সালভাদর দালি ঠিক কোন দিন থেকে আমার মনের গভীরে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন, সেটা মনে করতে পারি না। তবে এটুকু স্পষ্ট মনে আছে– প্রায় এক যুগ আগে, যখন প্রথম তাঁর আঁকা ‘দ্য পারসিসটেন্স অব মেমোরি’ ছবিটা দেখেছিলাম, তখনই চোখের সামনে এক অদ্ভুত জগৎ খুলে গিয়েছিল! ছবিটা ছিল অদ্ভুত! ক্যানভাসের ওপরে মোমের মতো গলে পড়ছিল তিনটি ঘড়ি; যা সময় বয়ে যাওয়ার প্রতীক, আর ছবির কোণে ছড়িয়ে থাকা পিঁপড়াগুলো যেন জীবনের ক্ষণস্থায়িত্বের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। এ ছাড়া কিছু একটা ছিল ছবিটায়; যা পুরোপুরি আবিষ্কার করতে না পারলেও উপলব্ধি করে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। বিশ্বখ্যাত ভিনসেন্ট ভ্যান গগের আঁকা ছবি আমার বহু আগে থেকেই পছন্দ ছিল। গগের তুলির আঁচড়, রং, প্রকৃতি আমাকে মুগ্ধ করত। কিন্তু দালির চিত্রকর্ম আমাকে চিরচেনা পরিধির বাইরে কল্পনা-বাস্তবতার মিশেলে অন্যরকম এক অস্বস্তি ও প্রশ্নের মুখোমুখি করে দিয়েছিল। যার ফলে, আমি টের পেয়েছিলাম একেক শিল্পীর একেক চিত্রকর্ম নিয়ে অনুভূতি ও উপলব্ধি একইসাথে কতটা গভীর এবং ভিন্ন হতে পারে। পরবর্তী সময়ে জানতে পারলাম, ‘দ্য পারসিসটেন্স অব মেমোরি’ ছবিটা শুধু দালির শিল্পীসত্তার নিদর্শনই নয়, বরং সুররিয়ালিস্ট আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি।
১৯৩১ সালে, যখন স্পেনে রাজনৈতিক অস্থিরতা তুঙ্গে, দারিদ্র্য ক্রমশ গ্রাস করছে দেশকে, তখনই জন্ম নেয় এই চিত্রকর্ম। সেই সময়, স্পেন একদিকে রাজতন্ত্র ও অন্যদিকে একনায়কতন্ত্রের চাপে ছিল দমবন্ধ অবস্থায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা অনেক শিল্পীর মনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। অজস্র শিল্পী তখন হয়ে উঠছিলেন বিদ্রোহী। সে সময়েই প্রচলিত শিল্পের সংজ্ঞা ও রীতিনীতি ছুড়ে ফেলে তারা জন্ম দেন এক নতুন আন্দোলনের– সুররিয়ালিজম। যাকে বলা যায়, “যুক্তির নিয়ন্ত্রণ ছাড়া, স্বাধীন চিন্তার প্রবাহ”– সহজ কথায়, বাস্তবতার সীমানা ছাড়িয়ে কল্পনার এক মুক্ত ভূমি। এই ভাবনারই চূড়ান্ত প্রকাশ সেই বিখ্যাত গলিত ঘড়ির চিত্রকর্ম, যা আজও সহস্র কোটি দর্শকের চেতনায় অনুরণন তোলে।
আমি জানতাম, দালির জীবদ্দশায় মাত্র দুটি মিউজিয়াম তৈরি হয়েছিল– একটি তাঁর নিজ দেশ স্পেনের ফিগুয়েরসে, আর অন্যটি ফ্লোরিডায়। তাই যখন শুনলাম ‘দ্য সালভাদর দালি মিউজিয়াম’ সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে, তখন থেকেই সেখানে যাওয়ার স্বপ্ন বুনতে শুরু করলাম।
ডিসেম্বর মাসে নিউইয়র্কের কনকনে শীত যখন চারদিক জমিয়ে তুলল, তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম– পরিবার নিয়ে ফ্লোরিডা চলে যাব! ‘সানশাইন সিটি’ নামে পরিচিত এই রাজ্য ডিসেম্বর মাসেও রোদেলা, আরামদায়ক উষ্ণতায় মোড়ানো। যেখানে নিউইয়র্কের রাস্তায় ভারী কোটের নিচেও শীত হাড়ে কাটে, সেখানে ফ্লোরিডার সৈকতে নরম বালির ওপর পা ছড়িয়ে, গা এলিয়ে দেওয়া যায়। সমুদ্রের ফেনিল ঢেউয়ের ছন্দে মন হারিয়ে যায়, বাতাসে ভেসে আসে সিগালের করুণ ডাক। আকাশে সাদা মেঘ সাঁতার কাটে। ফুরফুরে বাতাস আর চারপাশে সি-ফুডের মোহনীয় ঘ্রাণ, রেস্তোরাঁগুলোয় পর্যটকদের টানা আনাগোনা। সব মিলিয়ে স্বপ্নরাজ্যের চেয়ে কম কিছু না। কিন্তু এসবে নয়, ফ্লোরিডার পুরো ট্যুর জুড়েই আমার চোখ ছিল অন্য এক গন্তব্যে– দালি মিউজিয়ামে!
