেলা বিএনপির কাউন্সিল হবে। জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী আসনে মাঠপর্যায়ে কেউ নেই। এখানে তিনি একক প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন। ইতিমধ্যে অসংখ্য উঠান বৈঠক করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন, তবে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

সাজানো হয়েছে জামায়াত কার্যালয়

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় গাইবান্ধা শহরের ডেভিটকোম্পানি পাড়ায় অবস্থিত জেলা জামায়াতের কার্যালয়টি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গত ১৫ বছর জামায়াতের কার্যালয় ছিল না। অনেক নেতা কারাভোগ করেছেন, অনেকে পালিয়ে ছিলেন। সেই কার্যালয় এখন সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।

এখানে জেলা জামায়াতের কমিটি সুসংগঠিত। দলটির প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভা, থানা ও জেলা কমিটি আছে। ইতিমধ্যে জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নও চূড়ান্ত হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠপর্যায়ে গণসংযোগ করছেন। তাঁদের দলীয় বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। ভোট ও দোয়া চাইছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ফেসবুকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

জেলা জামায়াতের আমির মো.

আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আমরা গণসংযোগ শুরু করেছি। ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছি।’

এনসিপির কমিটি নেই

গাইবান্ধা জেলা ও সাতটি উপজেলায় এনসিপির কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। যাঁরা জাতীয় নাগরিক কমিটিতে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই এনসিপির ব্যানার ব্যবহার করে কর্মসূচি পালন করছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এনসিপি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর থেকে নেতা–কর্মীরা নতুন সদস্য সংগ্রহ, গণসংযোগ, ইফতার মাহফিল, বিভিন্ন দিবস পালন, বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় সভা, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, ঈদে চরাঞ্চলের খোঁজখবর নেওয়া, স্কুল–কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ–মন্দির ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নমূলক কাজের খোঁজখবর নেওয়া ও ব্যবস্থা গ্রহণ, পোস্টার সাঁটানো ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) ও গাইবান্ধা জেলার দায়িত্বশীল নাজমুল হাসান এবং কেন্দ্রীয় সদস্য ফিহাদুর রহমানের নেতৃত্বে গাইবান্ধায় সংগঠিত হচ্ছে দলটি। এর মধ্যে নাজমুল হাসান গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বদ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর বাড়ি সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে।

এ বিষয়ে নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই উপজেলায় নতুন সদস্য সংগ্রহ, গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা করছি। নেতা–কর্মীদের উৎসাহ দিচ্ছি। ছাত্র-জনতার নতুন দল নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি হচ্ছে। বেশ সাড়া পাচ্ছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৩ আসনে মনোনয়ন চাইব।’

গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ কার্যালয়

গত ৫ আগস্টের আগে সব সময় রমরমা থাকত জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়। নেতা–কর্মীদের পদচারণে মুখরিত ছিল। গাইবান্ধা শহরের রেলগেটে জেলা আওয়ামী লীগের টিনশেড কার্যালয়টি এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় ছাত্র–জনতা। এখন সেই কার্যালয়ের অস্তিত্বই নেই।

দলটির সাবেক দুজন সংসদ সদস্যসহ অনেক নেতা–কর্মী কারাগারে। দুজন সাবেক সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগম ও শাহ সারোয়ার কবিরকে বিএনপি অফিস ভাঙচুর মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি তিনজন সাবেক এমপি পলাতক। যাঁরা বাইরে আছেন, তাঁদের অনেকেই হয়রানি এড়াতে বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলছেন, যাঁরা পারছেন না তাঁরা কোণঠাসা হয়ে আছেন।

জেলার শীর্ষস্থানীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে না। মুঠোফোনও বন্ধ। গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁরা আত্মগোপনে আছেন।

জাতীয় পার্টি ও জাসদের কার্যক্রম থেমে আছে

একসময় গাইবান্ধার পাঁচটি আসনই জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর জেলায় জাতীয় পার্টি ও জাসদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অনেকটা থেমে আছে। আওয়ামী লীগের জোটে থাকার বিষয় দল দুটির ওপর অনেকটা প্রভাব ফেলেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ৫ আগস ট র পর অন ক ন ত এনস প র ব এনপ র গণস য গ য গ কর কর ম র উপজ ল করছ ন দলট র

এছাড়াও পড়ুন:

বাগেরহাটে বাস-ইজিবাইক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩

বাগেরহাটে বাস ও ইজিবাইক মুখোমুখি সংঘর্ষে সিয়াম গাজী (২০) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। শনিবার সকালে বাগেরহাট-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের বলভদ্রপুর বালিয়াডাঙ্গা নামক স্থানে এই দুর্ঘটনায় ইজিবাইকের চালকসহ আরও তিনজন আহত হয়।

নিহত সিয়াম গাজী মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতী গ্রামের মজিবর গাজীর ছেলে। আহতরা হলেন- নিহতের বাবা মজিবর গাজী (৫০), তাদের প্রতিবেশী রশিদ খান (৭৫) ও ইজিবাইক চালক বাপ্পি (৩০)।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মহেষপুরা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. তোমেজ উদ্দীন বলেন, সিয়াম ও তার বাবা তাদের একজন প্রতিবেশিকে নিয়ে ইজিবাইকে করে পিরোজপুর সদরে তাদের নিকট আত্মীয়ের মরদেহ দেখতে যাচ্ছিলেন। বলভদ্রপুর বালিয়াডাঙ্গা নামক স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক অর্থাৎ পিরোজপুর থেকে বাগেরহাটের দিকে আশা একটি যাত্রীবাহী বাসের ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ইজিবাইকের চালকসহ চারজন গুরুতর আহত হয়। এর মধ্যে সিয়াম গাজী নামের একজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পরে মারা যান। অন্যরা বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রাস্তার পাশে একটি ট্রাক রাখা ছিল। যার ফলে ইজিবাইক এবং যাত্রীবাহী বাস কেউ কাউকে দেখতে পায়নি। যানবাহন দুটি ট্রাকটিকে পাশ কাটিয়ে সড়ক অতিক্রম করার সময় মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