‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।

এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো.

শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অপহরণ র চ কম র অপহ ত

এছাড়াও পড়ুন:

গোবিন্দগঞ্জে স্কুলছাত্র সাব্বির হত্যার বিচারের দাবিতে মহাসড়কে অবস্থান

স্কুলছাত্র সাব্বির হোসেন (১৫) হত্যার বিচারের দাবিতে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। বুধবার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরের চারমাথা মোড়ে দুপুর ১২টা থেকে আধা ঘণ্টা অবস্থান করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তাঁরা।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার রামনাথপুর এলাকার বাসিন্দারা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিশুবাড়ি দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সমবেত হন। সেখান থেকে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরে আসেন। দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা চারমাথায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নেন। বিক্ষোভকারীরা হত্যাকারীদের বিচার ও ফাঁসির দাবি জানান। এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা ও গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে অপরাধীদের বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন। এতে আধা ঘণ্টা পর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

কর্মসূচি চলাকালে এলাকাবাসীর পক্ষে বক্তব্য দেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান, স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল হক, কামাল হোসাইন, ফিরোজ কবির, খোকন মিয়া প্রমুখ। বক্তারা বলেন, অপহরণের চার দিন পর সাব্বিরের লাশ পাওয়া গেছে। আসামিরা স্কুলছাত্রকে নির্মমভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। তার হাত-পা ভেঙে শৌচাগারের কূপে ফেলে দেয়। পরে মাথায় পাথরচাপা দিয়ে রাখা হয়। এমন ঘটনা যেন আর কেউ ঘটানোর সাহস না করতে পারে, এ জন্য অপহরণ ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল ইসলাম বলেন, সাব্বির হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় অন্য কোনো ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

অপহরণের চার দিন পর মঙ্গলবার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকার আখ খামারের পরিত্যক্ত শৌচাগারের কূপ থেকে স্কুলছাত্র সাব্বির হোসেনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সাব্বির উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের রামনাথপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও বিশুবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। এ ঘটনায় মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানায় অপহরণ মামলা করেন। মামলায় রামনাথপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম (১৮), একই উপজেলার বিশুবাড়ী গ্রামের আবদুল আলীম (১৮), তরফকামাল গ্রামের ইউনুস আলীসহ (৩৫) তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়। চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ইউনুস, রবিউল ও আলীমকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কবিরুল ইসলাম (২০) নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার প্রথম আলোর অনলাইনে ‘গাইবান্ধায় অপহরণের চার দিন পর স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুনগাইবান্ধায় অপহরণের চার দিন পর স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার১৫ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাগড়াছড়িতে অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে অভিযান অব্যহত
  • সন্তানদের ফিরিয়ে দিন হাত জোড় করছি
  • চবির ৫ শিক্ষার্থীর অবস্থান শনাক্ত, বিশেষ অভিযান চলছে: সেনাবাহিনী
  • আপন মামার হাতে খুন রোহিঙ্গা কিশোর, মুক্তিপণ দিয়েও রক্ষা হয়নি
  • সন্ধান মেলেনি চবির অপহৃত ৫ শিক্ষার্থীর
  • অপহৃত শিক্ষার্থীদের বাবা-মাকে গোপন স্থানে ডেকেছে অপহরণকারীরা
  • গোবিন্দগঞ্জে স্কুলছাত্র সাব্বির হত্যার বিচারের দাবিতে মহাসড়কে অবস্থান
  • খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীকে অপহরণ
  • খাগড়াছড়িতে চবির ৫ শিক্ষার্থীকে অপহরণের অভিযোগ