মিউজিয়ামটা সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের ডাউনটাউনে। শহরটা অনেক পুরোনো, ১৮৮৮ সালে জন সি.
পরের দিন সকাল ঠিক দশটায় মিউজিয়াম খোলামাত্রই সেখানে উপস্থিত হলাম। চারপাশের সাদা দেয়াল ঘেরা মিউজিয়ামের ভেতর থেকে উঁকি দিয়েছিল নীল রঙের গম্বুজ, সেখানে ছায়া পড়েছে আকাশের। মিউজিয়ামের বাইরে দাঁড়িয়ে অনুভব করলাম, মনে একইসাথে ভালো লাগা ও অস্থিরতা কাজ করছে। তবে ভেতরে ঢোকার লাইনে দাঁড়াতেই হকচকিয়ে যেতে হলো। সকাল দশটাতেই দর্শনার্থীর দীর্ঘ লাইন। এবং প্রায় সবার পরনে জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক। যেন সবাই কোনো আনন্দ উৎসবে এসেছে। লম্বা ফার কোট, সাথে রঙিন স্কার্ফ, উজ্জ্বল রঙের গাউন, বাহারি স্কার্ট-টপসহ বড় কোনো রেস্তোরাঁয় যাবার মতো পরিপাটি পোশাক পরে আছে, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ প্রায় সকলেই। নিজেদেরই বরং মনে হলো খুব সাদামাটা। কিন্তু পোশাকে মনোযোগ দেবার কোনো বাড়তি সময় আমার ছিল না। আমার চোখে শুধু ভাসছিল, দালির আত্মবিশ্বাসী শীতল দৃষ্টি, অদ্ভুত গোঁফের বাঁক, এবং বাস্তবতার সীমানা ভেঙে দেওয়া তাঁর চিত্রকর্মগুলো; যা আমি শুধু অনলাইনেই দেখেছি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই টের পাচ্ছিলাম সালভাদর দালি মিউজিয়াম শুধুই একটি সংগ্রহশালা নয়– এটি যেন বাস্তব আর কল্পনার মাঝের এক সেতু, যেখানে পদক্ষেপ ফেলামাত্রই মনে হয়, পরিচিত পৃথিবীটাকে পেছনে ফেলে প্রবেশ করেছি এক স্বপ্নময় জগতে। চারপাশের স্থাপত্য, শিল্পকর্ম, আলো-ছায়ার খেলা– সবকিছুই যেন দালির সৃষ্টির প্রতিচ্ছবি। যেন তিনি এখনও আছেন, আমাদের মনশ্চক্ষুর সামনে নতুন এক বাস্তবতা উন্মোচন করে চলেছেন।
জাদুঘরের বিশাল কাচের “এনিগমা” গম্বুজটা দেখে এরপর মনে হলো, এ যেন এক স্বপ্নের দরজা– যেখান দিয়ে ঢুকলে সময়ের ধারণাটাই বদলে যায়। সর্পিল সিঁড়িগুলো যেন আমাদের সরাসরি নিয়ে যায় অবচেতন আর বাস্তবতার মিলনবিন্দুতে। পুরো পরিবেশটাই এমন যে, মনে হবে আমি কোনো জাদুকরি দৃশ্যের ভেতর দিয়ে হাঁটছি– যেখানে বাস্তব বস্তু গলে পড়ছে, রংগুলো গড়িয়ে যাচ্ছে, আর যুক্তির বাঁধন ছিঁড়ে কল্পনার সীমানা বিস্তৃত হচ্ছে অনন্তের দিকে।
জাদুঘরের একটি দারুণ ইন্টারঅ্যাকটিভ অংশ হলো AI-জেনারেটেড “ড্রিম ট্যাপেস্ট্রি”, যেখানে দর্শনার্থীরা নিজেদের স্বপ্ন লিখলে তা ডিজিটাল চিত্রকলায় রূপ নেয়। আমি লিখলাম: “Having a profound conversation with Dali on the beach on a beautiful day.” কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আমার লেখা পরিণত হলো এক অপূর্ব দৃশ্যে। নীল আকাশের নিচে শান্ত সমুদ্র, বালির ওপর বসে থাকা এক নারী, আর সামনের ঢেউয়ে ভাসতে থাকা লাল লবস্টার। প্রথমে আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম, তারপর মনে এলো এই ছবিতে দালি কোথায়? আমি যদি সেই নারী হই, তাহলে দালি কোথায়?
