লন্ডনে বিএনপি-জামায়াত বৈঠক, ঢাকায় বৃষ্টি
Published: 17th, April 2025 GMT
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের সঙ্গে পরিচয় লেখালেখির সূত্রে। বর্তমান দায়িত্বে আসার আগে নিয়মিত পত্রিকায় লিখতেন। পেশাগত কাজে সপ্তাহে অন্তত একবার তাঁর সঙ্গে ফোনালাপ হতো। একদিন বললেন, লেখা মেইল করার পরে আমরা যে ফোনালাপ করছি, এটা সংলাপ। আর লেখার টেবিলে একা-একা নিজের সঙ্গে যে কথা, সেটি হচ্ছে স্বগতোক্তি। সংলাপ হচ্ছে দ্বিপক্ষীয়। স্বগতোক্তি হচ্ছে নিজের সঙ্গে আলাপ। সংলাপ ফলপ্রসূ হওয়ার জন্য আলোচনায় অংশ নেওয়া উভয়ের আন্তরিকতা জরুরি। বিপরীতে স্বগতোক্তি সফলতা বা ব্যর্থতা দিয়ে নির্ণয়ের মতো বিষয় নয়। ব্যর্থ সংলাপের চেয়ে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের অন্যতম দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সাক্ষাৎ ও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে বিএনপি ও জামায়াত ক্ষমতার বাইরে থেকে লড়াই করেছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতার শেষ মেয়াদে বিএনপি জোরালো আন্দোলনে মাঠে থাকলেও জামায়াতকে সেভাবে মাঠে সোচ্চার দেখা যায়নি। কিন্তু ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর দলটি বেশ তোড়জোড় করে মাঠে নামে। এই সময়ে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দুই দলের মধ্যে নির্বাচনের সময়সূচি এবং আরও কিছু নীতিগত বিষয়ে বেশ মতভিন্নতার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে দুই দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানকে সাইবার যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এমন পরিস্থিতিতে লন্ডনে দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের দেখাসাক্ষাৎ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তৈরি করেছে– বিএনপি এবং জামায়াত আবার কাছাকাছি আসবে কিনা।
কয়েকটি বিষয় সামনে এলেই বিএনপি ও জামায়াতের লন্ডনের বৈঠক কী বার্তা দিল, ধারণা পাওয়া যেতে পারে। শুরু থেকেই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি করে আসছে বিএনপি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চায় তারা। বিএনপির এই দাবির পক্ষে রয়েছে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোট। অন্যদিকে জামায়াতের দাবি ছিল, সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর নেতারা একাধিকবার বলেছেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, তারপর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কিন্তু লন্ডন বৈঠকের পর আগামী রমজানের আগেই সংসদ নির্বাচন চাইছেন জামায়াত নেতারা। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অবশেষে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে, দেখা যাচ্ছে। এখন নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির অবস্থানের প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছে জামায়াত। ৫ আগস্টের পর সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে জামায়াতের অবস্থান ছিল বিএনপির বিপরীতমুখী। এখন জামায়াতে ইসলামীর আমির আগামী রমজানের আগেই সংসদ নির্বাচন হওয়া দরকার মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি বড় ধরনের পরিবর্তন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, জামায়াতের আমিরের বক্তব্যের পেছনে লন্ডনের প্রভাব আছে। লন্ডনে বৈঠকে বরফ তো গলেছেই; দেখা গেল ঢাকায় বৃষ্টিও শুরু হয়েছে।
ঢাকায় বৃষ্টির ধারা বিএনপি ও জামায়াতকে একই স্রোতে এনে দাঁড় করাবে কিনা– এমন প্রশ্ন যখন তৈরি হয়েছে তখন সম্পূরক প্রশ্ন হতে পারে, দুই দলের আবার ঐক্য হলে কারা লাভবান হবে? তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন শক্তিশালী, এটা বিএনপির শত্রুও মেনে নেবেন। এই বিএনপির আগামী নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার দরকার আছে কি? কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশে নির্বাচনের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে জামায়াতের প্রাপ্ত ভোটবাক্সের দিকে চোখ রাখলে জামায়াতকে ঠিক কত বড় দল হিসেবে গণ্য করা যায়? বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতৃত্ব চেষ্টা করছেন গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য, যাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। জামায়াতের নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য এবং মাঠের চিত্র কিন্তু উল্টো কথা বলছে। এটা আশা করি, বিএনপি এবং জামায়াত উভয় দলের নেতারাই স্বীকার করবেন।
