লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত কার্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে তা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড় চত্বরে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

‘লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনটির আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক জয়নুল আবেদীন, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম মমিনুল হক, লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য ও লালমনিরহাট পৌর বিএনপির সভাপতি মো.

আফজাল হোসেন, লালমনিরহাট পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সালাম প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য মো. ময়েজউদ্দিন সরকার, সদস্য সাহেদুল হক সরকারসহ অন্যরা।

সমাবেশে বক্তারা আদালত কার্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির করে নিয়োগ বাতিলের জন্য দাবি জানান। সমাবেশে অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সবাই ভেবেছিলাম, আর কোনো নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেন হবে না। কিন্তু আমরা এর বিপরীত চিত্র পেলাম লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগের বেলায়। সে জন্য আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আপনাদের বিপুল-সংখ্যক উপস্থিতি আমাদের সাহস জুগিয়েছে। আমরা এ ঘটনার গ্রহণযোগ্য প্রতিকার না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সামাজিক কর্মসূচি পালন করতে থাকব ইনশা আল্লাহ।’

বিক্ষোভ সমাবেশের পর একটি প্রতিবাদ মিছিল শহরের মিশন মোড় চত্বর থেকে বিজিবি ক্যানটিন মোড়, লালমনিরহাট শিশুপার্ক এলাকা, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে দিয়ে বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে।

এর আগে ১৩ এপ্রিল দুপুরে শহরের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় একই সংগঠনের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত কার্যালয়ে তিনটি পদে মোট ২৪ জন কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে তা বাতিলের দাবি জানানো হয়।

আরও পড়ুনলালমনিরহাটে আদালতে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন১৩ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বজনপ র ত

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএসসিসিতে পছন্দের লোকদের দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন তাপস

নিয়মনীতি না মেনে নিজের লোকদের ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) চারটি বিপণিবিতানের ২০৬টি দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এসব বরাদ্দের ক্ষেত্রে লিখিত আদেশ, প্রশাসনিক অনুমোদন কিংবা স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি; বরং ‘ওমুককে দোকানটা দিয়ে দাও’, মেয়রের মৌখিক নির্দেশে দোকানগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এভাবে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মার্কেট উপআইন ২০১৬–এর পরিপন্থী বলে জানিয়েছেন সংস্থার বর্তমান কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, করপোরেশনের মালিকানাধীন প্রতিটি বিপণিবিতানে নির্দিষ্টসংখ্যক (৩০ শতাংশ) দোকান মেয়র নিজে বরাদ্দ দিতে পারেন। এটি ‘মেয়র কোটা’ নামে পরিচিত। তবে তৎকালীন মেয়র তাপস এ কোটায় যেসব দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন, সেই বরাদ্দের নথিতে তাঁর সই বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুমোদন নেই। যদিও এমন ‘নথিবিহীন’ বরাদ্দের ভিত্তিতে অনেকেই দোকান পেয়েছেন। কেউ কেউ দোকান বিক্রিও করে দিয়েছেন।

দোকান বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার, দলবাজি ও স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য দোকান বরাদ্দ দেওয়া নেতিবাচক দৃষ্টান্ত। এভাবে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে হবে। ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

যে চারটি বিপণিবিতানে দোকান বরাদ্দে এমন কাণ্ড হয়েছে, সেগুলো হলো সিদ্দিকবাজার মার্কেট, আজিমপুর আধুনিক নগর মার্কেট, ঢাকেশ্বরী রোড সাইড মার্কেট ও মেরাদিয়া নগর কাঁচাবাজার মার্কেট। এর মধ্যে সিদ্দিকবাজার মার্কেটে ৭৩টি, আজিমপুর আধুনিক নগর মার্কেটে ৩১টি, ঢাকেশ্বরী রোড সাইড মার্কেটে ৪৬টি ও মেরাদিয়া নগর কাঁচাবাজার মার্কেটে ৫৬টি দোকান মেয়র কোটায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নগর–পরিকল্পনাবিদ ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা বলছেন, এ ধরনের মৌখিক নির্দেশে দোকান বরাদ্দ দুর্নীতিরই একটি রূপ। এটি শুধু নীতিমালার লঙ্ঘন নয়, বরং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রতি সরাসরি আঘাত।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দোকান বরাদ্দে অনিয়মের বিষয়টি বর্তমান প্রশাসনের নজরে আসে।

বরাদ্দ পেয়েছেন দলীয় ব্যক্তি, ঘনিষ্ঠজনেরা

যাঁদের নামে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি অথবা সাবেক মেয়র তাপসের ঘনিষ্ঠজন। করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তার নামেও দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দোকান পেতে লিখিত আবেদন করার নিয়ম থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা করা হয়নি। ‘মেয়রের নির্দেশ’ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দোকান বরাদ্দের কার্যক্রম শুরু করেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সিদ্দিকবাজার মার্কেট, আজিমপুর আধুনিক নগর মার্কেট ও ঢাকেশ্বরী রোড সাইড মার্কেট—এই তিন বিপণিবিতানের ১৫০টি দোকান বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের কেউ আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতা, কেউ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা অথবা সংগঠনগুলোর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাপসের ব্যক্তিগত কাজে যুক্ত অন্তত সাতজন ব্যক্তিকেও দোকান দেওয়া হয়েছে। এ তালিকায় আছেন একজন অভিনেত্রীও। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সাবেক মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছেলে এবং গোপালগঞ্জ এলাকার সংরক্ষিত আসনের এক সংসদ সদস্যকে।

এর মধ্যে সিদ্দিকবাজার মার্কেটে ৭৩টি, আজিমপুর আধুনিক নগর মার্কেটে ৩১টি, ঢাকেশ্বরী রোড সাইড মার্কেটে ৪৬টি ও মেরাদিয়া নগর কাঁচাবাজার মার্কেটে ৫৬টি দোকান মেয়র কোটায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আর মেরাদিয়া নগর কাঁচাবাজার মার্কেটের ৫৬টি দোকানের সব কটিই দেওয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কাউন্সিলরের স্বজন ও করপোরেশনের প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের। একজন ব্যক্তিকে একটি দোকান বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কাউকে কাউকে একাধিক দোকানও দেওয়া হয়েছে।

দোকান বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মের তোয়াক্কা করা হয়নি বলে উল্লেখ করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় দোকান বরাদ্দ হওয়ার কথা, তা অনুসরণ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কী করা যায়, তা তাঁরা ভেবে দেখছেন।

বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করতে চাইলে সহযোগিতা করা হবে জানিয়ে জিল্লুর রহমান আরও বলেন, দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে করপোরেশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতি’

ঢাকা দক্ষিণ সিটির রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করপোরেশনের যেকোনো বিপণিবিতানের ৩০ শতাংশ দোকান মেয়রের জন্য বরাদ্দ থাকে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ দোকান মেয়র তাঁর পছন্দের ব্যক্তিদের বরাদ্দ দিতে পারেন। এর বাইরে সনদপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাঁর পরিবারের কোনো সদস্যের জন্য কিংবা জাতীয় পর্যায়ে অবদান রেখেছেন, এমন ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য ৫ শতাংশ; করপোরেশন বা স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের জন্য ৩ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ২ শতাংশ দোকান মেয়র বরাদ্দ দিতে পারেন। কিন্তু সাবেক মেয়র তাপস এ নিয়ম মানেননি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দোকান বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার, দলবাজি ও স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য দোকান বরাদ্দ দেওয়া নেতিবাচক দৃষ্টান্ত। এভাবে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে হবে। ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডিএসসিসিতে পছন্দের লোকদের দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন তাপস