তখনই মনে পড়ল দালির বিখ্যাত “Lobster Telephone”, যেখানে টেলিফোনের রিসিভারের জায়গায় বসানো ছিল একটি লাল লবস্টার। হয়তো আমার ছবিতেও সেই রূপকটাই ধরা পড়েছে। আমি আর লবস্টারটি যেন আলোচনায় নিমগ্ন, কিন্তু আমাদের কথোপকথন বুঝতে হলে যুক্তির জগৎ ছেড়ে কল্পনার ভেতর ডুব দিতে হবে।
এরপর আমরা দেখলাম পনেরো মিনিটের একটি তথ্যচিত্র–“Surrealism was saved and spread by Dali.” সেখানে বলা হয়, মানুষের অচেতন ও অযৌক্তিক মনই হলো সুররিয়ালিজমের প্রকৃত উৎস। বাস্তবের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে, যেখানে চিন্তা প্রবাহিত হয় অবাধে, সেখানেই জন্ম নেয় পরাবাস্তবতা।
এরপর শুরু হলো সেই মুহূর্তের মুখোমুখি হওয়া, যার জন্য আমি বহুদিন ধরে উন্মুখ হয়ে ছিলাম– দালির আঁকা চিত্রকর্মের সামনে দাঁড়ানোর মুহূর্ত। ছবিগুলো যখন একে একে দেখতে শুরু করলাম মনে হলো আমি এবং বাকি সবাই অন্য জগতে প্রবেশ করেছি। যেখানে দালির অন্তর্গত চিন্তার পথে আমরা হাঁটতে পারছি। গ্যালারিতে ছিল প্রায় ৯৬টি তেলচিত্র, ১০০-রও বেশি জলরং ও অঙ্কন, ১৩০০ গ্রাফিকস, আলোকচিত্র, ভাস্কর্য এবং বিভিন্ন শিল্পকর্ম।
আমরা সবাই হাঁটছিলাম, একের পর এক ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ছিলাম, তারপর হারিয়ে যাচ্ছিলাম রঙের আর ব্যাখ্যাতীত রূপকের ভেতর। বিশেষ করে কিছু মাস্টারপিস, যেগুলোর সামনে এসে আচ্ছন্ন হয়ে উঠছিলাম। আমি ছাড়াও আমার চারপাশের প্রায় সবার অনুভূতি ছিল একইরকম। ফিসফিস করে তারাও সাথে নিয়ে আসা সঙ্গী কিংবা কিউরেটরকে বলছিল দালির চিত্রকর্ম দেখে মুগ্ধ হবার কথা। একে একে দেখলাম, দ্য হ্যালুসিনোজেনিক টোরাডর, ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার, স্থির জীবনের দ্রুত গতি, নতুন মানবের জন্ম দেখা ছোট্ট শিশু ও সেই গলিত ঘড়ির ছবি। মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমরা ঘুরে বেড়ালাম এক গ্যালারি থেকে অন্য গ্যালারিতে। ছবিগুলো আমাদের শুধু মুগ্ধই করেনি, একইসাথে শিহরিত করছিল।
এক মধ্যবয়স্ক নারী আচমকা আমাকে বলে বসেছিল, ‘দালির ছবিগুলো কত আধুনিক অথচ তাঁকে সে সময় লোকে উন্মাদ বলত। কী ভয়াবহ ব্যাপার, ভাবা যায়? আরেকজন বৃদ্ধ আমার খুব কাছে এসে বলে গেল, ‘চিন্তা করতে পারো? দালি এমন এক শিল্পী, যে নিজের উদ্ভট সব চিন্তার ছবি এঁকে আমাদের দেখিয়েছেন এবং আমরা রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়ে, টাকাপয়সা খরচ করে সেই উদ্ভট চিন্তা দেখতে আসছি।’ এটুকু বলেই বৃদ্ধটি আবার নিজের ভাবনার জগতে উঁকি দিতে বুঁদ হয়ে গিয়েছিল। আর আমিও তখন বুঝতে পেরেছিলাম দালির শিল্পকর্ম দেখতে আসা সব মানুষের পোশাকে কেন এত প্রস্তুতি। কারণ তারা শুধু মিউজিয়াম দেখতেই আসেনি। একইসাথে এসেছে চিন্তা করতে এবং দালির উন্মাদনা, পরাবাস্তবতার বিচিত্র জগতে বিচরণ উদযাপন করতে। অন্যান্য বহু আর্ট মিউজিয়াম যেখানে শান্ত, মোলায়েম ও নীরব সময়ের স্বাদ এনে দেয়। দালি মিউজিয়ামের আবহ সেখানে সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে সবকিছু চলমান, আধুনিক, রঙিন ও প্রযুক্তির সাথে প্রাসঙ্গিকভাবে জড়িত। এখানে অন্যরকম এক উন্মাদনা আছে। যারা দেখতে এসেছে তাদের সবার মাঝেই। যেন দালি সুররিয়ালিজমের সেই সুর ছড়িয়েছেন সকলের মাঝে।