স্মরণ রাখতে হবে– রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণের রায় বা মতামত নেওয়ার একমাত্র উপায় নির্বাচন। এখন পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচনে বিষয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য রূপরেখা হাজির করা। নির্বাচন প্রশ্নে সরকার নিরপেক্ষ থাকবে, সেটাই রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের প্রত্যাশা। সে ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে অর্থবহ সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করা। বিএনপি এবং জামায়াত বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় রাজনৈতিক শক্তি। এ দুটি দলের মধ্যে যে আলোচনা শুরুর ক্ষেত্রে তৈরি হতে দেখা গেল, তা রাজনীতিতে শুভকর হবে এমনটা আশা করা যায়। বিশেষত যখন নির্বাচনের সময় নিয়ে নানা অনৈক্য ও বিপরীতমুখী অবস্থানের খবরাখবর পাওয়া যাচ্ছে, তখন দুটি দল কাছাকাছি সময়ে নির্বাচনের দাবি জানানোর ঘটনা বর্তমান সরকারের জন্যও সহায়ক হবে। সরকারের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার প্রস্তুতি তাদের আছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোকেই মোটাদাগে কতগুলো বিষয়ে একমত হতে হবে। বিএনপি এবং জামায়াত ছাড়াও অন্য রাজনৈতিক দলের এমন অবস্থান নেওয়া ঠিক হবে না, যাতে পুরো উদ্যোগই ভেস্তে যায়।
দীর্ঘ আওয়ামী আমলে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ার পরে এখন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দেশবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সমঝোতা হলে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যেসব অস্থিরতা আছে, সেগুলোও ধীরে ধীরে কেটে যাবে আশা করা যায়। সব রাজনৈতিক দলেরই লক্ষ্য থাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার সাহস নিয়ে ঢাকার বৃষ্টিপাতে সদ্যসৃস্ট স্রোতে সাঁতার দিতে দেশের সব রাজনৈতিক দলের এগিয়ে আসা উচিত।
এহ্সান মাহমুদ: সহকারী সম্পাদক, সমকাল; কথাসাহিত্যিক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ দ ই দল র সরক র র ইসল ম র ব এনপ র অবস থ ন র আম র র জন য রহম ন হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
গার্দিওয়ালার ভয়, চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা হারালে বড় ট্রান্সফার হবে
পেপে গার্দিওলা যেমন শিরোপা জেতাতে পারদর্শী, ঠিক একইভাবে ট্রান্সফার মার্কেটের সবচেয়ে বড় খদ্দেরও তিনি। শীতকালীন দল বদলেই খরচ করেছেন ২০০ মিলিয়ন ইউরো। সিটি কোচের এই ধরনের বিশাল অংকের অর্থ খরচের ইচ্ছে আছে আসন্ন গ্রীষ্মকালীন দল বদলেও। তবে গার্দিওয়ালা সতর্ক করে বলেছেন যে, ম্যানসিটি চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা না পেলে তাদের শীর্ষস্থানীয় ট্রান্সফার টার্গেটগুলো মিস হয়ে যেতে পারে।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ (ইপিএলে) সবশেষ ৭ মৌসুমে ৬ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। তবে এই মৌসুমে তারা আছে টেবিলের পাঁচ নম্বরে। সামনের মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে ইপিএল থেকে ৫টি দল খেলার সুযোগ পাবে। তাই বর্তমান অবস্থানে থেকেই যদি সিটি মৌসুম শেষ করে, তাহলে তাদের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে অসুবিধা হবে না। তবে যদি একটুও পা ফসকায়, তাহলে ঘারে নিঃশ্বাস ফেলা অ্যাস্ট ভিলা ও চেলসির কাছে হারাতে হবে ৫ নম্বর স্থানটিও। সিটি শনিবার (১৯ এপ্রিল) এভারটনের বিপক্ষে ম্যাচে নামার আগে তাদের হাতে রয়েছে আর মাত্র ছয়টি খেলা।
চলতি মৌসুমে কিছুটা হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর গার্দিওয়ালা গ্রীষ্মে দল ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, যদি চ্যাম্পিয়নস লিগ ফুটবল নিশ্চিত না হয়, তাহলে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে খেলতে সেরা খেলোয়াড়দের আনতে অসুবিধা হতে পারে।
আরো পড়ুন:
ম্যানসিটির ফুটবলারদের ইচ্ছেশক্তির অভাব দেখছেন গুন্দোয়ান
ডার্বি ড্র করে ইউনাইটেড সমর্থকদের ‘ক্লাসলেস’ বললেন গার্দিওলা
গার্দিওয়ালা বলেন, “এটা নির্ভর করে আমরা কাদের নিতে চাই এবং তারা কী শুধুমাত্র আমাদেরকেই পছন্দ করে। যদি তাদের সামনে একাধিক বিকল্প থাকে, তাহলে আমি নিশ্চিত, তারা অবশ্যই চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলছে এমন ক্লাবগুলোকেই বেছে নেবে।”
ইএসপিএনের দাবি, কেভিন ডি ব্রুইনার বিকল্প হিসেবে, জার্মান ক্লাব বেয়ার লেভারকুসেনের ফরোয়ার্ড ফ্লোরিয়ান উইর্টজের দিকে নজর রেখেছে সিটি। তবে রিয়াল মাদ্রিদ এবং বায়ার্ন মিউনিখও তাকে দলে ভেড়াতে আগ্রহী। আর এই দুই দলই আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলবে।
গার্দিওয়ালার ধারনা, “আমি জানি না। হয়তো কিছু খেলোয়াড় আসবে, আবার কেউ কেউ, ‘চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে পারছি না’ বলে আসতে চাইবে না। আমি এখনও কোনও সম্ভাব্য ভবিষ্যতের খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলিনি, তাই আসলে কিছুই বলতে পারছি না।”
ডি ব্রুইনা নিশ্চিতভাবে সিটি ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। তবে দলে বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। গার্দিওয়ালা বলেন, “আমার এখন বড় স্কোয়াড। দুই একজন খেলোয়াড় গুডিসন পার্কে (এভারটনের মাঠ) সফরে যেতে পারবেন না। এটা খুব বাজে বিষয়, ভয়ানক।
তারা বেঞ্চেও থাকতে পারবে না, বাসায় বসে ভাববে ‘আমি এখানে কী করছি?’ তারা তাদের কাজটাই করতে পারছে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, দেখা যে কে কতটা নির্ভরযোগ্য। যদি কোনো খেলোয়াড় নির্ভরযোগ্য হয়, তাহলে আর কারো দরকার নেই।”
“যদি এমন হয়, যে পুরো মৌসুমে ২০ কিংবা ২৫ শতাংশ ম্যাচ খেলে, তাহলে হয় তার নিজের বিকল্প খোঁজা দরকার, নয়তো অন্য কাউকে আনতে হবে। এটা ভারসাম্য রক্ষা, যেটা আমাদের আলোচনা, পর্যবেক্ষণ করে ঠিক করতে হবে।”
ঢাকা/নাভিদ