যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতি কমানো নিয়ে কথা হয়েছে: পররাষ্ট্রসচিব
Published: 18th, April 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কীভাবে বাণিজ্য–ঘাটতি কমানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ। ঢাকা সফররত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক এবং পূর্ব এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক উপসহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হেরাপের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মো.
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ তথ্য জানান।
পররাষ্ট্রসচিব জানান, দুই মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে সফর করছেন। বৃহস্পতিবার তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই সরকারের চলমান সংস্কার, নির্বাচন, ইউএসএইডের তহবিল কাটছাঁট পুনর্বিবেচনা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনার সময় সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরোপিত উচ্চ শুল্ক নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কথা বলেছি। আমরা এ পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি, তা তাঁদের জানিয়েছি। আমরা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য–ঘাটতি কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। সামনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কী কী ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে, সেটা তাঁদের আমরা জানিয়েছি।’
মার্কিন পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়েছে, ৯০ দিনের সময় খুবই কম এবং সমস্যা সমাধানের জন্য ৯ জুলাইয়ের আগে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশ ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিত রাখার বিষয়টিকে বিরতি হিসেবে বিবেচনা করে না এবং উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থে নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শের উপায় খুঁজে বের করার জন্য সক্রিয়ভাবে এই সময়কে কাজে লাগাচ্ছে।
জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আলোচনায় বিশেষ স্থান পেয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি আমরা বড়ভাবে আলোচনা করেছি। আমরা এ সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের ওপর জোর দিয়েছি। তাঁরা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের অভিমত জানতে চেয়েছেন।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আগামী সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে উচ্চপর্যায়ের একটি সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। আমরা তাঁদের রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়েছি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রসচ ব পরর ষ ট র ন পরর ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায় বিএনপি
ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে বিএনপি। আজ বুধবার বিকেলে গুলশানে মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশনের বাসায় এ বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ চার সদস্যদের প্রতিনিধিদল অংশ নয়।
বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈঠকে ট্যারিফ (শুল্ক) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা একটা টলারেবল (সহনীয়) অবস্থায় না আনলে তো রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং এটার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আর আলোচনা হয়েছে নির্বাচন তো আছেই। সবাই তো জানতে চাচ্ছে, নির্বাচন কবে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কী চিন্তা করছে, তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘নির্বাচন তো ডিসেম্বরের মধ্যে স্বভাবতই। আমরা বলেছি, নির্বাচন ডিসেম্বরের আগেও হতে পারে।’
এ প্রসঙ্গে আজ দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, সে কথাও উল্লেখ করেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যেসব সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো হবে। এটা তো খুব সহজ ব্যাপার। আমরা সবাই আমাদের প্রস্তাবগুলো জমা দিয়েছি, যে সংস্কারগুলোর বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেটা তো ১৫, ২০ দিন বা এক মাসের মধ্যে করে ফেলতে পারে। এরপর যে সনদ, যদি ঐকমত্য হয়, তাহলে সনদে সিগনেচার তো সময়ের ব্যাপার না, সুতরাং নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেওয়ার তো কোনো কারণ নেই।’
বিএনপি কেন দ্রুত নির্বাচন চায়, তার ব্যাখ্যাও মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উল্লেখ করেছেন দলটির নেতারা। আমীর খসরু বলেন, ‘স্বভাবতই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে না আনলে আমরা বলেছি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের ভেতরে-বাইরে যে সিদ্ধান্ত স্থগিত আছে, কেউ সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তা ছাড়া নির্বাচিত সরকার এলে সিদ্ধান্তগুলো সহজে আসবে এবং জনগণের সমর্থন থাকলে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়।’
দেশের ভেতরে-বাইরে সবাই নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছেন মন্তব্য করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বৈঠকে তাঁরা (মার্কিন প্রতিনিধিরা) জানতে চেয়েছেন সরকারের পলিসি কী হবে, বিএনপির পলিসি কী হবে, আমাদের অর্থনৈতিক পলিসি কী হবে, তা নিয়ে তাঁরা জানতে চেয়েছেন, আমরা বিস্তারিত বলেছি।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, বিগত দিনে বাংলাদেশে যত সংস্কার হয়েছে, এই যে অর্থনৈতিক সংস্কার বিএনপির সময়, রাজনৈতিক সংস্কার বিএনপির সময়ে হয়েছে, বহুদলীয় গণতন্ত্র, মুক্তবাজার অর্থনীতি থেকে শুরু করে বিচার বিভাগীয় সব সংস্কার বিএনপির সময়ে হয়েছে এবং অর্থনৈতিক সচ্ছলতা সংস্কারের কারণে এসেছে এবং আগামী দিনে আরও সংস্কার হবে, সেটি তাঁরা জানতে চেয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া পাল্টা শুল্ক বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে করণীয় নিয়ে বলেছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান আমীর খসরু।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক এই জায়গাতেই বিএনপির আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠক শেষে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সময়ে যে মাঠপ্রশাসন রয়েছে, সেই মাঠপ্রশাসন আমাদের কাছে মনে হয়েছে নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চলছে, সেই জায়গায় প্রশাসনকে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করতে দেখছি, সেই জায়গাগুলো আমরা বলেছি।’
এনসিপির নেতাদের এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বৈঠকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।