দালি মিউজিয়ামে তাঁর শিল্পকর্ম দেখার পাশাপাশি তাঁর দর্শন ও সৃষ্টিশীলতা অনুভবের জন্য ছিল বিষয়ভিত্তিক বাগান পরিদর্শন, ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মাধ্যমে দালির স্বপ্নময় দুনিয়ায় প্রবেশ। “সুররিয়াল নাইট” ইভেন্ট: সংগীত, আলো, আর দালির সৃষ্টিশীল থিমের মিশেলে তৈরি ব্যতিক্রমী রাত। “দালি অ্যালাইভ” ইমারসিভ এক্সপেরিয়েন্স: যেখানে দর্শনার্থীরা দালির শিল্পের ভেতর হারিয়ে যেতে পারবে এবং ছিল এক অদ্ভুত ‘বৃষ্টিস্নাত ট্যাক্সি’; যা মিউজিয়ামের পরামর্শক ইভোন মারুলিয়ে উপস্থাপন করেছেন নতুন করে। যার লক্ষ্য ছিল আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে দালির আসল ‘রেইনি ট্যাক্সি’-র প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। এমনকি রোলস-রয়েস সেদানকা গাড়িটিকে দালির স্মরণেই বলা হয়েছিল ‘রেইনি রোলস’।
সব মিলিয়ে দালির মিউজিয়ামকে মনে হলো যেন একসময়-সিন্দুক, যেখানে তাঁর পাগলামি, দার্শনিকতা এবং সৃজনশীলতা এখনও প্রতিধ্বনিত হয়ে যাচ্ছে। মিউজিয়াম ঘুরতে ঘুরতে বিকেল হয়ে গিয়েছিল। চলে যাবার মুহূর্তে লাগোয়া গিফট শপ থেকে কিছু পোস্টকার্ড, ম্যাগনেট ও স্টিকার কিনে নিলাম নিজের ও বন্ধুদের জন্য। বের হয়ে যাবার সময় মনে হলো, ভেতরে যাবার পর সত্যিই সময়জ্ঞান হারিয়েছিলাম। সেইসাথে এমন এক মানসিক অভিযাত্রা করে এলাম, যেখানে দালির বিচিত্র জগৎ মানুষে কল্পনার দরজা ও বাস্তবতা প্রশ্নবিদ্ধ করে। তারপর চিন্তার সীমানা ভেঙে মনে করিয়ে দেয়– শিল্পকলা এমন এক গভীর শক্তিশালী মাধ্যম, যা আমাদের সকল বিপন্নতার মাঝে এক অমলিন আলো হয়ে আকস্মিকভাবে প্রাণ এনে দিতে পারে, আমাদের অস্তিত্বের নতুন অর্থ উন্মোচন করতে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র চ ত রকর ম ব স তবত র শ ল পকর ম র স মন আম দ র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ড্রিমস্কেপ ও দালিয়ান বিভ্রম
সালভাদর দালি ঠিক কোন দিন থেকে আমার মনের গভীরে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন, সেটা মনে করতে পারি না। তবে এটুকু স্পষ্ট মনে আছে– প্রায় এক যুগ আগে, যখন প্রথম তাঁর আঁকা ‘দ্য পারসিসটেন্স অব মেমোরি’ ছবিটা দেখেছিলাম, তখনই চোখের সামনে এক অদ্ভুত জগৎ খুলে গিয়েছিল! ছবিটা ছিল অদ্ভুত! ক্যানভাসের ওপরে মোমের মতো গলে পড়ছিল তিনটি ঘড়ি; যা সময় বয়ে যাওয়ার প্রতীক, আর ছবির কোণে ছড়িয়ে থাকা পিঁপড়াগুলো যেন জীবনের ক্ষণস্থায়িত্বের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। এ ছাড়া কিছু একটা ছিল ছবিটায়; যা পুরোপুরি আবিষ্কার করতে না পারলেও উপলব্ধি করে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। বিশ্বখ্যাত ভিনসেন্ট ভ্যান গগের আঁকা ছবি আমার বহু আগে থেকেই পছন্দ ছিল। গগের তুলির আঁচড়, রং, প্রকৃতি আমাকে মুগ্ধ করত। কিন্তু দালির চিত্রকর্ম আমাকে চিরচেনা পরিধির বাইরে কল্পনা-বাস্তবতার মিশেলে অন্যরকম এক অস্বস্তি ও প্রশ্নের মুখোমুখি করে দিয়েছিল। যার ফলে, আমি টের পেয়েছিলাম একেক শিল্পীর একেক চিত্রকর্ম নিয়ে অনুভূতি ও উপলব্ধি একইসাথে কতটা গভীর এবং ভিন্ন হতে পারে। পরবর্তী সময়ে জানতে পারলাম, ‘দ্য পারসিসটেন্স অব মেমোরি’ ছবিটা শুধু দালির শিল্পীসত্তার নিদর্শনই নয়, বরং সুররিয়ালিস্ট আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি।
১৯৩১ সালে, যখন স্পেনে রাজনৈতিক অস্থিরতা তুঙ্গে, দারিদ্র্য ক্রমশ গ্রাস করছে দেশকে, তখনই জন্ম নেয় এই চিত্রকর্ম। সেই সময়, স্পেন একদিকে রাজতন্ত্র ও অন্যদিকে একনায়কতন্ত্রের চাপে ছিল দমবন্ধ অবস্থায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা অনেক শিল্পীর মনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। অজস্র শিল্পী তখন হয়ে উঠছিলেন বিদ্রোহী। সে সময়েই প্রচলিত শিল্পের সংজ্ঞা ও রীতিনীতি ছুড়ে ফেলে তারা জন্ম দেন এক নতুন আন্দোলনের– সুররিয়ালিজম। যাকে বলা যায়, “যুক্তির নিয়ন্ত্রণ ছাড়া, স্বাধীন চিন্তার প্রবাহ”– সহজ কথায়, বাস্তবতার সীমানা ছাড়িয়ে কল্পনার এক মুক্ত ভূমি। এই ভাবনারই চূড়ান্ত প্রকাশ সেই বিখ্যাত গলিত ঘড়ির চিত্রকর্ম, যা আজও সহস্র কোটি দর্শকের চেতনায় অনুরণন তোলে।
আমি জানতাম, দালির জীবদ্দশায় মাত্র দুটি মিউজিয়াম তৈরি হয়েছিল– একটি তাঁর নিজ দেশ স্পেনের ফিগুয়েরসে, আর অন্যটি ফ্লোরিডায়। তাই যখন শুনলাম ‘দ্য সালভাদর দালি মিউজিয়াম’ সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে, তখন থেকেই সেখানে যাওয়ার স্বপ্ন বুনতে শুরু করলাম।
ডিসেম্বর মাসে নিউইয়র্কের কনকনে শীত যখন চারদিক জমিয়ে তুলল, তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম– পরিবার নিয়ে ফ্লোরিডা চলে যাব! ‘সানশাইন সিটি’ নামে পরিচিত এই রাজ্য ডিসেম্বর মাসেও রোদেলা, আরামদায়ক উষ্ণতায় মোড়ানো। যেখানে নিউইয়র্কের রাস্তায় ভারী কোটের নিচেও শীত হাড়ে কাটে, সেখানে ফ্লোরিডার সৈকতে নরম বালির ওপর পা ছড়িয়ে, গা এলিয়ে দেওয়া যায়। সমুদ্রের ফেনিল ঢেউয়ের ছন্দে মন হারিয়ে যায়, বাতাসে ভেসে আসে সিগালের করুণ ডাক। আকাশে সাদা মেঘ সাঁতার কাটে। ফুরফুরে বাতাস আর চারপাশে সি-ফুডের মোহনীয় ঘ্রাণ, রেস্তোরাঁগুলোয় পর্যটকদের টানা আনাগোনা। সব মিলিয়ে স্বপ্নরাজ্যের চেয়ে কম কিছু না। কিন্তু এসবে নয়, ফ্লোরিডার পুরো ট্যুর জুড়েই আমার চোখ ছিল অন্য এক গন্তব্যে– দালি মিউজিয়ামে!
