গিরিশৃঙ্গে জাফর সাদেকের হাতে উড়ল ফিলিস্তিনের পতাকা
Published: 17th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা ও স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিনের সমর্থনে লবুচে পূর্ব গিরিচূড়ায় বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি দেশিটির পতাকা উড়িয়েছেন বাংলাদেশের পর্বতারোহী জাফর সাদেক।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে নেপালের সলোখুম্ভু অঞ্চলে অবস্থিত লবুচে ইস্ট পর্বতশৃঙ্গে পা রাখেন জাফর সাদেক।
লবুচে ইস্ট পর্বত অভিযান সম্পর্কে পর্বতারোহী জাফর সাদেক রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “গত ১ এপ্রিল নেপালের লুকলা থেকে ট্রেকিং শুরু করে ১১ এপ্রিল ডিংবোচে পৌছে সেখান থেকে পরদিন লবুচে হাইক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওয়া দেই।”
আরো পড়ুন:
অবিলম্বে ‘গাজাযুদ্ধ’ বন্ধের দাবিতে ইসরায়েলিদের গণস্বাক্ষর
গাজায় ২৪ ঘণ্টায় নিহত আরো ৩৯ ফিলিস্তিনি
“১৩ তারিখ রাত ১টা ৩০ মিনিটে লবুচে হাইক্যাম্প থেকে সামিটের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি। পরদিন সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে লবুচে ইস্ট পর্বত চূড়ায় বাংলাদেশের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যার প্রতিবাদে তাদের প্রতি সহমর্মিতার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনের পতাকা তুলে ধরেছি।”
জাফর সাদেক বলেন, “অভিযান চলাকালীন সলোকুম্ভু অঞ্চলের অভিযাত্রীদের সঙ্গে প্যালেস্টাইনের ওপর চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গঠনের চেষ্টা করেছি। আমাদের সকলের প্রত্যাশা ফিলিস্তিনি জনতার ওপর ইসরাইল ও তাদের দোসরদের চলমান গণহত্যা বন্ধ হোক।”
পর্বতারোহনে জাফরের পথচলা শুরু ২০১২ সালে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কয়েকটি পাহাড়ে চড়ার পর শুরু করেন বড় মিশন। গত আট বছরে হিমালয় ও ককেশাস পর্বতমালার বেশকিছু শিখরে অভিযান করেছেন তিনি।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে ইউরোপ মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এলব্রুস এবং আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারোর চূড়ায় ওঠেন জাফর সাদেক। ২০২২ সালে হিমালয়ের মেরা পর্বত এবং ২০২৪ সালে ফ্রেন্ডশিপ পর্বতচূড়ায় পা রাখেন তিনি।
রায়হান/ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল জ ফর স দ ক
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন মামলায় গতি পুরোনোতে স্থবির
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও তদন্ত কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। ফলে এসব মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দেড় শতাধিক আসামি বিনা বিচারে কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
অন্যদিকে জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় সংঘটিত অপরাধের মামলার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগ এখন পর্যন্ত ৩৪১টি অভিযোগ পেয়েছে। তদন্ত সংস্থা জড়িত তিন শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪০ মামলার তদন্ত করছে।
অবশ্য জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের পাশাপাশি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের বিচারও চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না সমকালকে বলেন, কারাগারে বন্দি লোকগুলো তো ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রাখেন। অযথা একটা লোককে দীর্ঘদিন বিনা বিচারে কারাগারে কেন আটকে রাখা হবে। তাদের ‘অ্যাকুইটাল’ (বিচারে খালাস) দিয়ে দিতে পারেন ট্রাইব্যুনাল।
জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত না জেনে কিছু বলা যাবে না। তবে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতাকারীদের বিচার করতে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত বছর ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ বছরে ৫৫ মামলার রায়ে আসামি ছিলেন ১৬৯ জন। যার মধ্যে রায় হওয়ার আগেই মারা যান ১৮ জন; তাদের মধ্যে কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ১৬ জন, পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন দু’জন। আসামির মধ্যে দু’জন খালাস পেয়েছেন। যার মধ্যে একজন শিশু বিবেচনায়। বাকি সাজাপ্রাপ্ত আসামি ১৪৯ জন।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছেন ১০৬ জন। আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন ২৫ জন, যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছেন ১২ জন এবং সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন ছয়জন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ৯টি মামলা। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে শীর্ষ পর্যায়ের ৭ আসামির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে কার্যকর হয়েছে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড।
গত বছর রাজনৈতিক পালাবদলের পর গত ১৪ অক্টোবর পুনর্গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। যেখানে পুরোদমে শুরু হয়েছে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম। এরই মধ্যে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ দেড় শতাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে নতুন মামলার ভারে স্থবির হয়ে যায় একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের পুরোনো মামলা। প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের আগে ১১৩ জন সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা বিচারাধীন ও তদন্ত সংস্থায় ২৫ মামলা তদন্তাধীন ছিল। অনুসন্ধানের অপেক্ষায় ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের চার হাজার অভিযোগ। গত বছর ৩০ মার্চ পর্যন্ত ৬০ সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিভিন্ন কারাগারে আটক ছিলেন।
এদের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের বিচারে ৪৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ছয়জনের বিচার ছিল চলমান। যাদের অধিকাংশ জামায়াত ইসলামীর নেতা। গণঅভ্যুত্থানের পর পাঁচজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে একজনের বিচার চলমান।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৫৩টি আপিল চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। বেশ কয়েক বছর ধরে এসব আপিলের শুনানি হচ্ছে না। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া এটিএম আজহারুল ইসলামের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন আগামী ৮ মে সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় আছে।