মিউজিয়ামটা সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের ডাউনটাউনে। শহরটা অনেক পুরোনো, ১৮৮৮ সালে জন সি. উইলিয়ামস এর গোড়াপত্তন করেছিলেন। এটি ফ্লোরিডার প্রথম পাঁচটি ঘনবসতিপূর্ণ শহরের মধ্যে একটি। তবে আমার কাছে এই শহরটা বিশেষ হয়ে উঠেছিল আমার প্রিয় শিল্পীর চিত্রকর্ম থাকার কারণেই। যাবার আগের দিন টিকিটের দাম, মিউজিয়ামের তথ্য ও অন্যান্য আয়োজন নিয়ে অনলাইনে চোখ বুলিয়ে নিলাম। মিউজিয়ামের ক্যাফের নাম ‘গালা ক্যাফে’ জেনে একটু চমৎকৃতই হলাম। দালির শিল্পকর্মই শুধু নয়, তাঁর সবচেয়ে প্রিয়জন, তাঁর জীবনসঙ্গী গালার স্মরণে ক্যাফের নামকরণ করা হয়েছে বলে।
পরের দিন সকাল ঠিক দশটায় মিউজিয়াম খোলামাত্রই সেখানে উপস্থিত হলাম। চারপাশের সাদা দেয়াল ঘেরা মিউজিয়ামের ভেতর থেকে উঁকি দিয়েছিল নীল রঙের গম্বুজ, সেখানে ছায়া পড়েছে আকাশের। মিউজিয়ামের বাইরে দাঁড়িয়ে অনুভব করলাম, মনে একইসাথে ভালো লাগা ও অস্থিরতা কাজ করছে। তবে ভেতরে ঢোকার লাইনে দাঁড়াতেই হকচকিয়ে যেতে হলো। সকাল দশটাতেই দর্শনার্থীর দীর্ঘ লাইন। এবং প্রায় সবার পরনে জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক। যেন সবাই কোনো আনন্দ উৎসবে এসেছে। লম্বা ফার কোট, সাথে রঙিন স্কার্ফ, উজ্জ্বল রঙের গাউন, বাহারি স্কার্ট-টপসহ বড় কোনো রেস্তোরাঁয় যাবার মতো পরিপাটি পোশাক পরে আছে, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ প্রায় সকলেই। নিজেদেরই বরং মনে হলো খুব সাদামাটা। কিন্তু পোশাকে মনোযোগ দেবার কোনো বাড়তি সময় আমার ছিল না। আমার চোখে শুধু ভাসছিল, দালির আত্মবিশ্বাসী শীতল দৃষ্টি, অদ্ভুত গোঁফের বাঁক, এবং বাস্তবতার সীমানা ভেঙে দেওয়া তাঁর চিত্রকর্মগুলো; যা আমি শুধু অনলাইনেই দেখেছি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই টের পাচ্ছিলাম সালভাদর দালি মিউজিয়াম শুধুই একটি সংগ্রহশালা নয়– এটি যেন বাস্তব আর কল্পনার মাঝের এক সেতু, যেখানে পদক্ষেপ ফেলামাত্রই মনে হয়, পরিচিত পৃথিবীটাকে পেছনে ফেলে প্রবেশ করেছি এক স্বপ্নময় জগতে। চারপাশের স্থাপত্য, শিল্পকর্ম, আলো-ছায়ার খেলা– সবকিছুই যেন দালির সৃষ্টির প্রতিচ্ছবি। যেন তিনি এখনও আছেন, আমাদের মনশ্চক্ষুর সামনে নতুন এক বাস্তবতা উন্মোচন করে চলেছেন।
জাদুঘরের বিশাল কাচের “এনিগমা” গম্বুজটা দেখে এরপর মনে হলো, এ যেন এক স্বপ্নের দরজা– যেখান দিয়ে ঢুকলে সময়ের ধারণাটাই বদলে যায়। সর্পিল সিঁড়িগুলো যেন আমাদের সরাসরি নিয়ে যায় অবচেতন আর বাস্তবতার মিলনবিন্দুতে। পুরো পরিবেশটাই এমন যে, মনে হবে আমি কোনো জাদুকরি দৃশ্যের ভেতর দিয়ে হাঁটছি– যেখানে বাস্তব বস্তু গলে পড়ছে, রংগুলো গড়িয়ে যাচ্ছে, আর যুক্তির বাঁধন ছিঁড়ে কল্পনার সীমানা বিস্তৃত হচ্ছে অনন্তের দিকে।
জাদুঘরের একটি দারুণ ইন্টারঅ্যাকটিভ অংশ হলো AI-জেনারেটেড “ড্রিম ট্যাপেস্ট্রি”, যেখানে দর্শনার্থীরা নিজেদের স্বপ্ন লিখলে তা ডিজিটাল চিত্রকলায় রূপ নেয়। আমি লিখলাম: “Having a profound conversation with Dali on the beach on a beautiful day.” কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আমার লেখা পরিণত হলো এক অপূর্ব দৃশ্যে। নীল আকাশের নিচে শান্ত সমুদ্র, বালির ওপর বসে থাকা এক নারী, আর সামনের ঢেউয়ে ভাসতে থাকা লাল লবস্টার। প্রথমে আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম, তারপর মনে এলো এই ছবিতে দালি কোথায়? আমি যদি সেই নারী হই, তাহলে দালি কোথায়?
তখনই মনে পড়ল দালির বিখ্যাত “Lobster Telephone”, যেখানে টেলিফোনের রিসিভারের জায়গায় বসানো ছিল একটি লাল লবস্টার। হয়তো আমার ছবিতেও সেই রূপকটাই ধরা পড়েছে। আমি আর লবস্টারটি যেন আলোচনায় নিমগ্ন, কিন্তু আমাদের কথোপকথন বুঝতে হলে যুক্তির জগৎ ছেড়ে কল্পনার ভেতর ডুব দিতে হবে।
এরপর আমরা দেখলাম পনেরো মিনিটের একটি তথ্যচিত্র–“Surrealism was saved and spread by Dali.” সেখানে বলা হয়, মানুষের অচেতন ও অযৌক্তিক মনই হলো সুররিয়ালিজমের প্রকৃত উৎস। বাস্তবের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে, যেখানে চিন্তা প্রবাহিত হয় অবাধে, সেখানেই জন্ম নেয় পরাবাস্তবতা।
এরপর শুরু হলো সেই মুহূর্তের মুখোমুখি হওয়া, যার জন্য আমি বহুদিন ধরে উন্মুখ হয়ে ছিলাম– দালির আঁকা চিত্রকর্মের সামনে দাঁড়ানোর মুহূর্ত। ছবিগুলো যখন একে একে দেখতে শুরু করলাম মনে হলো আমি এবং বাকি সবাই অন্য জগতে প্রবেশ করেছি। যেখানে দালির অন্তর্গত চিন্তার পথে আমরা হাঁটতে পারছি। গ্যালারিতে ছিল প্রায় ৯৬টি তেলচিত্র, ১০০-রও বেশি জলরং ও অঙ্কন, ১৩০০ গ্রাফিকস, আলোকচিত্র, ভাস্কর্য এবং বিভিন্ন শিল্পকর্ম।
আমরা সবাই হাঁটছিলাম, একের পর এক ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ছিলাম, তারপর হারিয়ে যাচ্ছিলাম রঙের আর ব্যাখ্যাতীত রূপকের ভেতর। বিশেষ করে কিছু মাস্টারপিস, যেগুলোর সামনে এসে আচ্ছন্ন হয়ে উঠছিলাম। আমি ছাড়াও আমার চারপাশের প্রায় সবার অনুভূতি ছিল একইরকম। ফিসফিস করে তারাও সাথে নিয়ে আসা সঙ্গী কিংবা কিউরেটরকে বলছিল দালির চিত্রকর্ম দেখে মুগ্ধ হবার কথা। একে একে দেখলাম, দ্য হ্যালুসিনোজেনিক টোরাডর, ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার, স্থির জীবনের দ্রুত গতি, নতুন মানবের জন্ম দেখা ছোট্ট শিশু ও সেই গলিত ঘড়ির ছবি। মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমরা ঘুরে বেড়ালাম এক গ্যালারি থেকে অন্য গ্যালারিতে। ছবিগুলো আমাদের শুধু মুগ্ধই করেনি, একইসাথে শিহরিত করছিল।
এক মধ্যবয়স্ক নারী আচমকা আমাকে বলে বসেছিল, ‘দালির ছবিগুলো কত আধুনিক অথচ তাঁকে সে সময় লোকে উন্মাদ বলত। কী ভয়াবহ ব্যাপার, ভাবা যায়? আরেকজন বৃদ্ধ আমার খুব কাছে এসে বলে গেল, ‘চিন্তা করতে পারো? দালি এমন এক শিল্পী, যে নিজের উদ্ভট সব চিন্তার ছবি এঁকে আমাদের দেখিয়েছেন এবং আমরা রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়ে, টাকাপয়সা খরচ করে সেই উদ্ভট চিন্তা দেখতে আসছি।’ এটুকু বলেই বৃদ্ধটি আবার নিজের ভাবনার জগতে উঁকি দিতে বুঁদ হয়ে গিয়েছিল। আর আমিও তখন বুঝতে পেরেছিলাম দালির শিল্পকর্ম দেখতে আসা সব মানুষের পোশাকে কেন এত প্রস্তুতি। কারণ তারা শুধু মিউজিয়াম দেখতেই আসেনি। একইসাথে এসেছে চিন্তা করতে এবং দালির উন্মাদনা, পরাবাস্তবতার বিচিত্র জগতে বিচরণ উদযাপন করতে। অন্যান্য বহু আর্ট মিউজিয়াম যেখানে শান্ত, মোলায়েম ও নীরব সময়ের স্বাদ এনে দেয়। দালি মিউজিয়ামের আবহ সেখানে সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে সবকিছু চলমান, আধুনিক, রঙিন ও প্রযুক্তির সাথে প্রাসঙ্গিকভাবে জড়িত। এখানে অন্যরকম এক উন্মাদনা আছে। যারা দেখতে এসেছে তাদের সবার মাঝেই। যেন দালি সুররিয়ালিজমের সেই সুর ছড়িয়েছেন সকলের মাঝে।
দালি মিউজিয়ামে তাঁর শিল্পকর্ম দেখার পাশাপাশি তাঁর দর্শন ও সৃষ্টিশীলতা অনুভবের জন্য ছিল বিষয়ভিত্তিক বাগান পরিদর্শন, ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মাধ্যমে দালির স্বপ্নময় দুনিয়ায় প্রবেশ। “সুররিয়াল নাইট” ইভেন্ট: সংগীত, আলো, আর দালির সৃষ্টিশীল থিমের মিশেলে তৈরি ব্যতিক্রমী রাত। “দালি অ্যালাইভ” ইমারসিভ এক্সপেরিয়েন্স: যেখানে দর্শনার্থীরা দালির শিল্পের ভেতর হারিয়ে যেতে পারবে এবং ছিল এক অদ্ভুত ‘বৃষ্টিস্নাত ট্যাক্সি’; যা মিউজিয়ামের পরামর্শক ইভোন মারুলিয়ে উপস্থাপন করেছেন নতুন করে। যার লক্ষ্য ছিল আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে দালির আসল ‘রেইনি ট্যাক্সি’-র প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। এমনকি রোলস-রয়েস সেদানকা গাড়িটিকে দালির স্মরণেই বলা হয়েছিল ‘রেইনি রোলস’।
সব মিলিয়ে দালির মিউজিয়ামকে মনে হলো যেন একসময়-সিন্দুক, যেখানে তাঁর পাগলামি, দার্শনিকতা এবং সৃজনশীলতা এখনও প্রতিধ্বনিত হয়ে যাচ্ছে। মিউজিয়াম ঘুরতে ঘুরতে বিকেল হয়ে গিয়েছিল। চলে যাবার মুহূর্তে লাগোয়া গিফট শপ থেকে কিছু পোস্টকার্ড, ম্যাগনেট ও স্টিকার কিনে নিলাম নিজের ও বন্ধুদের জন্য। বের হয়ে যাবার সময় মনে হলো, ভেতরে যাবার পর সত্যিই সময়জ্ঞান হারিয়েছিলাম। সেইসাথে এমন এক মানসিক অভিযাত্রা করে এলাম, যেখানে দালির বিচিত্র জগৎ মানুষে কল্পনার দরজা ও বাস্তবতা প্রশ্নবিদ্ধ করে। তারপর চিন্তার সীমানা ভেঙে মনে করিয়ে দেয়– শিল্পকলা এমন এক গভীর শক্তিশালী মাধ্যম, যা আমাদের সকল বিপন্নতার মাঝে এক অমলিন আলো হয়ে আকস্মিকভাবে প্রাণ এনে দিতে পারে, আমাদের অস্তিত্বের নতুন অর্থ উন্মোচন করতে।